পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিন

গত শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) আয়োজিত সেমিনারে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যেসব সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, গণমাধ্যম পুলিশের বল প্রয়োগের বিষয়টি ফলাও করে প্রচার করলেও প্রেক্ষাপট তুলে ধরে না এবং এতে পুলিশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হয় উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ঔপনিবেশিক আমল থেকে বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী মহল পুলিশকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। তিনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দ্বারা ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের কথা বললেও বিষয়টি এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সব ক্ষেত্রেই এর প্রাদুর্ভাব লক্ষ করা যায়। সেদিনের আলোচনার বিষয় ছিল ‘জননিরাপত্তা বিধানে গণমাধ্যম ও পুলিশের ভূমিকা’। এ ক্ষেত্রে তারা একে অপরের প্রতিপক্ষ না হয়ে সহযোগিতার মনোভাব নিলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তা কার্যকর ভূমিকা রাখবে আশা করি। এখানে বলা প্রয়োজন যে অপরাধমূলক খবরের সূত্র হিসেবে গণমাধ্যম যেমন পুলিশের সহায়তা নিয়ে থাকে, তেমনি পুলিশও গণমাধ্যমের খবরকে তদন্তের কাজে ব্যবহার করে থাকে। সেমিনারে ডিএমপি কমিশনারের মন্তব্যে পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধার বিষয়টি উঠে এসেছে, যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছেন, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল থেকে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী মহল পুলিশকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। বিষয়টি কেবল অতীতের হলে নিশ্চয়ই তিনি আলোচনায় আনতেন না। পুলিশ বিভাগ তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেশাগত দায়িত্ব পালনের প্রধান অন্তরায়ও এটি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যদি স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারতেন, তাহলে আইনশৃঙ্খলাজনিত অনেক সমস্যার সমাধানই সহজ হতো। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সব সংস্থাকে স্বাধীনভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে দিতে হবে। সরকারকে নিশ্চয়তা দিতে হবে যে ক্ষমতা বা প্রভাবের দোহাই দিয়ে কেউ তাদের ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে জননিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনি এর দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনীগুলোর প্রতি জনগণের আস্থাও বাড়বে।

No comments

Powered by Blogger.