মোটাসোটা মুরগি খাওয়ার আগে দু’বার ভাবুন!

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট বলেছেন, বাংলাদেশে শ্রমিক অধিকার ও শ্রমিক নিরাপত্তায় অগ্রগতি আনতে অনেকে কাজ করছেন। যুক্তরাষ্ট্র ওই প্রচেষ্টার অংশ। দ্রুত ইউনিয়ন নিবন্ধন ও কারখানার নিরাপত্তাসহ প্রাথমিক মূল্যায়নে যেসব সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে তার অগ্রগতি না হওয়া পর্যন্ত চলমান প্রক্রিয়ার সঙ্গে সবাই থাকবে। প্রক্রিয়াটির সফল বাস্তবায়ন এবং গার্মেন্ট খাতের অগ্রগতিতে দেশের বেশির ভাগ শ্রমিক ও কারখানা মালিক উপকৃত হবেন উল্লেখ করে মার্কিন দূত বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের বিষয়টি জিএসপি অ্যাকশন প্ল্যানের অধীনে বাংলাদেশ সরকার কতটা অগ্রগতি আনতে পারে তার ওপর নির্ভর করছে। গতকাল এক ফেসবুক চ্যাটে রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন। গত ২৫শে জানুয়ারি মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মার্শা ব্লুম বার্নিকাটের ঢাকায় এক বছর পূর্ণ হয়েছে। মূলত বছরপূর্তিকে সামনে রেখে রাষ্ট্রদূত তার ফেসবুক বন্ধুদের সঙ্গে গতকাল বিকালে ওই চ্যাটে অংশ নেন। সেখানে তিনি তার ঢাকায় কাজের অভিজ্ঞতা এবং স্মরণীয় মুহূর্তগুলোর বেশ কিছু ছবিও শেয়ার করেন। ধাপে ধাপে শেয়ার করা ওই ছবি ও বার্তায় কয়েক হাজার লাইক পড়েছে। এ নিয়ে মন্তব্যও পড়েছে কয়েকশ’। তবে সব মন্তব্যই উৎসাহ এবং প্রশংসামূলক। ২০১৬ সালে এটি মার্কিন রাষ্ট্রদূতের প্রথম ফেসবুক চ্যাট। সে হিসাবে সেখানে কয়েকশ’ প্রশ্ন জমা পড়েছিল। রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর খোলামেলা জবাব দিয়েছেন। বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পের উন্নয়নে পশ্চিমা দুনিয়ার সহযোগিতায় নেয়া কর্মপরিকল্পনা ‘সাইটেইনিবিলিটি কমপেক্ট’ বাস্তবায়নে গত ২৮শে জানুয়ারি ঢাকায় যে ফলোআপ মিটিং হয়েছে তা নিয়েও কথা বলেছেন তিনি। অনলাইনের ওই মতবিনিময়ে রাষ্ট্রদূত তার ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা এবং স্মরণীয় ঘটনাগুলো শেয়ার করেছেন। সেখানে তার জন্ম, বেড়ে ওঠা, স্কুল ও কলেজ জীবনের বর্ণনা যেমন দিয়েছেন, তেমনি আজকের পথচলার বিভিন্ন বিষয়ও তুলে ধরেছেন। একজন বিদেশি, বিশেষত বাংলাদেশের একজন বন্ধু এবং উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বার্নিকাট বাংলাদেশ এবং এ দেশের মানুষকে যেভাবে দেখেছেন মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুক বন্ধুদের সঙ্গে তা-ই শেয়ার করেছেন। রাষ্ট্রদূত তার সব সুহৃদ-শুভানুধ্যায়ী, বিশেষ করে যারা তার বছরপূর্তিকে সেলিব্রেট করেছেন তাদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভোলেননি।
চ্যাটের চুম্বক অংশ: নতু আহমেদ নামের এক প্রশ্নকর্তা রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চান সাধারণ বাংলাদেশিদের সম্পর্কে তার ধারণা কী? আমাদের সমাজ ও জীবনধারার কোন বিষয়টি তাকে সবচেয়ে বেশি আলোড়িত করেছে? বাংলাদেশ ও আমেরিকান সংস্কৃতির মধ্যে তিনি কী পার্থক্য খুঁজে পান? জবাবে বার্নিকাট বলেন, এখানে মানুষ যেমন করে কার্যত প্রায় সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে, তা আমি সত্যিই পছন্দ করি। এছাড়া নিজেদের ও বিশ্বের ইতিহাস সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের জানাশোনা দেখেও আমি মুগ্ধ। