'বিদেশী হত্যা' নিয়ে রাজনৈতিক দোষারোপের প্রবণতা

বাংলাদেশে অল্প সময়ের ব্যবধানে দু’জন বিদেশী নাগরিক খুন হওয়ার ঘটনার তদন্তে দৃশ্যত তেমন কোনো অগ্রগতি না হলেও এ নিয়ে দেশটিতে সরকার এবং বিরোধী দল পরস্পরকে দোষারোপ করতে শুরু করেছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার অনেকটা সরাসরিই বিদেশী হত্যার ঘটনার জন্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দায়ী করেছেন।
তবে বিএনপির পক্ষ থেকে এই দাবিকে অর্থহীন কথা বলে বর্ণনা করে বলা হয়েছে যে সরকার ব্যর্থতার দায় এড়াতে এ ধরণের দাবী করছে।
ইতালি আর জাপানের দু’জন নাগরিক খুন হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে জঙ্গিরা দায়ী এমনটা মনে করা হলেও সরকারের পক্ষ থেকে এসব ঘটনার জন্যে বিএনপি ও জামায়াতকে দায়ী করার প্রবণতাই এখন বেশী লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে বলেছিলেন যে বিদেশী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জড়িত থাকতে পারে।
তবে আজ ঢাকায় আইনজীবীদের এক অনুষ্ঠানে তিনি বিদেশী হত্যাকাণ্ডের জন্যে অনেকটা সরাসরিই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দায়ী করেন।
বিগত সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন। তার ছেলে তারেক রহমানও বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকেই লন্ডন প্রবাসী।
ঢাকায় আজ এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, এর আগে তিনি দেশে বসে দেশের মানুষ হত্যা করেছেন। এখন বিদেশে বসে তিনি দেশের মধ্যে বিদেশীদের হত্যা করে আতংক সৃষ্টি করিয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এটা হচ্ছে তার (খালেদা জিয়ার) 'আন্দোলনের নতুন কৌশল'। দেশ ও সরকারের বদনাম করার জন্য খালেদা জিয়া বিদেশে লবিস্ট রেখেছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশে নিরাপত্তা নিয়ে যখন বিশ্বজুড়ে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে, তখন সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে যে ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর কোন কর্মকাণ্ড বাংলাদেশে নেই, যদিও এর আগে আইএস-এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
সাম্প্রতিক বিদেশী হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব আইএস স্বীকার করেছে বলে দাবী করা হলেও এসব ঘটনার জন্যে এখন একেবারে উচ্চ পর্যায় থেকে দায়ী করা হচ্ছে বর্তমানে লন্ডনে অবস্থানরত খালেদা জিয়াকে।
কীসের ভিত্তিতে সরকারের এই দাবী, তা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, খালেদা জিয়া বিদেশে যাবার পর থেকেই বিদেশীদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেণ, এর আগে দেশের মানুষকে হত্যা করে যখন সুফল পাওয়া যায় নি - তাই এবার বিদেশীদের ওপর হামলা করে সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হচ্ছে।
মি. হানিফ বলেন, মনে হয় তার এবং তার পুত্রের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো রয়েছে তার বিচার বাধাগ্রস্ত করা এবং সরকারকে বিব্রত ও হেয় করার জন্যই এটা ঘটানো হচ্ছে।
তবে বিএনপির নেতারা পাল্টা অভিযোগ করছেন যে সরকার বিদেশীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, আর এই ব্যর্থতার দায়ভার এখন চাপাচ্ছে বিএনপির ওপর, যাকে তাঁরা বর্ণনা করছেন, সরকারের পুরানো খেলা হিসেবে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কোন গোপন সফর নয়, বরং চিকিৎসার জন্যে লন্ডনে রয়েছেন।
"যা খুশি তাই বলা তাদের স্বভাবে অংশ হয়ে গেছে, দেশের মানুষও এসব কথা শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এসব অর্থহীন কথা, যার কোন যুক্তি নেই, প্রমাণ নেই" - বলেন বিএনপির এই সিনিয়র নেতা।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার যে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দায়িত্বহীন কথার জন্যই আমরা সারা বিশ্বে একঘরে হয়ে পড়ছি।
কিন্তু বিদেশী হত্যার জন্যে সরকারের পক্ষ থেকে দোষারোপ কি খালেদা জিয়ার দেশে ফেরাকে কঠিন করে তুলতে পারে? – এমন এক প্রশ্নে নজরুল ইসলাম খান বলেন, এভাবে খালেদা জিয়াকে ভয় দেখানো যাবে না।
আওয়ামী লীগের মাহবুব-উল আলম হানিফও মনে করেন, খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার ক্ষেত্রে সরকার কোন বাধার সৃষ্টি করবে না, এবং বিএনপি চেয়ারপারসন যেকোন অভিযোগ দেশে ফিরে আইনী পথে মোকাবেলা করবেন বলে তিনি আশা করেন।
শেখ হাসিনা এমন এক সময় এ কথা বললেন, যখন বিদেশী নাগরিক হত্যাকান্ড ছাড়াও, সম্প্রতি দুটি বিদেশী ক্রিকেট দল নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশে খেলতে আসা স্থগিত করেছে।
ঢাকায় কিছু দূতাবাস বিদেশীদের চলাফেরার সময় সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছে। সর্বশেষ ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দফতর বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদী হামলার উচ্চ ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে বলেছে, সেখানে পশ্চিমা নাগরিকদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণের মতো আক্রমণের আশংকা আছে।
সূত্র : বিবিসি

No comments

Powered by Blogger.