নাঈমের জবানিতে রেইনট্রি ধর্ষণকাণ্ড

আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদের জন্মদিনের পার্টির দাওয়াত দিয়ে রেইনট্রি হোটেলে আনা হয়েছিলো দুই তরুণীকে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের আগে সুইমিংপুলে তাদের সঙ্গে গোসল করেছিলো সাফাত ও নাঈম। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে ধর্ষণ মামলার দ্বিতীয় আসামি নাঈম আশরাফ। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সত্যব্রত শিকদারের খাস খামরায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় সে। 
সাতদিনের রিমান্ড শেষে সকালে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় নাঈম আশরাফের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য আদালতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক ইসমত আরা এমি। জবানবন্দি শেষে আদালতের নির্দেশে নাঈমকে কারাগারে পাঠানো হয়। জবানবন্দিতে নিজের অপরাধ স্বীকার করেছে নাঈম আশরাফ। সাফাতের জন্মদিনের দাওয়াত দিয়ে দুই তরুণীকে রেইনট্রি হোটেলে আনার বিষয়টি স্বীকার করে জবানবন্দিতে নাঈম আশরাফ জানিয়েছে, হোটেলে আসার পর দুই তরুণীর সঙ্গে গল্প করেছে সাফাত ও নাঈম। সুইমিং পুলে গোসল করেছে তারা। পরবর্তীতে তারা সবাই হোটেল রুমে চলে যায়। সারারাত তারা হোটেল রুমেই কাটিয়েছে। এ বিষয়ে তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আসমা মিলি মানবজমিনকে বলেন, ধর্ষণের অপরাধ স্বীকার করেই জবানবন্দি দিয়েছে নাঈম আশরাফ।
১৭ই মে নাঈমকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার পরদিন ১৮ই মে আদালত তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে নাঈম আশরাফ স্বীকার করেছে দুই তরুণী তাদের পূর্ব পরিচিত। তাদেরকে জন্মদিনের দাওয়াত দিয়ে হোটেলে ডেকে আনা হয়েছিলো। পরিকল্পিতভাবে তরুণীদের ধর্ষণ করে সাফাত ও নাঈম। এক পর্যায়ে তরুণীরা কান্নাকাটি করে। ঘটনার পর কোনো অভিযোগ না করার জন্য তরুণীদের বুঝানো হয়েছিলো। ওই দিন জন্মদিনের দাওয়াতে আরো কয়েক তরুণী এসেছিলো বলেও জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে নাঈম আশরাফ। এছাড়াও তাদের নানা অপকর্মের কথা স্বীকার করেছে সে। 
উল্লেখ্য, বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ এনে ৬ই মে বনানী থানায়  মামলা করেন নির্যাতিত এক তরুণী। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৮শে মার্চ পূর্বপরিচিত সাফাত আহমেদ তার জন্মদিনের দাওয়াত দেয় এই দুই তরুণীকে। এরপর বনানীর ‘কে’ ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বরে রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। হোটেলের একটি কক্ষে আটকে রেখে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মামলার বাদীকে সাফাত ও তার বান্ধবীকে নাঈম ধর্ষণ করে। এ সময় সাফাতের গাড়িচালক বিল্লালকে দিয়ে ভিডিও করানো হয়েছে বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়। মামলায় আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, র‌্যাগমান গ্রুপের মালিকের ছেলে সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও গানম্যান রহমতকে আসামি করা হয়। মামলার পর পৃথক অভিযানে সকল আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ মামলায় রহমত ছাড়া চার আসামিই ১৬৪ ধারায় অপরাধ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। নাঈম আশরাফ সিরাজগঞ্জের  ফেরিওয়ালা আমজাদ হোসেনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে বনানীর ধর্ষণ ঘটনায় জড়িত থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতারণার অভিযোগও রয়েছে। তার প্রকৃত নাম হাসান মো. আব্দুল হালিম।
এদিকে, দুই তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় রেইনট্রি হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদনান হারুন ও জেনারেল ম্যানেজার ফ্রাংক ফরগেটকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটি একই দিনে পুলিশের বনানী জোনের ডিসি ও বনানী থানার ওসিকে তলব করেছিলো। কিন্তু পুলিশের ওই দুই কর্মকর্তা গতকাল মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয়ে উপস্থিত হননি। তারা সময় চেয়েছেন বলে জানা গেছে।
সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন মানবাধিকার লংঘন হয়েছে কি-না তা জানতে গত মঙ্গলবার রেইনট্রি হোটেল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের দুই কর্মকর্তাকে তলব করেছিল কমিশন। এ ঘটনা তদন্ত করতে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। তদন্ত কমিটির প্রধান নজরুল ইসলাম হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়েছেন নির্দিষ্ট দুজনের নামে হোটেলের রুম বুকিং করে এতে অন্যরা থাকে কি করে? সেইসঙ্গে অস্ত্র নিয়ে প্রবেশের বিষয়টিও জানতে চেয়েছেন। অস্ত্রের বিষয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, অস্ত্র হোটেলের ফ্রন্ট ডেস্কে জমা রাখা হয়েছিলো।
তার আগে তদন্তের অংশ হিসেবে কমিশন নির্যাতিত দুই তরুণীর সঙ্গে সেদিনের ঘটনা নিয়ে কথা বলে। পরে ১৩ই মে মানবাধিকার কমিশনের দুই সদস্য ঘটনাস্থল রেইনট্রি হোটেল পর্যবেক্ষণ করেন। সেইসঙ্গে নির্যাতিত দুই তরুণী ও তাদের পরিবার সদস্যদের নিরাপত্তা দেয়ারও আহ্বান জানায় কমিশন। রেইনট্রি হোটেল পরিদর্শন শেষে মানবাধিকার কমিশনের সদস্যরা বলেছিলেন, ঘটনার দিন রেইনট্রি হোটেলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.