বগুড়ায় ভাগনিকে উত্ত্যক্ত, প্রতিবাদ করায় মামা খুন

বগুড়ার শাজাহানপুরের গণ্ডগ্রামে ভাগনিকে উত্ত্যক্ত করার
প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে খুন হন সনাতন প্রামাণিক। তাঁর
লাশ নিয়ে গতকাল বগুড়া শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়
স্কুলছাত্রী ভাগনিকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারালেন মামা। গত শনিবার রাতে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার গণ্ডগ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম সনাতন প্রামাণিক (২৬)। তিনি গণ্ডগ্রামের সুরথ চন্দ্র প্রামাণিকের ছেলে। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ লোকজন রাজীব নামের একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। এ ছাড়া পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে রনি নামের আরেকজনকে আটক করে। সনাতন প্রামাণিকের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে গতকাল রোববার লাশ নিয়ে বগুড়া শহরে মিছিল করে এলাকাবাসী। দুপুর ১২টার দিকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে লাশ নিয়ে এই মিছিল বের করে শহরের সাতমাথা হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দেন মিছিলকারীরা। জেলা প্রশাসক মো. আশরাফ উদ্দিন বিক্ষুব্ধ লোকজনকে আশ্বস্ত করে বলেন, সনাতন প্রামাণিক হত্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিত এবং হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে প্রশাসন সবকিছুই করবে। গণ্ডগ্রাম আদি কালীমন্দির হরিবাসর কমিটির লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যমতে, শনিবার রাতে নববধূকে নিয়ে বাড়ির পাশের মন্দিরে হরিবাসর অনুষ্ঠানে (কীর্তনের অনুষ্ঠান) যান সনাতন। সেখানে এলাকার বখাটেরা তাঁর ভাগনিকে উত্ত্যক্ত করতে থাকলে প্রথমে ভগ্নিপতি রতন বিশ্বাস প্রতিবাদ করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের মারধরের শিকার হন। পরে সনাতন প্রতিবাদ করতে গেলে বখাটেরা তাঁকে ছুরিকাহত করে। হাসপাতালে নেওয়ার পর রাত ১১টায় চিকিৎসকেরা সনাতনকে মৃত ঘোষণা করেন। সনাতনের পরিবার সূত্র জানায়, মাত্র ২৭ দিন আগে বিয়ে করেন সনাতন। বিয়ের জন্যই তিন মাস আগে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে এসেছিলেন তিনি। গতকাল দুপুরে গণ্ডগ্রামে সনাতনের বাড়িতে গেলে দেখা যায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। সনাতনের স্ত্রী সুচি রানী স্বামী নিহত হওয়ার সংবাদে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তাঁকে ঘিরে থাকা সব মানুষের চোখে পানি। সুচি বলেন, ‘হরিবাসর অনুষ্ঠানে আমাকে বসিয়ে রেখে মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে ফটকের দিকে এগিয়ে যান সনাতন। দুই মিনিট পর হই-হুল্লোড় শুনে সেখানে গিয়ে দেখি ওর রক্তমাখা শরীর মাটিতে পড়ে আছে।’ সনাতনের দিদি সুবর্ণা বিশ্বাস বলেন, ‘ভাগনিকে উত্ত্যক্ত করায় সনাতন শুধু প্রতিবাদ করেছিল। সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাসীরা তাকে ছুরি মারে করে। চোখের সামনে ভাইটি আমার চির ঘুম দিল।’ গণ্ডগ্রাম আদি কালীমন্দির হরিবাসর কমিটির সভাপতি অচিন্ত্য কুমার সরকার বলেন, এলাকার চিহ্নিত পাঁচ থেকে ছয়জন সন্ত্রাসী হরিবাসরের প্যান্ডেলে ঢুকে মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করছিল। এতে প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসীরা সনাতনকে ছুরিকাঘাত করে। শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, ঘটনায় সনাতনের বাবা সুরথ চন্দ্র বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখসহ ১৪ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। মামলায় রাজীব (২৬) ও রনি (২৪) নামের দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.