ক্ষতিকর ওষুধের বিষাক্ত বাজার- জনস্বাস্থ্যের হুমকি কবে দূর করবে সরকার?

প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সব ওষুধ নির্ভেজাল ও নিরাপদ বলেই বিক্রি হয়। কিন্তু চট্টগ্রামে চার মাসে ১০০ দোকানের ৯৫টিতেই অর্থাৎ ৯৫ শতাংশের বেলাতেই মেয়াদোত্তীর্ণ অথবা ভেজাল ওষুধ পাওয়া গেছে। ঢাকার শাহবাগে গত ১৪ অক্টোবর ২০টি দোকান থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ইনজেকশনসহ বিপুল পরিমাণ ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল জব্দ করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত যেখানেই হাত দিচ্ছেন, সেখানেই ক্ষতিকর ও ভেজাল ওষুধ মিলছে। মহানগরেই যদি এই অবস্থা, তবে গ্রামগঞ্জের কী হাল?
চট্টগ্রামে লাইসেন্সধারী ১০ হাজার ৮০০ দোকানের অর্ধেকের লাইসেন্সও মেয়াদোত্তীর্ণ। লাইসেন্স ছাড়াই চলছে আরও পাঁচ হাজার। ঢাকার অবস্থাও তথৈবচ। মাঝেমধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে নকল ওষুধ তৈরির কারখানা পাওয়ার সংবাদও প্রকাশিত হয়। এসব ওষুধ সরল বিশ্বাসে সাধারণ-অসাধারণ সবাই নিচ্ছেন এবং ক্যানসারসহ স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। এই চিত্র জনস্বাস্থ্যের জন্য যেমন হুমকির, তেমনি স্বাস্থ্য প্রশাসনের অদক্ষতা ও দুর্নীতির ডুবো পাহাড়ের চূড়ার আভাসও দিচ্ছে। গভীরের চিত্রটি সহজেই অনুমেয়।
জনগণ মানে ব্যক্তি, মানুষ, নর-নারী, শিশু ও বৃদ্ধ—আমাদেরই কেউ না কেউ। সরকার তার নাগরিকদের এ রকম গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ফেলে রাখতে পারে না। ওষুধ প্রশাসন দুর্নীতিমুক্ত ও সজাগ হলে অবস্থা বদলাতে বেশি সময় লাগবে না। মুনাফার জন্য যারা জীবনের ঝুঁকি সৃষ্টি করে, তাদের শাস্তির ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। ওষুধ প্রশাসনকে বিস্তৃত করতে হবে। মানুষ যাতে মেয়াদ দেখে ওষুধ কেনে, সেই সচেতনতা জাগাতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্ত স্বাস্থ্য প্রশাসনই হোক বা হোক নকল উৎপাদক ও বিক্রেতা; এরা জনশত্রু। জনস্বার্থ ও জনস্বাস্থ্য এভাবে দুর্নীতিবাজ ও স্বার্থান্ধ গোষ্ঠীর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?
ওষুধের বাজার এবং সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার খতিয়ান নিতে জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন গঠন করা এখন জরুরি কাজ।

No comments

Powered by Blogger.