চাপের মুখে ক্যামেরন

ডেভিড ক্যামেরন
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন তাঁর পরিবারের সদস্যদের আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে গতকাল মঙ্গলবার চাপের মধ্যে পড়েন। পানামা পেপার্সের তথ্য অনুযায়ী তাঁর প্রয়াত বাবা ব্রিটেনে কর ফাঁকি দিয়ে ৩০ বছর ধরে বিদেশে অর্থ রেখেছিলেন। লন্ডনের ডাউনিং স্ট্রিটে অবস্থিত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অবশ্য এটিকে ক্যামেরনের পরিবারের সদস্যদের ‘একান্ত বিষয়’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, তাঁরা বিদেশে বিনিয়োগ করবেন কি না, সেটা একান্তই তাঁদের নিজস্ব ব্যাপার। তবে সরকারি সূত্রগুলো এএফপিকে জানিয়েছে, দেশের বাইরে প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের ওরকম নিজস্ব কোনো তহবিল নেই। ক্যামেরন পরিবারের সদস্যদের বিদেশে অর্থ রাখার বিষয়টি ব্রিটিশ সংবাদপত্রগুলোর প্রথম পাতায় বড় জায়গা পেয়েছে। এতে কনজারভেটিভ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী নিঃসন্দেহে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। কারণ তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে আর্থিক স্বচ্ছতা বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক নানা উদ্যোগের পক্ষে বিভিন্ন সময় সরব হয়েছেন। ডেভিড ক্যামেরনের বাবা ইয়ান ক্যামেরন বাহামা দ্বীপপুঞ্জে ব্লেয়ারমোর হোল্ডিংস নামে একটি বিনিয়োগ তহবিল গড়েছিলেন। তিনি প্রতিষ্ঠানটির পাঁচজন পরিচালকের একজন হিসেবে ২০১০ সালে মৃত্যুর কিছুদিন আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। কর-সংক্রান্ত যেসব নথি ফাঁস হয়েছে, সেগুলো দ্য গার্ডিয়ান ও বিবিসির কাছে এসেছে। এতে দেখা যায়, বাহামার প্রায় ৫০ জন বাসিন্দা প্রতিবছর ব্রিটেনে কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য ব্লেয়ারমোরের কাগজপত্রে সই করেছেন। গার্ডিয়ান বলেছে, ব্লেয়ারমোর ৩০ বছরের লাভের অংশ থেকে যুক্তরাজ্যকে এক পয়সাও কর দেয়নি। আগামী ১২ মে বড় পরিসরে একটি দুর্নীতিবিরোধী সম্মেলনের আয়োজন করবে লন্ডন। ওই অনুষ্ঠানের এক মাস আগে পরিবারের সদস্যদের কর ফাঁকির তথ্য ফাঁস হওয়াতে চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন। কারণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি সচরাচর জোরালো বক্তৃতা দিয়ে থাকেন। বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, দূরবর্তী যেসব ভূখণ্ড আছে সেখানকার জন্য ‘প্রত্যক্ষ আইন’ প্রণয়ন এবং যুক্তরাজ্যের কর আইন মেনে চলার বাধ্যবাধকতা আরোপের বিষয়টি সরকারের বিবেচনা করা উচিত। এ বিষয়ে ব্রিটেনের জনগণের ‘ক্ষোভের’ বিষয়টিকে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বলেছে, যুক্তরাজ্য বরাবরই করের ব্যাপারে স্বচ্ছতার ‘শিখরে’ ছিল। কর ফাঁকির বিষয়ে আরও কঠোর হতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে করবিন বলেন, বিত্তবানদের জন্য এক রকম কর আইন আর জনসাধারণের জন্য অন্য রকম হতে পারে না। এই পক্ষপাত এবং অন্যায় অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। শুধু কথায় নয়, বিত্তশালীদের অবশ্যই ন্যায্য কর পরিশোধ করতে হবে। পানামাভিত্তিক আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার ১ কোটি ১৫ লাখ গোপন নথিপত্র সম্প্রতি ফাঁস হওয়ার ঘটনায় বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কর ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক শোরগোল শুরু হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.