দুই বিদেশী হত্যা অন্ধকারে গোয়েন্দারা

রাজধানী ঢাকা ও উত্তরাঞ্চলীয় বিভাগীয় শহর রংপুরে ৫ দিনের ব্যবধানে দুই বিদেশী নাগরিক খুনের ঘটনা নিয়ে এখনও অন্ধকারে গোয়েন্দারা। কারা কি উদ্দেশ্যে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে গোয়েন্দারা তা বের করতে পারেননি। উদঘাটন করতে পারেননি কোন ক্লু। এদিকে দুই বিদেশী  খুন নিয়ে দেশ-বিদেশে চলছে তোলপাড়। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিদেশীদের নিরাপত্তা নিয়ে চাপের মুখে পড়েছে সরকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, তারা দুই বিদেশী নাগরিক হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন সংস্থার একাধিক টিম রাত-দিন চেষ্টা করছে। কিন্তু তদন্তে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি হচ্ছে না। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, এই হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত সুনিপুণ হাতে করা হয়েছে। দুটি হত্যাকাণ্ডই একই সূত্রে গাঁথা। একই দল করেছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে না পারলেও মদতদাতা একই বলেই ধারণা করছেন তারা। একারণে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়া কিলারদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক বলেছেন, দুই বিদেশী নাগরিককে টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছে। আর টার্গেট কিলিং ঠেকানো যায় না। ফলে হত্যাকাণ্ডগুলো ঠেকানো সম্ভব হয়নি। বিদেশী নাগরিক হত্যায় গোয়েন্দাদের কোন ব্যর্থতা নেই দাবি করে আইজিপি বলেন, পুলিশের দক্ষ, অভিজ্ঞ, বিচক্ষণ কর্মকর্তারা এই ঘটনাগুলোর তদন্ত করছেন। আশা করি দ্রুত এর রহস্য উদঘাটন করা যাবে। আইজিপি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডগুলোর পর পুলিশ আরও সতর্ক হয়েছে। ইতিমধ্যে দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত সূত্রগুলো বলছে, রাজধানী ঢাকার কূটনৈতিক পাড়ায় ইতালিয়ান নাগরিক তাভেলা সিজার হত্যাকাণ্ডের পর ওই এলাকার সকল সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব ভিডিও ফুটেজের অল্প কয়েকটি স্থানে সন্দেহভাজন তিন আরোহীসহ সেই মোটরসাইকেলটিকে দেখা গেছে। তারা সম্ভাব্য যেদিক দিয়ে পালিয়ে গেছে সেসব এলাকার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কিন্তু সেসব ফুটেজে পরবর্তীতে তাদের আর পাওয়া যায়নি। বিষয়টি তাদের কাছে রহস্যজনক মনে হয়েছে। গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলছেন, সন্দেহভাজন খুনিরা ওই এলাকার আশেপাশের কোন বাসা বাড়িতে ঢুকে গেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ তাদের ঘটনাস্থলে যাওয়ার কোন ফুটেজও পাওয়া যায়নি। এদিকে রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও হত্যাকাণ্ডের পরও জোরদার তদন্ত চলছে। কিন্তু কোনভাবেই রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে পারছে না পুলিশ। জাপানি নাগরিক হোশি কুনিওর ব্যবসায়ীক পার্টনার হীরা ও ঢাকার স্থানীয় বিএনপি নেতা বিপ্লবকে গ্রেপ্তারের পর ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। কিন্তু তাদের জিজ্ঞাসাবাদেও কোন তথ্য পায়নি পুলিশ। গতকাল বিপ্লবের রিমান্ড বাতিল করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। গ্রেপ্তারকৃত হীরার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার রাজশাহী থেকে দুই ব্যাংক কর্মকর্তাকে আটক করা হয়। তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদের পর গতকাল দুপুরে ছেড়ে দেয়া হয়।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, দুই বিদেশী নাগরিক হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ বলেই মনে হচ্ছে তাদের। বাংলাদেশে নিরাপত্তা ইস্যুতে বড় ধরনের গণ্ডগোল পাকিয়ে যাদের লাভ হওয়ার কথা তারাই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, খুনিরা সাধারণ ভাড়াটে কোন খুনি নয়। তারা অনেক বেশি পেশাদার। তারা জানে কোথায় গুলি করলে মুহূর্তেই যে কোন মানুষের মৃত্যু হতে পারে। একারণে দুই বিদেশী নাগরিককে এমনভাবে গুলি করা হয়েছে যাতে তাদের বাঁচার কোন সম্ভাবনা না থাকে। সূত্র জানায়, দেশকে অস্থিতিশীল করতে এবং নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই বিদেশীদের খুনের টার্গেট নিয়ে চক্রটি মাঠে নেমেছে। এক্ষেত্রে তাদের নির্দিষ্ট কোন দেশ টার্গেট ছিল না। তারা রেকি করে যাকে হাতের কাছে পেয়েছে এবং খুন করে পালাতে পারবে তাকেই হত্যা করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ঢাকা ও রংপুরে দুই বিদেশী নাগরিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে। দুই বিদেশী নাগরিক হত্যাকাণ্ডেই থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি, র‌্যাব, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই, পুলিশের বিশেষ শাখা-এসবি এবং সরকারের দুটি বিশেষ গোয়েন্দা শাখাও কাজ করছেন। কিন্তু সবার তদন্তের ফলাফলই শূন্য। এখনও অন্ধকারে সবাই। