আসুন, লাখো মানুষের জীবন বদলে দিই

শিক্ষা ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে ৪টি চুক্তি সই হয়েছে। দেশটি সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের উপস্থিতিতে বুধবার রাতে দুই দেশের সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা চুক্তিগুলো সই করেন। এর আগে মার্ক রুটের সরকারি বাসভবনে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আনুষ্ঠানিক এবং দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। চুক্তি চারটি হচ্ছে- বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন্স’ বিষয়ক সমঝোতা স্মারক; বাংলাদেশের কূটনীতিকদের প্রশিক্ষণ সহযোগিতা বিষয়ক আগ্রহপত্র এবং বাংলাদেশের বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের স্যাক্সন ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস ও স্কুল অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির সমঝোতা স্মারক; বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি ও স্যাক্সন ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেসের মধ্যে চুক্তি। এর আগে বুধবার সকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হোটেলে সাক্ষাৎ করেন নেদারল্যান্ডসের বৈদেশিক বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী লিলিয়ান প্লাউম্যান ও মেলানি সুল্‌জ ফ্যান হেগেন। দুপুরে প্রধানমন্ত্রী নেদারল্যান্ডসের ব-দ্বীপাঞ্চল এবং পোতাশ্রয় ফিউচার ল্যান্ড পরিদর্শন করেন এবং সন্ধ্যায় নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। চুক্তি সইয়ের পর রাতে মার্ক রুটের দেয়া নৈশভোজে সফরসঙ্গীদের নিয়ে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঢাকা-আমস্টার্ডাম ঐকমত্য: জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা’ বাস্তবায়নে এক সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস। বুধবার সন্ধ্যায় ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের রাষ্ট্রীয় বাসভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ ঐকমত্য হয় বলে যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, বেসরকারি খাতের উন্নয়ন, কৃষি, বন্দরের উন্নয়ন ও আইনের শাসন নিয়ে আলোচনা হয়। পরে শেখ হাসিনার সম্মানে নৈশভোজে পানি ব্যবস্থাপনা নিয়েও আলোচনা হয়। যৌথ বিবৃতিতে ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন এবং দুই দেশের পানি সম্পদের ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে বলেও মত দেন তারা। সহযোগিতার ক্ষেত্র সমপ্রসারিত করতে গত জুনে দুদেশের মধ্যে ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য জোরদার ও টেকসই ব-দ্বীপ ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক ও ‘বাংলাদেশে ভূমি পুনরুদ্ধার ও সংস্কারের ক্ষেত্রে’ আগ্রহপত্র সই হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়নে নেদারল্যান্ডসের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান তিনি। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশের ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেদারল্যান্ডসের পক্ষ থেকে আরও সহযোগিতার উপর জোর দেন শেখ হাসিনা। অন্যদিকে বাংলাদেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা’ বাস্তবায়নে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ দিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা স্মরণ করে দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদারে ওপর গুরুত্বারোপ করেন। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতাকে সম্পর্কের মূল বিষয় বলে উল্লেখ করেন তারা। নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশী পণ্যের অন্যতম রপ্তানিকারক ও বিদেশী বিনিয়োগকারী অন্যতম শীর্ষ দেশ হওয়ায় সস্তোষ প্রকাশ করেন তারা। দুই পক্ষই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির আগ্রহের কথা জানান। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ওষুধ, চামড়া, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, হালকা প্রকৌশল শিল্প, পাট, জাহাজ নির্মাণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, অবকাঠামো, তথ্য ও প্রযুক্তি এবং পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগ করতে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান। ডাচ প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পে আগ্রহ প্রকাশ করলে প্রস্তাবটি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে বলে জানান শেখ হাসিনা। দেশের তৈরী পোশাক খাতকে ‘টেকসই শিল্পায়নের মডেল’ হিসেবে দাঁড় করাতে নেদারল্যান্ডস সরকারের সহযোগিতামূলক পদক্ষেপের জন্য ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। এই প্রেক্ষাপটে পোশাক শিল্পে ‘অর্থায়নের সুযোগ’ ও ‘পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে’ নেদারল্যান্ডসের সহযোগিতাও চান তিনি। ডাচ প্রধানমন্ত্রী এই শিল্পের উন্নয়নে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দুই দেশের মধ্যে বর্তমানের সহযোগিতা নিয়েও প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন তারা। এ সময় বিশ্ব শান্তি রক্ষায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন দুই পক্ষ। