জড়িত কেউ শনাক্ত হয়নি, কারণ এখনো অজানা

পুরান ঢাকায় ঝব্বু খানম জামে মসজিদের ভেতরে মুয়াজ্জিন বিল্লাল হোসেন হত্যার সঙ্গে জড়িত কাউকে গতকাল মঙ্গলবারও শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। হত্যার কারণ সম্পর্কেও অন্ধকারে তারা। নিহত বিল্লালের পরিবারের সদস্যরাও কাউকে সন্দেহ করতে পারছেন না। তবে স্থানীয় কয়েকজন বলেছেন, টাকা লুট করতে গিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। গত সোমবার সকালে ইসলামপুর রোডের ঝব্বু খানম জামে মসজিদ থেকে মসজিদটির মুয়াজ্জিন বিল্লালের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, রোববার রাত ১০টা থেকে ভোর পাঁচটার মধ্যে তিনি খুন হন। এ ঘটনায় বিল্লালের ছেলে মো. ইয়াসির অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন। ঘটনা সম্পর্কে জানতে পুলিশ মসজিদটির ইমাম তাজুল ইসলাম, আরেক মুয়াজ্জিন মোশাররফ, খাদেম হাবিবুর রহমানসহ পাঁচজনকে গতকাল আবার কোতোয়ালি থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সোমবার ইমামসহ কয়েকজনকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, হত্যার কারণ সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি এবং জড়িত কাউকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দুপুরে মসজিদের ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুবই সহজ-সরল ভালো মানুষ ছিলেন বিল্লাল হোসেন। আমাদের বেতন-ভাতা দেওয়াসহ মসজিদের আয়-ব্যয়সংক্রান্ত সব হিসাব তিনি রাখতেন। কারও সঙ্গে তাঁর কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না।’ পুলিশের পাশাপাশি হত্যার রহস্য উন্মোচনে গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা (এসবি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেশটিগেশন (পিবিআই) ছায়া তদন্ত করছে। গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পিবিআইয়ের কয়েকজন সদস্য। পরিদর্শন শেষে পিবিআইয়ের পরিদর্শক রুহুল কুদ্দুছ প্রথম আলোকে বলেন, মসজিদের কাঠামো এমন যে মূল ফটক ছাড়া অন্য কোনো দিক দিয়ে ভেতরে ঢোকা সম্ভব নয়। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে নিহত বিল্লালের সঙ্গে কারও শত্রুতার তথ্য পাওয়া যায়নি। তিনি ইসলামি চিন্তাবিদও ছিলেন না, যার কারণে কারও সঙ্গে তাঁর মতাদর্শগত পার্থক্য হতে পারে এবং এর কারণে কোনো জঙ্গি সংগঠনের কেউ তাঁকে হত্যা করতে পারে। রুহুল কুদ্দুছ বলেন, আর্থিক কারণেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে হয়েছে। মসজিদটির ‘মোতোওয়াল্লি’ (ব্যবস্থাপক) খাজা আফসার হাসান প্রথম আলোকে বলেন, মসজিদটির নিচতলায় মার্কেটে ৩০টি দোকান রয়েছে। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে প্রতি মাসে মসজিদের আয় ছিল প্রায় ৪০ হাজার টাকা। সব টাকাই বিল্লাল হোসেনের কাছে থাকত। মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, খতিব, খাদেম ও ঝাড়ুদারদের বেতন ও বিদ্যুৎ বিল—এসব দিয়ে উদ্বৃত্ত তেমন থাকত না। মসজিদের কোনো ব্যাংক হিসাব নেই। সব আয়-ব্যয়ের হিসাব ও টাকা বিল্লালের কাছে থাকত। মসজিদটির খাদেম হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে তাঁরা বেতন পান। চলতি মাসের বেতন এখনো পাননি। সোমবার রাত ১২টার দিকে মানিকগঞ্জে বাবার কবরের পাশে বিল্লাল হোসেনকে দাফন করা হয়। বিল্লালের শ্যালক মাওলানা মোহাম্মদ ফেরদাউস বলেন, বিল্লালের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর রোববার রাত আটটায় শেষ কথা হয়। রাত তিনটার দিকে বিল্লালের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। মুঠোফোনটি পাওয়া যায়নি। পুলিশও মুঠোফোনটি পায়নি বলে কোতোয়ালি থানার ওসি জানিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.