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক পৃথক ঐতিহ্য রয়েছে। তবে এখানে পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু করে বড়দিন পালন করতে পারাটা সত্যিই বিশেষ কিছু। সৈয়দ জাহিদ হোসেন নামের এক বন্ধু জানাতে চান, নিকট ভবিষ্যতে আমাদের তৈরি পোশাক খাত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা কী? এ শিল্পে প্রায় ২১ বছর ধরে আছেন জানিয়ে প্রশ্নকর্তা বলেন, আপনারা সবাই এ খাতে শ্রমিকদের নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। কিন্তু মধ্যম বা উচ্চপর্যায় নিয়ে নন। তারা কতটা নিগৃহীত তা কী আপনারা জানেন? জবাবে বার্নিকাট বলেন, প্রথমত আপনাকে অভিনন্দন। আপনি এমন এক শিল্পের অংশ, যেটি বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে সাহায্য করেছে। আমি মালিক পক্ষ ও বিজিএমইএ’র উদ্বেগের বিষয়টি শুনেছি। এর মধ্যে একটি বিষয় হলো পরিবেশগত ক্ষতি ঠেকানোর ব্যয়। এ উদ্বেগ নিরসনে অর্থায়ন করার সুবিধাকল্পে ইউএসআইডি সম্প্রতি ঋণ সুবিধা চালু করেছে। মোরশেদ আলম নামের এক বন্ধু জানতে চান, স্বাগতিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কীভাবে রাষ্ট্রদূতকে বিনোদিত করেছে? তিনি বাংলাদেশিদের কাছ থেকে আর কী আশা করেন? তার শৈশব, স্কুল ও পারিবারিক জীবন নিয়েও জানতে চান ওই বন্ধু। বার্নিকাট তাকে হতাশ করেননি। তিনি খোলামেলাই বলেন, আমি আটলান্টিক মহাসাগরের পাশে নিউজার্সিতে বড় হয়েছি। আমরা এক ভাই ও এক বোন। আমি সব সময়ই ঘুরে বেড়াবার স্বপ্ন দেখেছি। তাই কূটনীতিক হওয়াটা আমার জন্য স্বপ্নের চাকরি। যদিও আমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ নিয়েছি। কিন্তু কলেজ শেষে আমি একটি রাসায়নিক কারখানায় দুই বছরের জন্য কাজ করি। এরপর আমি গ্রাজুয়েট স্কুলে ফিরে যাই। পড়াশোনা শেষ করে আমি মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগে যোগ দিই। ব্যক্তিগত জীবনে বার্নিকাট দুই সন্তানের গর্বিত জননী বলেও উল্লেখ করেন। সৈয়দ ইউসুফ আলি নামের এক প্রশ্নকর্তা রাষ্ট্রদূতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আমরা জানি আমাদের দরিদ্র ও অবহেলিত শ্রমিকদের আপনারা সবসময়ই সাহায্য দিয়ে থাকেন। আমরা জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করি। জবাবে বার্নিকাট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক। আমরা এ বাণিজ্য আরও বাড়বে বলে আশা করি, যদিও বিশ্বের কোনো দেশের তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে জিএসপি কোনো সুবিধা দেয় না। সব জিএসপি সুবিধাপ্রাপ্ত দেশই একই শুল্ক প্রদান করে। জিএসপি সুবিধা পেতে হলে যে কোনো দেশের ক্ষেত্রেই শ্রমিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা বাধ্যতামূলক। আতিকুর রহমান আতিক নামের এক বন্ধু বলেন, আমি আপনার মাধ্যমে রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনাকে বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানাতে চাই। জানাবেন, আমরা এখনও তাকে ভালোবাসি। বার্নিকাটের প্রতি তার প্রশ্ন ছিল তিনি বাংলাদেশের খাবার কেমন পছন্দ করেন? জবাবে বার্নিকাট বলেন, রাষ্ট্রদূত মজিনা আমার খুবই পুরনো ও প্রিয় একজন বন্ধু। আমি তাকে শিগগির এ দেশে আসার আমন্ত্রণ জানাবো। আর আমার পছন্দের খাবার? আমি সব ধরনের বাংলাদেশি খাবার পছন্দ করি। সঞ্চারি হালদার নামের একজন বলেন, একজন নারী হিসেবে আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে খুব শ্রদ্ধা করি। আপনাকে আমি বরিশালে আমন্ত্রণ জানাতে চাই। জবাবে বার্নিকাট তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি বাংলাদেশের নারীদের খুবই শ্রদ্ধা করি। দেশজুড়ে নারীদের নেয়া অনেক উদ্যোগে আমি মুগ্ধ। আমি শিগগিরই বরিশাল সফরে যাওয়ার আশা করছি। ড্যান মজিনার প্রসঙ্গ টেনে এক প্রশ্নকর্তা বার্নিকাটের কাছে জানাতে চায় দেশের ৬৪ জেলা সফরে তার কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা? জবাবে দেশের চমৎকার স্থানগুলো রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট ঘুরে দেখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

No comments

Powered by Blogger.