অপেক্ষায় ১২ হাজার গ্রাহক, সাত কারখানা

বিনা নোটিশে বন্ধ হয়ে গেছে রাজশাহীর শিল্পকারখানা ও বাসাবাড়িতে গ্যাস-সংযোগ। উৎপাদনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে উভয়সংকটে পড়েছে সাতটি শিল্পকারখানা। একইভাবে পড়ে আছে ১২ হাজার আবাসিক গ্রাহকের আবেদন। এর মধ্যে ১ হাজারেরও বেশি গ্রাহক চাহিদাপত্রের টাকা জমা দিয়েছেন। এখন তাঁরা সবাই হতাশ।  কারখানায় গ্যাসের সংযোগের বিষয়টি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা কমিটিতে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পশ্চিমাঞ্চল  গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (পিজিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম ফারুক। তবে সরকারি সিদ্ধান্তে আবাসিক সংযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ‘করার কিছু নেই’ বলে জানান তিনি।  চলতি অর্থবছরের শুরুতে আবাসিকে গ্যাস-সংযোগ দেওয়ার জন্য কোনো দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। আর শিল্পে সংযোগ বন্ধ রয়েছে গত বছরের মে মাস থেকে।  পিজিসিএল সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে রাজশাহীতে সাতটি কারখানায় গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আরও সাতটি কারখানা গ্যাস-সংযোগের অনুমতি পেয়ে উৎপাদনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। এখন তাদের আর সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া আরও নয়টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। গ্যাস-সংযোগের অনুমতি নিয়ে রাজশাহী নগরের বিসিক এলাকায় পণ্য উৎপাদনে যাওয়ার প্রস্তুতি শেষ করে এক বছর ধরে বসে আছে প্রাণ এগ্রো লিমিটেড। তারা এখানে বাদাম ও মটরশুঁটিসহ নানা উপাদান থেকে ১০ ধরনের খাদ্যপণ্য উৎপাদন করার প্রস্তুতি নিয়েছে। কোম্পানির ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপক রায়হানুল ইসলাম বলেন, ‘কারখানা পুরোদমে চালু করতে পারলে এখানে দেড় থেকে দুই হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এক বছর ধরে অপারেশন, প্রকৌশল ও নিরাপত্তা বিভাগের লোকজনকে বসিয়ে রেখে বেতন দিতে হচ্ছে। অথচ গ্যাস পেলে কারখানাটি আরও বড় করা যেত। রাজশাহীর মানুষের আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতো।’  এসিআই-গোদরেজ এই রকম একটি কোম্পানি। তারা মাছের ভাসমান খাবার তৈরি করবে। এ জন্য পবা উপজেলার ধুতরাবন গ্রামে প্রায় ১৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তারা একটি কারখানা তৈরি করেছে। কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, পিজিসিএলের প্রধান লাইন থেকে কারখানা পর্যন্ত চার কিলোমিটার গ্যাসলাইন তৈরি করতে তাদের ৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তারা গ্যাস-সংযোগ পেলে যেকোনো দিন কারখানা চালু করতে পারে। কারখানা চালু হলে এখানে সাত থেকে আট শ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। গ্যাস-সংযোগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা দেখে নিশ্চিত হয়ে তারা এখানে বিনিয়োগ করেছেন। এখন সব কাজ বন্ধ হয়ে আছে।  রাজশাহীর বিসিক এলাকার এমএইচ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড মিনারেল ওয়াটার, বিস্কুট, লজেন্স, জুস উৎপাদনের জন্য কারখানা করেছে। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাফিজ উদ্দিন বলেন, তাঁকে গ্যাস সরবরাহ করা হবে মর্মে সম্মতিপত্র দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয় করে কারখানা তৈরি করেছেন। হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘এখন সীমিত আকারে ডিজেল দিয়ে কারখানা চালু রেখেছি। এই কাজ করতে গিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছি।’  রহমান জুট স্পিনার্স প্রাইভেট লিমিটেড পাট থেকে বিদেশে রপ্তানিযোগ্য সুতা উৎপাদন করবে। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, ‘গ্যাস পাব—এই আশায় কারখানায় বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে। গ্যাস না পেলে এখন কী করব, ভেবে পাচ্ছি না।’  শিল্পকারখানার পাশাপাশি রাজশাহীতে বাসাবাড়ির গ্যাস-সংযোগও থেমে গেছে। চলতি অর্থবছরে কোনো দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। ২০১৩ সালের ৭ জুন থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার বাসায় গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আরও ১২ হাজার আবেদন পড়ে রয়েছে। তার মধ্যে ১ হাজারেরও বেশি গ্রাহক চাহিদাপত্রের টাকা জমা দিয়েছেন। এমন একজন গ্রাহক রাজশাহী নগরের সাগরপাড়া এলাকার পপি রায় বলেন, ‘আমার বাড়ির ওয়্যারিং পর্যন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এত কিছু করার পরে সংযোগ না দিলে কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব।’  চাহিদাপত্রের জমা টাকা ফেরত দেওয়া প্রসঙ্গে পিজিসিএলের রাজশাহী অঞ্চলের ব্যবস্থাপক তোফায়েল আহমেদ গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাহিদাপত্রে যে টাকাটা গ্রাহকেরা দিয়েছেন, তা আমরা ফেরত দিতে পারব। তবে সংযোগ পেতে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে সিটি করপোরেশনকে দেওয়া টাকা বা ওয়্যারিংয়ের টাকার বিষয়ে আমার করণীয় কিছু নেই।’  এ বিষয়ে রাজশাহী শিল্প বণিক সমিতির সভাপতি মনিরুজ্জামান বলেন, ‘গ্যাস-সংযোগে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পেয়েই এখানে শিল্প স্থাপন হয়েছে। যাঁরা সেই প্রতিশ্রুতিতে শিল্প স্থাপন করেছেন, তাঁদের গ্যাস দিতে হবে। আর আবাসিক গ্যাসের সংযোগের জন্য যাঁরা ইতিমধ্যে চাহিদাপত্রের টাকা জমা দিয়েছেন, তাঁদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে সরকারকেই।’

No comments

Powered by Blogger.