পিএসজি-সিটির ‘কুলীন’ হওয়ার লড়াই!

এল ক্লাসিকো জয়ের পর এখন দারুণ আত্মবিশ্বাসী রিয়াল মাদ্রিদ।
চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে জার্মানি যাওয়ার সময় তাই কাল
বেশ ফুরফুরে মেজাজে পাওয়া গেল তাদের
চার দিন আগের এল ক্লাসিকো নিশ্চয়ই চোখে ভাসছে অনেকেরই। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই আজ রাত জেগে প্যারিসে ‘এল ক্যাশিকো’ দেখার প্রস্তুতি নিতে হবে। পিএসজি-ম্যানচেস্টার সিটির দ্বৈরথের এর চেয়ে লাগসই নাম আর কী হতে পারে? মোটাদাগে বললে, এখনকার বড় ক্লাবগুলো দুই রকম। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য আর নিজেদের খেলোয়াড়ের সঙ্গে অর্থ নিয়ে এক দল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আরেক দল দেদার টাকা ছড়িয়ে নগদ সাফল্য কিনছে। পিএসজি আর সিটি সেই গোত্রীয় দলে সবার আগেই থাকবে। সিটি যেমন আবুধাবির দাক্ষিণ্যপুষ্ট, পিএসজি কাতারের আশীর্বাদধন্য। উপসাগরীয় অর্থ দুই দলের খোলনলচেই গত কয়েক বছরে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। সাফল্যও পেয়েছে দুই দল। সিটি যেমন দুবার ইংলিশ লিগ জিতেছে। পিএসজি কয়েক বছর ধরেই ফ্রেঞ্চ লিগে দেখাচ্ছে একচ্ছত্র আধিপত্য। কিন্তু ইউরোপের কুলীন লিগে ভালো করে ‘জাতে’ ওঠার যে চেষ্টা, সেটাই যেন হয়ে উঠছিল না। পিএসজির কথাই ধরা যাক—এই মুহূর্তে কাগজে কলমে বিশ্বের সেরা দলগুলোর একটি। ইব্রাহিমোভিচ, ডি মারিয়া, কাভানিদের নিয়ে নিজেদের দিনে যে কাউকেই হারিয়ে দিতে পারে। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগে তিন বছর ধরে কোয়ার্টার ফাইনালের গেরোতেই দলটি বারবার আটকে যাচ্ছে। ফ্রেঞ্চ লিগ এখন পিএসজির কাছে ডালভাত হয়ে গেছে, এবারেই তো রেকর্ড আট ম্যাচ হাতে রেখেই নিশ্চিত করেছে শিরোপা। লরা ব্লাঁ যেমন এই মৌসুমের শুরু থেকেই বলছিলেন, চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতাই এবার তাঁদের ধ্যানজ্ঞান। এই শনিবারেই ম্যাচ শেষে ব্লাঁ মনে করিয়ে দিলেন, ‘যেসব ক্লাব আমাদের মতো আর্থিকভাবে শক্তিশালী, আমাদের চেয়ে ঐতিহ্যের দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে, আমাদের মতো অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে, তাদের সঙ্গে আমরা এখন একই সমতলে। এরাই সেরাদের সেরা।’ কী অদ্ভুত ব্যাপার, পিএসজির সেই পথে আজ যারা বাধা, সেই সিটিও চ্যাম্পিয়নস লিগের মোহেই আচ্ছন্ন। পিএসজির চেয়ে সিটির অবস্থা অবশ্য অন্য রকম। ঘরোয়া লিগে এবার দলটি বেশ ভালোই ভুগছে। গত ছয় ম্যাচের চারটিতেই হার। কিন্তু সিটির চূড়ান্ত গন্তব্য যে ওই চ্যাম্পিয়নস লিগ! পেপ গার্দিওলাকে আনার পেছনেও এই কারণটাই বেশি কলকাঠি নেড়েছে। পিএসজির মতো সিটি অবশ্য এত দূর কখনো যেতে পারেনি, শেষ আটেই খেলছে এই প্রথম। তবে এত দূর যখন এসেছে, সেমিফাইনালে কেন নয়? বায়ার্ন, বার্সেলোনা বা রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে একই বন্ধনীতে আসতে হলে ওই পর্যন্ত তো যেতেই হবে! পিএসজি-সিটির ডামাডোলে অনেকটা আড়ালে পড়ে যাচ্ছে, আজ কিন্তু জার্মানিতে রিয়াল মাদ্রিদ-ভলফসবুর্গও মুখোমুখি। অবশ্য দুই দলের সাম্প্রতিক ফর্ম বলছে, পাল্লাটা রিয়ালের দিকেই বেশি ঝুঁকে আছে। বিশেষ করে এল ক্লাসিকোর পর তো বটেই। লা লিগায় রিয়ালের শিরোপাস্বপ্ন এখনো মলিন, তবে ক্লাসিকোর পর হারানো আত্মবিশ্বাস অনেকটাই ফিরে পেয়েছে রিয়াল। গ্যারেথ বেলের কণ্ঠে সেটিরই ছোঁয়া, ‘এখনো চ্যাম্পিয়নস লিগ ও লা লিগায় আমাদের অনেক দূর যেতে হবে, তবে এই জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস জোগাবে।’ তবে বার্সা ম্যাচে উজ্জ্বল রিয়াল মিডফিল্ডার কাসেমিরো কিছুটা সতর্ক, ‘ভলফসবুর্গকে আমাদের হালকাভাবে নিলে চলবে না। ওদের রক্ষণ ভালো, আক্রমণে ক্ষিপ্রগতির কয়েকজন আছে।’ তবে ফর্ম দেখলে বলতেই হয়, ভলফসবুর্গ খুব বড় বাধা হওয়ার কথা নয় রিয়ালের সামনে। বুন্দেসলিগায় ভলফসবুর্গ এখন আটে, গত তিন ম্যাচে গোল করেছে মাত্র একটি। তবে সব একপাশে রেখে ক্লাবের পরিচালক ক্লাইস আলোফস উপভোগের মন্ত্রই জপে দিচ্ছেন, ‘এ রকম একটা ম্যাচের অভিজ্ঞতা আমাদের অনেক খেলোয়াড়ের এর পর কবে হবে ঠিক নেই। তাই এটা উপভোগ করা চাই। নিশ্চিত করতে প্রয়োজন, নিজেদের খেলাটা যেন আমরা ঠিকঠাক খেলি।’ এএফপি, ইএসপিএন।
আজ মুখোমুখি
পিএসজি-ম্যানচেস্টার সিটি
ভলফসবুর্গ-রিয়াল মাদ্রিদ
* স্বাগতিক দল প্রথমে

No comments

Powered by Blogger.