পাবনায় যাজক হত্যাচেষ্টা, মোটরসাইকেল রহস্য by আবু সালেহ আকন

প্রথমে যে তথ্য প্রকাশ পেয়েছে সে অনুযায়ী জব্দকৃত মোটরসাইকেলটির নম্বর প্লেট ভুয়া। ওই সিরিয়াল নম্বরে কোনো মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন হয় না। ইঞ্জিন নম্বর অনুযায়ী এক মালিকের সন্ধান পেলেও ওই নামে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি এখনো।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই মোটরসাইকেলটি দুর্বৃত্তরা ব্যবহার করেছে পাবনার যাজক লুক সরকারকে হত্যা চেষ্টায়। তবে গতকাল ঈশ্বরদী থানার ওসি মোটরসাইকেলটির ভিন্ন সিরিয়ালে নম্বর প্লেটের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, মোটরসাইকেলটির মালিক সম্পর্কে এখনো তারা নিশ্চিত নন ।
৫ অক্টোবর পাবনার ঈশ্বরদীতে বাসায় ঢুকে খ্রিষ্টান ধর্মযাজক লুক সরকারকে (৫০) হত্যার চেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। ওই দিন সকালে তিন যুবক ধর্মপাঠ শোনার কথা বলে লুক সরকারের কাছে আসে। তারা লুক সরকারের ড্রইংরুমে বসে তার মুখ চেপে ধরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কাটার চেষ্টা করে। এ সময় তার আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যাওয়ার সময় বাড়ির কেয়ারটেকার আজগর আলী একজনকে জাপটে ধরেন। বাকি দুই যুবক তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। দুর্বৃত্তদের অস্ত্রের আঘাতে লুক সরকারের গলা কেটে যায়। এ দিকে দুর্বৃত্তরা তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায়। মোটরসাইকেলটির নম্বর- ঢাকা মেট্রো ট-১১-৯০৪৫। পুলিশ ওই মোটরসাইকেলটি জব্দ করে । পুলিশের ধারণা ছিল মোটরসাইকেলের সূত্র ধরে দুর্বৃত্তদের আটক করতে পারবে তারা। কিন্তু প্রথমেই দেখা যায় নম্বর প্লেটটি ভুয়া।
ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ট সিরিয়ালে মোটরসাইকেলের কোনো নম্বর নেই। দুর্বৃত্তরা পরিকল্পিতভাবে এ সিরিয়াল নম্বর দিয়ে নম্বর প্লেট তৈরি করেছে। প্রথমে ‘ট’ সিরিয়ালের মোটরসাইকেল জব্দ করার কথাই উল্লেখ করা হয়। তবে গতকাল ঈশ্বরদী থানার ওসি বলেছেন, মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেটটি ট সিরিয়ালের নয়। ল সিরিয়ালের।
তিনি আরো বলেন, এ সিরিয়াল ধরেই মোটরসাইকেলের মালিক খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মালিকের সন্ধানে ইতোমধ্যে বিআরটিএ-তে তারা নম্বরটি জমা দিয়েছেন। মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন ও চেসিস নম্বর দিয়েও খোঁজা হচ্ছে মোটরসাইকেলটি কার। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই নম্বর অনুযায়ী তারা খোঁজ পেয়েছেন মোটরসাইকেলটি আলাউদ্দিন নামে এক ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রেশন করা, যার ঠিকানা- শহীদ তাজউদ্দিন সরণি, তেজগাঁও, ঢাকা। কিন্তু ওই ঠিকানায় এ নামে কোনো ব্যক্তিকে এখনো শনাক্ত করতে পারেনি গোয়েন্দারা।
এ দিকে লুক সরকারকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে পুলিশ সন্দেহভাজন এক যুবককে গ্রেফতার করেছে। ওসি বলেছেন, ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতের নির্দেশে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। ওইসব তথ্যের যাচাই-বাছাই চলছে। এ দিকে গ্রেফতার ওবায়দুলকে জামায়াত-শিবিরের লোক বলে পুলিশ উল্লেখ করলেও তার বাবা আব্দুস সালাম বলেছেন, তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তার ছেলেও ছোটবেলা থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে ওঠাবসা করে। তার ছেলে রাজধানীর শ্যামলীর একটি প্রতিষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ে। মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের একটি মামলায় হাজিরা দিতে সে ঢাকা থেকে বাড়ি গিয়েছিল। পুলিশ তাকে ধরে ধর্মযাজক হত্যা প্রচেষ্টা মামলায় ঢুকিয়েছে।
ওবায়দুলের বাবা তার ছেলেকে এ মামলায় গ্রেফতারের প্রতিবাদও করেছেন। লুক সরকারও বলেছেন, গ্রেফতার হওয়া ওবায়দুলকে তিনি চেনেন না। তবে যারা তার গলা কেটে হত্যার চেষ্টা চালায় তাদের দেখলে তিনি চিনবেন।

No comments

Powered by Blogger.