সব চোখ উজান আসামে by তরুণ চক্রবর্তী

‘একটি কুঁড়ি, দুটি পাতা, রতনপুর বাগিচায়...!’ গোটা উজান আসামই (আপার আসাম) যেন ভূপেন হাজারিকার সেই বিখ্যাত গানের ‘রতনপুর বাগিচা!’ বাগানের ‘সোনা’ এই ‘একটি কুঁড়ি দুটি পাতার’ হাতছানিই ব্রিটিশদের টেনে এনেছিল ব্রহ্মপুত্রের পারে। আজ সোমবার আসামের ১২৬ আসনের যে ৬৫টি আসনে ভোট হচ্ছে, তার ৪৫টিই প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর উজান আসামে। আসামের উত্তরের বিস্তীর্ণ এলাকার নাম আপার আসাম। এই আপার আসামের নির্বাচন এবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, উজান আসামের ৪৫ আসনের ওপরই অনেকটা নির্ভর করছে এ রাজ্যটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। আসামের টানা ১৫ বছরের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ নিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উজান আসামেরই তিতাবোর কেন্দ্রে। তাঁর মুখ্যমন্ত্রী কুর্সির প্রধান প্রতিপক্ষ, বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী, বর্তমানে ভারতের ক্রীড়ামন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালও ভোটে লড়ছেন উজান আসামেরই মাজুলি কেন্দ্র থেকে। সেই দিক থেকেও উজান আসামের দিকেই সবার নজর বেশি। আজ প্রথম দফার ভোটও হচ্ছে এই উত্তরেই। আপার আসামের বেশির ভাগ আসনেই চা-শ্রমিকদের আধিপত্য বেশি। তাই ভোট প্রচারে এসে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চা-শ্রমিকদের আবেগকে জয় করার চেষ্টা করেছেন। এতকাল উজান আসামে কংগ্রেসের বড় ভরসা ছিলেন চা-শ্রমিকেরা। কিন্তু সেই ‘কুলি’ ভোটে ফাটল স্পষ্ট। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভোট ব্যাংকে বড় থাবা বসিয়েছে বিজেপি। সেই সঙ্গে বর্ণহিন্দুদের একটা বড় অংশের সমর্থনপুষ্ট অসম গণপরিষদ গেরুয়া শিবিরে আসায় আপার আসামে ‘পরিবর্তন’-এর হাওয়া বইছে। রাজ্যের অর্থনৈতিক বিকাশে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে এই উজান আসাম। চা রপ্তানির পাশাপাশি কয়লাও এখানকার অর্থনৈতিক সম্পদ। রয়েছে আসাম ওয়েল। তেল, কয়লা ও চায়ের মালিক আপার আসামের মানুষ একটু বেশিই জাত্যভিমানী। আসামের বেশির ভাগ মুখ্যমন্ত্রীও আপার আসাম থেকে নির্বাচিত। ফলে উন্নয়নের হারও অনেকটাই বেশি। আপার আসামে দলের সম্ভাব্য ফল নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মুঠোফোনে প্রথম আলোর কাছে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্ত বলেন, গত ১৫ বছরের উন্নয়নের হাত ধরেই কংগ্রেস সেখানে ভালো ফল করবে। সেই সঙ্গে চা-বাগানের উন্নয়নে তাঁদের সরকারের একগুচ্ছ পদক্ষেপের কথাও শোনান তিনি। কিন্তু স্বাভাবিক নিয়মেই কংগ্রেসের ‘কুলি-দরদ’ মানতে নারাজ বিজেপি। সদ্য কংগ্রেস ছেড়ে আসা বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা হীমন্ত বিশ্বশর্মার দাবি, ‘কংগ্রেস চা-বাগানে শাসনের নামে শোষণ করেছে! এবার তার জবাব পাবে!’ কংগ্রেস বিজেপির পাশাপাশি রয়েছে, বদরুদ্দিন আজমলের নেতৃত্বাধীন এআইইউডিএফ। অন্যত্র সংখ্যালঘু মুসলিমদের দল হিসেবে পরিচিত হলেও আপার আসামে তাঁরাও নিজেদের ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ বলে দাবি করেন। শুধু দাবি করাই নয়, হিন্দু প্রার্থীও দিয়েছেন তাঁরা। এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দলের সুপ্রিমো বদরুদ্দিন আজমল দাবি করেন, ‘এবার আসামে সরকার গঠনের চাবি রয়েছে আমাদেরই হাতে।’ লালুপ্রসাদ যাদব আর নীতিশকুমারের সঙ্গে জোট গড়ে উজান আসামে প্রচারে ঝড় তুলছেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.