'ভারত মাতা কী জয়' শ্লোগান নিয়ে হিন্দু-মুসলিম বিরোধ বাড়ছে

বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ‘ভারত মাতা কী জয়’ শ্লোগান দেবে না তার দেশে থাকার কোনো অধিকার নেই।’
শনিবার তিনি মহারাষ্ট্রের নাসিকে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘ভারত মাতা কী জয় বলতেই হবে। যারা তা না বলবে তাদের এ দেশে থাকার কোনো অধিকার নেই। এ দেশে কার হিম্মত আছে যে ভারত মাতা কী জয় বলবে না?’
বিজেপি’র জোট শরিক শিবসেনা অবশ্য আগেই জানিয়ে দিয়েছে, ভারতে থাকতে হলে ‘ভারত মাতা কী জয়’ স্লোগান দিতে হবে। শুক্রবার শিবসেনা নেতা প্রতাপ সরনাইক হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘ভারতে থাকতে হলে ‘ভারত মাতা কী জয়’ বলতে হবে। যদি তা না বলা হয়, আমরা শিবসেনা স্টাইলে তার জবাব দেব।’ তাদের দলীয় মুখপত্র ‘সামনা’য় বলা হয়েছে, ‘যারা ‘ভারত মাতা কী জয়’ বলবে না তাদের নাগরিকত্ব এমনকি ভোটাধিকারও কেড়ে নেয়া উচিত।’
বৃহস্পতিবার ভারতের প্রখ্যাত শিক্ষা কেন্দ্র দারুল উলুম দেওবন্দের পক্ষ থেকে এক ফতোয়ায় বলা হয়েছে, মুসলিমরা এক আল্লাহ্‌তে বিশ্বাস করে। আল্লাহ্‌ ছাড়া তারা অন্য কাউকে উপাসনা করতে পারে না। ওই স্লোগানের সারাংশ আপাতদৃষ্টিতে উপাসনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়ায় তা শিরক। এজন্য ‘ভারত মাতা কী জয়’ স্লোগান দেয়া মুসলিমদের জন্য বৈধ নয়।
দেওবন্দের মুফতিদের মতে, ভারত আমাদের মাতৃভূমি। আমরা একে ভালোবাসি কিন্তু এই দেশকে আমরা মা’বুদ (উপাস্য) বলে মনে করি না। মুসলিমরা এক আল্লাহ্‌তে বিশ্বাস রাখে। এজন্য তারা আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কাউকে উপাসনা করতে পারে না। আসলে একাংশের বিশ্বাস অনুযায়ী ভারত মাতা একজন ‘দেবী’, যাকে তারা পুজো করে। ‘ভারত মাতা কী জয়’ বলা লোকদের সামনে এর অর্থ দেশকে পুজোর শামিল। এজন্য কোনো মুসলিমদের জন্য এই স্লোগান জায়েজ নয়। দেওবন্দের ফতোয়া প্রকাশ্যে আসতেই বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, গতকাল শনিবার জামায়াতে ইসলামী হিন্দ সংগঠনের পক্ষ থেকে ‘মুসলিমদের জন্য ‘ভারত মাতা কী জয়’ স্লোগান দেয়া বৈধ নয় বলে জানানো হয়েছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে দেওবন্দের ফতোয়াকে সমর্থন করা হয়েছে। দিল্লিতে জামায়াতে ইসলামী হিন্দের সদর দফতরে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট মাওলানা সাইয়্যেদ জালালউদ্দিন উমরি বলেন, মুসলিমদের জন্য এই স্লোগান দেয়া অনুমতি যোগ্য নয়।
তিনি বলেন, ‘ভারত কী জয়’ স্লোগান সকলেই দেয় এবং এটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, এ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। কিন্তু ‘ভারত মাতা কী জয়’ বলা সম্ভব নয়, কারণ ইসলাম ধর্ম সেই অনুমতি দেয় না।’ তার মতে, দেশাত্মবোধের সঙ্গে এই স্লোগানকে সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া সম্পূর্ণ ভুল।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জাতীয়তাবাদ নিয়ে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িক এবং ফ্যাসিবাদী শক্তি বৃদ্ধি করা হচ্ছে এবং সামাজিক মেরুকরণ সৃষ্টি করে দেশের ঐক্য এবং অখণ্ডতা ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.