পালিয়ে বেড়াচ্ছেন দুই সাংসদ

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুই সাংসদের পালিয়ে থাকা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের এ দুই সাংসদ হলেন টাঙ্গাইলের আমানুর রহমান খান রানা ও গাইবান্ধার মনজুরুল ইসলাম লিটন। আইন প্রণেতা হয়েও আইনকে ফাঁকি দিয়ে তাঁদের পালিয়ে বেড়ানোকে ভালোভাবে দেখছেন না নিজ দলের নেতারাই। অবশ্য সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আমানুর এক বছর এবং মনজুরুল এক সপ্তাহ ধরে পালিয়ে আছেন।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে শিশু শাহাদাত হোসেনকে গুলি করে আহত করার ঘটনায় ‘পালিয়ে’ বেড়াচ্ছেন সাংসদ মনজুরুল ইসলাম। পুলিশ বলছে, তারা সাংসদকে খুঁজে পাচ্ছে না। কিন্তু সাংসদ ফোনে প্রথম আলোর সঙ্গে দুই দফা কথা বলেছেন। তিনি ঢাকায় আছেন এবং জামিনের জন্য চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মনজুরুল ইসলামকে আত্মসমর্পণ করতে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ অক্টোবরের সংবাদ সম্মেলনে সাংসদ মনজুরুলকে ছাড় না দেওয়ার কথা বলেছিলেন।
টাঙ্গাইলের সাংসদ আমানুর রহমান নিজ দলীয় প্রবীণ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যার সন্দেহভাজন। কিন্তু প্রায় এক বছর ধরে তিনি পালিয়ে আছেন। অবশ্য এর মধ্যে গত জুনে একবার সংসদ অধিবেশনের সময় হাজিরা খাতায় সই দিয়ে চলে গেছেন। কিন্তু পুলিশ তাঁকে এখনো খুঁজে পায়নি। তাঁকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি।
নিহত ফারুকের স্ত্রী নাহার আহমেদ ও তাঁর সন্তানদের সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের এই হত্যার যথাযথ বিচার করার কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় সাংসদের এভাবে পালিয়ে থাকা তাঁদের নিজেদের জন্য যেমন রাজনৈতিক ক্ষতি, তেমনি দলের জন্যও ক্ষতিকর। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তাঁদের আত্মসমর্পণ করা উচিত।
কিন্তু মামলা হলেও সরকারদলীয় সাংসদদের সচরাচর গ্রেপ্তার হতে হয় না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তাঁদের ‘খুঁজে’ পায় না। অনেক ক্ষেত্রে মামলার পর আদালতে হাজির হলে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়।
গত ১৫ বছরে তিনটি রাজনৈতিক সরকারের সময় সরকারদলীয় চারজন সাংসদকে জেলে যেতে হয়েছে। যাঁদের দুজন আদালতে হাজির হওয়ার পর কারাগারে পাঠানো হয়। অন্য দুজনের গ্রেপ্তারের কারণ দলের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি বা শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বলে মনে করা হয়।
জেলে যাওয়া ও পালিয়ে বেড়ানো সাংসদদের বিরুদ্ধে হত্যা, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও মারধরের মামলা আছে। সব সরকারের সময়ই সরকারদলীয় সাংসদদের গ্রেপ্তার করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনীহা চোখে পড়ে।
সরকারদলীয় সাংসদদের গ্রেপ্তারের নজির কম থাকলেও বিরোধীদলীয় সাংসদদের ক্ষেত্রে এর উল্টো নজির রয়েছে। রাজনৈতিক কারণেই বিরোধীদলীয় সাংসদেরা বেশি জেলে গেছেন। দুর্নীতির মামলায় জেলে যাওয়ার নজিরও কম নয়।
জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক। কাউকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা সরকারের নেই। সাংসদ হোন আর যেই হোন, অপরাধে জড়ালে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
১৫ বছরে জেলে যাওয়া সরকারদলীয় চার সাংসদের তিনজনই আওয়ামী লীগের। এঁরা হলেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী (টাঙ্গাইল), গোলাম মাওলা রনি (পটুয়াখালী) ও আবদুর রহমান বদি (কক্সবাজার)। অপরজন বিএনপির প্রয়াত নাসিরুদ্দিন আহমেদ পিন্টু। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তিনি দুবার গ্রেপ্তার হন।
আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ গোলাম মওলা গ্রেপ্তার হন সাংবাদিক মারধরের মামলায়। অবশ্য এর আগেই বিভিন্ন ধরনের বক্তব্যের কারণে সরকারের বিরাগভাজন হন তিনি।
জেলে যাওয়া অপর দুই সাংসদের মধ্যে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী আত্মসমর্পণ করেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে কলকাতা থেকে ঢাকায় শাহজালাল বিমানবন্দরে নামলেও পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেনি।
একই অবস্থা সাংসদ বদির ক্ষেত্রেও। দুর্নীতি দমন কমিশনের করা দুর্নীতির মামলায় আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে আদালত তা নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সংসদের কোনো বিষয় হলে বা সংসদ ভবন এলাকার মধ্য থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে স্পিকারের অনুমতি লাগে। এ ছাড়া অধিবেশন চলাকালে কোনো সাংসদ গ্রেপ্তার হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা স্পিকারকে অবহিত করে। একজন সাংসদ হলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা যাবে না এমন আইন নেই। আইন সবার জন্যই সমান।

No comments

Powered by Blogger.