নেতার অভ্যর্থনায় তীব্র যানজট

মোটর শোভাযাত্রার কারণে বগুড়া শহরের সাতমাথায়
গতকাল দুপুরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়l ছবি: প্রথম আলো
দেড় শতাধিক প্রাইভেট কার-মাইক্রোবাসের বহর। বহরের সামনে শত শত মোটরসাইকেল। গতকাল বৃহস্পতিবার বিশাল এ মোটর শোভাযাত্রা প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা বগুড়া শহর দাপিয়ে যোগ দেয় যুবলীগের প্রতিনিধি সভায়। এ সময় শহরে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়।
সংগঠনের প্রতিনিধি সভায় যুবলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদকে অভ্যর্থনা জানাতে ওই শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। ১২ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বগুড়ায় আগমন উপলক্ষে আয়োজিত জনসভা সফল করতে জেলা যুবলীগ শহরের শহীদ টিটু মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করে।
জেলা যুবলীগের দুজন নেতা বলেন, জেলা যুবলীগ এ প্রতিনিধি সভার আয়োজন করলেও তাতে যোগ দেন রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলার নেতা-কর্মীরা। সভায় প্রধান ও বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
শহরের উপকণ্ঠ বনানী এলাকায় শোভাযাত্রা l প্রথম আলো
রিকশাচালক বৃন্দাবনপাড়ার মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘মন্ত্রী-এমপি আসিচ্চে ভালো কতা, তাই বলে পুলিশ রিকশা আটকে হামাকেরে প্যাটত লাত্তি মারবি? পরধানমন্ত্রী কি লেতাগরক হামাকেরে প্যাটত লাত্তি দিবার কচ্চে।’ রিকশাযাত্রী জহির উদ্দিন বলেন, ব্যস্ততম শহরে এভাবে গাড়িবহর আর মোটরসাইকেল দাপিয়ে নেতাকে বরণ করে মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে ঠেলে দেওয়া চরম অমানবিক।
আয়োজকদের অন্যতম জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, বহরে দেড় শতাধিক গাড়ি এবং দেড় হাজার মোটরসাইকেল ছিল। যানজট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গাড়িবহর ও শোভাযাত্রায় বিভিন্ন জেলার নেতারা অংশ নিয়েছিলেন। সম্ভবত রাস্তা ভুল করে তাঁরা আবাসিক এলাকা, আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সাতমাথা হয়ে সভাস্থলে পৌঁছেছেন। যানজট ও দুর্ভোগের জন্য আমি আয়োজকদের পক্ষ থেকে ক্ষমাপ্রার্থী।’
বগুড়া ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক বিকর্ণ কুমার চৌধুরী বলেন, শোভাযাত্রা শহরের জ্বলেশ্বরীতলা-সার্কিট হাউস মোড়-সাতমাথা ঘুরে শহীদ টিটু মিলনায়তনে যাওয়ার ব্যাপারে আয়োজকেরা কোনো অনুমতি নেননি। গাড়িবহর শহরের দিকে রওনা দেওয়ার পর আয়োজকেরা ওই পথ হয়ে ঘুরে যাওয়ার বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়েছিলেন।প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে অভ্যর্থনা জানাতে জেলা যুবলীগ শত শত মোটরসাইকেলের শোভাযাত্রার আয়োজন করে। দুপুরের দিকে দুই নেতা শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে বগুড়া জেলা সীমানায় এলে সেখান থেকে মোটরসাইকেলের শোভাযাত্রা গাড়িবহরকে নিয়ে সামনে এগোতে থাকে। বেলা একটার দিকে বহর পর্যটন মোটেল থেকে রওনা দেয় শহীদ টিটু মিলনায়তন অভিমুখে। এ সময় শেরপুর সড়কে যানবাহন বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিকট শব্দে ভেঁপু বাজিয়ে এগিয়ে চলা মোটর শোভাযাত্রা সরাসরি সাতমাথায় না গিয়ে ইয়াকুবিয়া মোড় হয়ে ব্যস্ততম ও আবাসিক এলাকা জ্বলেশ্বরীতলা কালীবাড়ি মোড়ে যায়। সেখান থেকে জেলা জজ আদালত ভবন, সরকারি বালিকা বিদ্যালয় এবং সার্কিট হাউসের সামনে দিয়ে সাতমাথা হয়ে গোহাইল সড়ক ধরে পৌনে দুইটায় শহীদ টিটু মিলনায়তনে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় সাতমাথা ছাড়াও স্টেশন সড়ক, কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, শেরপুর সড়ক, মেরিনা রোড, টেম্পল রোড, নওয়াববাড়ী সড়কে এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ রাখে ট্রাফিক পুলিশ। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। স্থবির হয়ে পড়ে গোটা শহর। পথচারী-রিকশাসহ অন্যান্য বাহনের যাত্রীরা দুর্ভোগ পোহান। যানজটে সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও জিলা স্কুলের জেএসসি পরীক্ষার্থীরা বিপাকে পড়ে।

No comments

Powered by Blogger.