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের সেনা ও পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেন ডাচ প্রধানমন্ত্রী। ২০১৭-১৮ মেয়াদে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান তিনি। এমডিজি অর্জনে সাফল্যের প্রশংসা করে বাংলাদেশের এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও উন্নয়নশীল বিশ্বের নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন ডাচ প্রধানমন্ত্রী। জলবায়ু পরিবর্তনকে মানবজাতির সামনে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনার ক্ষেত্রে একমত হন দুই প্রধানমন্ত্রী। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম, মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, নৌ পরিবহন সচিব শফিক আলম মেহেদী, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক ও নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল।
আরও ডাচ বিনিয়োগ কামনা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে আরও ডাচ বিনিয়োগ কামনা করেছেন। তিনি বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে বাংলাদেশ থেকে আরও বিশ্বমানের পণ্য আমদানি করার জন্য নেদারল্যান্ডসের কোম্পানিগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন ওষুধ, চামড়া, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, হালকা প্রকৌশল, পাট, বিদ্যুৎ, জ্বালানি বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি অবকাঠামো ও জাহাজ চলাচল খাতে বিনিয়োগ করার জন্য ডাচ কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশ স্বাগত জানাবে। নেদারল্যান্ডসের বৈদেশিক বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযাগিতা বিষয়ক মন্ত্রী লিলিয়ান প্লুমেন বুধবার নেদারল্যান্ডসের প্রশাসনিক রাজধানী হেগ নগরীতে গ্রান্ড হোটেল আমরাত কুরহাউজ-এ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অনুরোধ জানান। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তৈরী পোশাক ছাড়াও ডাচ আমদানিকারকরা প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে ওষুধ, বাইসাইকেল, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য, জুতা, সিরামিক, ক্যাবল ওয়্যার, পিভিসি ব্যাগ, মোটর পার্টসসহ বিশ্বমানের বাংলাদেশী পণ্য আমদানি করতে পারে। দেশের তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ শ্রমিকদের অধিকার, পেশাগত নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং দায়িত্বশীল ও ফলপ্রসূ উপায়ে কাঠামোগত সমন্বয়ের লক্ষ্যে জোরদার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। তৈরি পোশাক খাতে প্রবেশাধিকার, অর্থায়ন ও ন্যায্যমূল্য সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোর মোকাবিলায় বাংলাদেশে একটি সম্মেলন আহ্বান করার জন্য নেদারল্যান্ডসের প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা। ডাচ বৈদেশিক বাণ্যিজ্যমন্ত্রী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তৈরী পাশাক খাতে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেন। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের উল্লেখ করে তিনি আশ্বাস প্রদান করেন যে, নেদারল্যান্ডস খাদ্যের মান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে। লিলিয়ান প্লুমেন এমডিজি লক্ষ্যসমূহ বিশেষ করে দারিদ্র্যবিমোচনে সাফল্য অর্জন করার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। পরে ডাচ অবকাঠামো ও পরিবেশ মন্ত্রী মেলানি শুল্টজ ভান হায়েজেন একই হোটেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ জ্ঞান ও উদ্ভাবনীমূলক অংশীদারিত্বের কাঠামোর মধ্যে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি সামর্থ্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ডেল্টা প্লান ২১০০ কর্মসূচির অধীনে ডাচ সরকারের সঙ্গে একটি সুদীর্ঘ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। তিনি আরও বলেন, ফরিদপুরে বাংলাদেশ নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে দু’দেশের মধ্যে একটি চুক্তি পানি খাতে সহযোগিতার নতুন পথ উন্মুক্ত করবে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে ড্রেজার তৈরির জন্য ডাচ মন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি সাগর ও নদীতে ভূমি পুনরুদ্ধারে ডাচ সহায়তা ও সহযোগিতা কামনা করেন। দু’দেশের মধ্যে নদী গবেষণা ও ভূমি পুনরুদ্ধার কাজে চলমান সহযোগিতার উল্লেখ করে মেলানি শুল্টজ ভান হায়েজেন বলেন যে, তাঁর সরকার বাংলাদেশ ডেল্টা প্লান ২১০০ বাস্তবায়নে আরও সহায়তা দিবে।
