যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রনীতিতে ‘মানবাধিকার’ গুরুত্ব হারিয়েছে

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রনীতিতে মানবাধিকার রক্ষার কাজটি আগের মতো গুরুত্ব পাচ্ছে না উল্লেখ করে এর কড়া সমালোচনা করেছে দেশটির পররাষ্ট্র-বিষয়ক সংসদীয় কমিটি। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর (ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস—এফসিও) মানবাধিকার রক্ষায় বিশ্বের দেশে দেশে যে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করত, তা অনেকটা দমে গেছে বলে মনে করে এই কমিটি। গতকাল মঙ্গলবার দেশটির পররাষ্ট্র-বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, মানবাধিকার রক্ষার কাজে অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ দ্বিগুণ করে প্রায় ১১ মিলিয়ন পাউন্ড করা হয়েছে। কিন্তু পররাষ্ট্র দপ্তর মানবাধিকারের প্রতি নজর কমিয়ে দিয়েছে। তারা উন্নয়ন ও নিরাপত্তার মতো বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে—এমন দেশের তালিকায় চীন, মিসর ও সৌদি আরবের মতো দেশকে যুক্ত না করার ঘটনা অন্তত তা-ই প্রমাণ করে বলে মনে করে কমিটি। সামনের দিনগুলোয় পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার-সংশ্লিষ্ট কাজের প্রতি গভীর নজর রাখা হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে কমিটি। এ ছাড়া সময়-সময় কাজের মূল্যায়নও করা হবে। মানবাধিকার ও গণতন্ত্র-বিষয়ক কাজের ওপর আলাদা বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশের জন্যও পরামর্শ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি। কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, পররাষ্ট্র দপ্তরের মন্ত্রীরা মানবাধিকার-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যে ধরনের ভূমিকা পালন করছেন বা যে ধরনের শব্দ ব্যবহার করে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন, তাতে এমন ধারণার জন্ম হয়েছে যে মন্ত্রীদের কাছে মানবাধিকারের বিষয়টি তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ। পররাষ্ট্র-বিষয়ক সংসদীয় কমিটির প্রধান ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের এমপি ক্রিসপিন ব্লান্ট বলেন, মন্ত্রীদের শব্দ চয়ন ও ভূমিকা পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার রক্ষার চমৎকার ঐতিহ্যকে হেয় করেছে। এর প্রতিকার প্রয়োজন। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার রক্ষার নীতিতে আটটি বিষয় যুক্ত ছিল। এগুলো হলো মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মৃত্যুদণ্ডের অবসান, নির্যাতন বন্ধ, ধর্ম পালন ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা, নারী অধিকার, ব্যবসা ও মানবাধিকার, গণতন্ত্রায়ণ ও সংঘাতপূর্ণ এলাকায় যৌন অপরাধ দমন। ২০১৫ সালের আগস্ট থেকে পররাষ্ট্র দপ্তর মানবাধিকার-সংশ্লিষ্ট কাজের এই তালিকাকে সংক্ষিপ্ত করে মাত্র তিনটিতে নামিয়ে আনে। এর মধ্যে আছে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আইনের শাসন, আইনভিত্তিক আন্তর্জাতিক পদ্ধতিকে শক্তিশালীকরণ এবং স্থিতিশীল বিশ্বের জন্য মানবাধিকার। কমিটি বলছে, সুনির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক নীতিগুলো বাদ দেওয়ায় তারা অসন্তুষ্ট। সুনির্দিষ্ট ইস্যুগুলোয় পররাষ্ট্র দপ্তরের ভূমিকা দেখতে চায় কমিটি। সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় এক বিবৃতিতে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড বলেছেন, মানবাধিকার রক্ষার কাজটিকে কমিটি যেভাবে উপস্থাপন করেছে, তার সঙ্গে একমত নন তিনি। হ্যামন্ড বলেন, মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নের বিষয়টি তাঁর দপ্তরের অনিবার্য কাজ। এটি দেশে দেশে ছড়িয়ে থাকা ব্রিটিশ কূটনীতিকদের অন্যতম দায়িত্ব।

No comments

Powered by Blogger.