বিপুল উৎসাহের মধ্য দিয়ে আসামে ভোট চলছে

আসামে প্রথম দফার ভোট। সকাল থেকে
বুথের সামনে ভোটারদের লম্বা লাইন।
রাতভর বৃষ্টির পরও আকাশের মুখ ভার। এ নিয়ে অবশ্য আয়েশা বা অর্চিতাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। ছাতা মাথায় সাতসকালে বুথে হাজির। লম্বা লাইনে তাঁরা একে একে ভোট দেওয়ার যন্ত্রের বোতাম টিপে চলেছেন। উত্তর-পূর্ব ভারতের আসামে ভোটকেন্দ্রগুলোতে আজ সোমবার সকাল থেকে প্রথম পর্যায়ের ভোটে ভোটারদের বিপুল উৎসাহ চোখে পড়ার মতো। বাংলাভাষী বরাক উপত্যকার শিলচর রেলস্টেশনের সামনেই সাতসকালে দেখা বাবুল হোড়ের সঙ্গে। তিনি ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সদস্য। গতকাল রোববার রাতে কলকাতায় ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফাইনাল দেখে আজ ভোরেই শিলচর বিমানবন্দরে নেমেছেন। তারপর সোজা চলে এসেছেন ভোটকেন্দ্রে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘কখন কোথায় ব্যস্ত হয়ে পড়ি, তাই আগেভাগে ভোটটা দিয়ে দিলাম!’ সকাল সকাল ভোট দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, প্রদেশের কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্ত। ভোট দিয়েই সাংবাদিকদের সামনে তাঁদের দাবি, ‘১০০ শতাংশ আমরাই জিতব!’ পাল্টা দাবি অবশ্য বিজেপি শিবিরের থেকেও শোনা গেছে। মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ‘পরিবর্তন হচ্ছেই!’  নেতাদের দাবি, পাল্টা দাবির মধ্যেই ভোটকর্মীরা ভোটগ্রহণে ব্যস্ত। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনই তাঁদের লক্ষ্য। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবদুল মজিদ লস্কর প্রথম আলোকে জানান, এবারের বন্দোবস্ত আগের থেকে ভালো করা হয়েছে। একই মত ভোটকর্মী দীপক রঞ্জন রায়ের। ইফতিকার আহমেদ অবশ্য বললেন, ‘ওয়েদারটাই সমস্যায় ফেলছে। নইলে সবই ঠিক আছে।’ তবে খারাপ আবহাওয়ার মধ্যেও ভোটারদের মধ্যে উৎসাহের যে কোনো ঘাটতি নেই, সেটা জানালেন অসীম কুমার চৌধুরী। তাঁর দাবি, শান্তিপূর্ণভাবেই চলছে ভোটগ্রহণ। তবে এই শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মধ্যেই রিগিং, বুথ দখল ও সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগও আসতে শুরু করে সকাল থেকে। তবে গুরুতর অভিযোগ নেই বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে সাংবাদিকদের জানানো হয়েছে। কয়েকটি বুথে ইভিএমের অবশ্য গোলযোগ এবারও এড়ানো যায়নি। সেটা বাদ দিলে আসামের প্রথম দফার ভোটের শুরু খুবই ভালো হয়েছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হচ্ছে। ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভোটারের হারও বাড়তে থাকে। আসামের বরাক উপত্যকার মালুগ্রামে কথা হচ্ছিল নব্য ভোটার ঐয়াষা ভট্টাচার্যের সঙ্গে। কলেজপড়ুয়া ঐয়াষা এবারই প্রথম ভোট দেন। আঙুলে কালি লাগিয়ে ভোটদানের পর তিনি দারুণ খুশি। প্রথম আলোকে বললেন, ‘খুব ভালো লাগছে। জীবনে প্রথম ভোট দিলাম। তবে আঙুলে কালির দাগটা না লাগালেই ভালো হতো!’ প্রায় একই মত শহরের উপকণ্ঠে মধুরবনের ভোটার পারভিনের। তাঁর অবশ্য কালির দাগটাই ভালো লাগছে। কালি লাগানো আঙুল দেখিয়ে বললেন, ‘ভোট দিয়েছি তার প্রমাণ!’  ১২৬ সদস্যের আসাম বিধানসভার ৬৫ আসনে ৫৩৯ জন প্রার্থী প্রথম দফায় ভোটে লড়ছেন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন টানা ১৫ বছরের মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস প্রার্থী তরুণ গগৈ, বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালও। মোট ১২ হাজার ৯১০টি বুথে ৯৫ লাখ ১১ হাজার ৭৩২ জন ভোটার ভোট দেবেন। ১৯ মে ভারতের পাঁচ রাজ্যে একসঙ্গে ভোটের ফল ঘোষণা করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.