রানীর প্রশংসা: নেদারল্যান্ডসের রানী ম্যাক্সিমা জরিগুয়েতা অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিস্ময়কর সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বুধবার সন্ধ্যায় ডাচ রাজকীয় প্রাসাদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেদারল্যান্ডসের রানীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ প্রশংসা করেন। সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন। প্রেস সচিব বলেন, ডাচ রানী প্রশংসার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন এর সব কৃতিত্ব জনগণের। কারণ, তারা সহিষ্ণু ও কঠোর পরিশ্রমী। উন্নয়নের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়ন বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ উপদেষ্টা রানী ম্যাক্সিমা এ সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেন যে, তিনি বাংলাদেশের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দারিদ্র্যবিমোচনের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নের বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক অভিযোজনমূলক কৌশল প্রণয়ন করতে যাচ্ছেন।
আসুন, লাখো মানুষের জীবন বদলে দিই- ডাচ ব্যবসায়ীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী: নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুই দেশের যৌথ প্রচেষ্টা লাখো মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে। গতকাল দ্যা হেগে ডাচ ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে এক সেমিনারে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের সম্ভাবনাগুলো তুলে ধরে শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বস্ত্র, চামড়া, পাট, সিরামিক, ওষুধ, পেট্রোক্যামিকেলস, জাহাজ নির্মাণ, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, প্ল্যাস্টিক পণ্য, হালকা প্রকৌশল এবং ইলেকট্রনিক্স, টেলিযোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি আর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, অবকাঠামো উন্নয়নের মতো খাতে ডাচ কোম্পানিগুলোকে আমরা বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশ এরই মধ্যে নিম্ন-মধ্যম আয়ের  দেশের কাতারে পৌঁছে গেছে জানিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যের কথাও সেমিনারে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ডাচ ব্যবসায়ীদের বলেন, আমি আপনাদের, প্রতি আহ্বান জানাই, আপনারা আসুন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের, মুনাফা ও সমৃদ্ধির অংশীদার হোন। আমরা একজোট হলে লাখো মানুষের জীবন বদলে দিতে পারি। শেখ হাসিনা জানান, বাংলাদেশে শুধুমাত্র রপ্তানিমুখী শিল্পোর জন্য আটটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ জোন রয়েছে। সরকার এখন ১০০টি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল এবং বেশ কয়েকটি হাইটেক পার্ক গড়ে তুলতে কাজ করছে, যেখানে ডাচ কোম্পানিগুলো ব্যবসার সুযোগ নিতে পারে। তিনি বলেন, বিনিয়োগ নীতির দিক দিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম উদার দেশ। এদেশে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের যেমন আইনি সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে, তেমনি তারা শুল্ক ও কর রেয়াতের মতো সুবিধা পাচ্ছেন। লিখিত বক্তব্য  দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ডাচ ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং আবাসন, জলবায়ুর পরিবর্তন ও নবায়ণযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা সত্যিকারের মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চাই। আমরা এক সঙ্গে কাজ করলে দেশে ও বিশ্বে কোটি জনতার ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারব। বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত লিওনি মার্গারেটা কুলিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তার ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে অনুষ্ঠানে বলেন, সেখানে এক জায়গায় আমি জর্জ হ্যারিসনের ভাস্কর্য দেখেছি, যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় গান গেয়ে সকলকে উজ্জীবিত করেছিলেন। এখন তিনি বাংলাদেশকে দেখলে সমৃদ্ধির গান গাইতেন। অন্যদের মধ্যে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সভাপতি মার্টিন ফারব্রুগেন, দেশটির সাবেক কৃষিমন্ত্রী চিজ ফিরমান, বাংলাদেশ সরকারের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, এফবিসিসিআই’র প্রথম সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল ইসলাম।

No comments

Powered by Blogger.