কার চালক থেকে কোটিপতি!

প্রাইভেটকার চালক মো. রুবেল (৩৩)। বাড়তি কাজ হিসেবে ডাক্তারের চেম্বারে রোগীদের নাম লিখতেন। সামান্য বেতনের চাকরি। এতে কোনো রকমে সংসার চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই আয়েশী জীবনযাপন শুরু করেন রুবেল। পাঁচতলা ফাউন্ডেশন নিয়ে দুই ইউনিটের বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। একতলার কাজ প্রায় শেষ। রুমগুলোও আয়েশী। ওই বাড়িতেই তার বসবাস। তিনি এখন কোটিপতি। কোথায় তার টাকার উৎস। শহর ও শহরতলীর এমন কোটি টাকার বাড়ি দেখলেই এ নিয়ে এলাকাবাসীদের কৌতূহলের শেষ নেই। এটা কোনো গল্প নয়। জেলা সদরের ভোলা-লক্ষ্মীপুর সড়কের পাশে বাপ্তা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের হাজিরহাটবাজার। ওই বাজারের পেছনেই মোস্তাফিজ ট্রলির বাড়ি। রুবেল মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে। শহরে এক যুগের অতিচেনা শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আবদুল কাদেরের প্রাইভেটকার চালানোর পাশাপাশি বিকালে চেম্বারে রোগীদের নাম লেখার দায়িত্ব পালন করতেন রুবেল। গত বুধবার এই রুবেল, স্ত্রী ফারজানা আক্তার এপি ও দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে কক্সবাজার ভ্রমণ শেষে ভোলায় ফিরতে পুলিশ তাদের আটক করে। রুবেল ও তার স্ত্রীর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৬ হাজার ১১৮ পিস অতি উচ্চ মানের ‘আর’ চিহ্ন সংবলিত ইয়াবা। এর পরেই তোলপাড় শুরু হয়। গত ৩ দিন ধরেই জেলা ব্যাপী আলোচনায় রুবেল পরিবার। পুলিশ জানায় জব্দকৃত ইয়াবার বাজার মূল্য প্রায় ৪০ লাখ টাকা। এর একদিন পরেই চানাচুর ভর্তি একটি প্লাস্টিক কৌটা নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ভোলায় আসা আরও এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৩৪১টি ইয়াবা উদ্ধার করেন ডিবি। শুক্রবার ভোরে ইলিশা লঞ্চঘাট থেকে ৫ কেজি গাঁজাসহ আটক হয় সোহেল নামের এক যুবক। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফ উদ্দিন শাহীন জানান,
ভোলায় ব্যাপক হারে ইয়াবাসহ মাদক চালান আসছে। এমন তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। অপর এক সূত্র জানায় রুবেল যে দিন ধরা পড়ে ওই দিন আরও ৩টি চালান ভোলায় প্রবেশ করে। দুটি চালানবহনকারী চক্র দ্রুত গা ঢাকা দেয়। অভিযোগ রয়েছে রুবেল হোল সেলারদের একজন। তার শ্বশুরবাড়ি কক্সবাজার হওয়ার সুবাদে নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করেন রুবেল ও তার স্ত্রী। তবে রুবেলের অর্থের জোগানদাতারা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। অন্যদিকে ডা. কাদের ২০ দিন আগে ভোলা থেকে বদলি হয়ে সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে যোগদান করেন। ডা. কাদের যুগান্তরকে জানান, রুবেলের কারণেই তিনি ভোলা ছেড়ে আসতে বাধ্য হন। রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়া রুবেল গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে অনেক তথ্যও প্রকাশ করেছেন। তবে তদন্তের কারণে পুলিশ তা প্রকাশ করতে চাইছেন না। রুবেলের স্ত্রী অবশ্য যুগান্তরকে জানিয়ে ছিলেন, কেউ একজন ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই ইয়াবা বহন করতে দিয়ে ছিলেন। সাত বছরের ছেলেকে শহরের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে কেজি শ্রেণীতে ভর্তি করার সুবাধে অনেক ভিআইপি ভাবীদের সঙ্গে তার সখ্য রয়েছে। এ জন্য ইয়াবা বিষয়টি না লেখার জন্যও অনুরোধ জানান। রুবেলের পিতা মোস্তাফিজুর রহমান এলাকায় ট্রলি মোস্তাফিজ নামে পরিচিত। ঠিকাদারদের নির্মাণকাজের বালু, সিমেন্ট ট্রলিতে বহন করাই তার পেশা। তিনি ভালো লোক বলেও জানান ঠিকাদার ধ্রুব হওলাদার।

No comments

Powered by Blogger.