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটনে এখন তিনটি বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। কারণ ইতালিয়ান নাগরিক সিজার তাভেলা ও জাপানি নাগরিক হোশি কুনিওর ব্যক্তিগত বা এনজিও সংক্রান্ত কোন বিরোধ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই দুই হত্যাকাণ্ডে জঙ্গি সম্পৃক্ততা কিংবা আন্তর্জাতিক বা রাজনৈতিক বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। একারণে সবাই এই তিনটি বিষয় মাথায় রেখে কাজ করছে।
সূত্র জানায়, সিজার তাভেলা হত্যাকাণ্ডের ১২ দিন পেরিয়ে গেছে। জাপানি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের পেরিয়ে গেছে এক সপ্তাহ। দুই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন না করতে পারায় সরকার রয়েছে চাপে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও পড়েছে বেকায়দায়। চাঁদপুরের এক অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক দুই বিদেশী নাগরিক হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটনে পুলিশকে কিছু সময় দিতে বলেছেন। কিন্তু একের পর এক পশ্চিমা দেশ থেকে ভ্রমণ সতর্কতা জারি হওয়ায় নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে বেকায়দায় পড়ে গেছে সরকার। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিদেশী নাগরিকদের চলাফেরা সীমিত হয়ে গেছে। বাতিল হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অনেক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সও। সাধারণ মানুষের মনেও ভয় আর আতঙ্ক দানা বেঁধে বসেছে। বিদেশী নাগরিক ও সাধারণ মানুষের মন থেকে ভয় ও আতঙ্ক কাটাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যাপক ‘দৃশ্যমান পুলিশিং’ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল গুলশানের পুলিশ প্লাজা কনকর্ড থেকে পুলিশের স্পেশ্যাল ওয়েপন অ্যান্ড ট্যাক্টিজ-সোয়াত টিমের নেতৃত্বে একটি মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। অত্যাধুনিক অস্ত্র হাতে সোয়াত টিমের সদস্যরা, ডিএমপি পুলিশ ও আর্মড পুলিশদের নিয়ে গুলশান, বারিধারা, নতুনবাজার হয়ে উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় টহল দেয়। এই মহড়ায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। তাদের ভাষ্য, দেশী-বিদেশী নাগরিকদের মন থেকে ভয় ও আতঙ্ক কাটাতেই তারা এই উদ্যোগ নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ২৮শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর গুলশান-২ এর ৯০ নম্বর সড়কে ইতালিয়ান নাগরিক সিজার তাভেলাকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
এই ঘটনার ঠিক ৫ দিনের মাথায় গত ৩রা অক্টোবর শনিবার সকালে জাপানি নাগরিক  হোশি কুনিওকে  রংপুরের মাহিগঞ্জের আলুটারী এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয়। দুই হত্যাকাণ্ডের পরই খুনিরা মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যায়।
কূটনৈতিকপাড়ায় টহলে বিজিবি
বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য রাজধানীর কূটনৈতিকপাড়া বলে খ্যাত গুলশান, বারিধারা ও বনানী এলাকায় বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা টহল দিচ্ছেন। বিজিবি পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করবে। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ মানবজমিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, পুলিশকে সহায়তা করতে ওই এলাকায় দুই প্লাটুন বিজিবি সদস্য দিনের বেলা দায়িত্ব পালন করবেন। গতকাল দিনে ওই এলাকায় বিজিবি সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছেন।
উল্লেখ্য, গুলশানে ইতালি নাগরিক সিজার তাভেলা হত্যাকাণ্ডের পর ওই এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা বাড়িয়েছে পুলিশ। বিশেষ করে গুলশান-২ নম্বর এলাকার রাস্তায় প্রবেশ ও বের হওয়ার স্থানগুলোতে প্রায় ২৩টি নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছে। বারিধারায় পুলিশের বিশেষ শাখা সোয়াতের সদস্যরা টহল দিচ্ছেন। বিজিবি সূত্র জানিয়েছে, পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত কূটনৈতিক জোনে দিনের টহল বলবৎ থাকবে।
বিএনপি নেতার রিমান্ড বাতিল
স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর থেকে জানান, জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটক বিএনপি নেতার রিমান্ড বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল রংপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু তালেব এই আদেশ দেন। একই ঘটনায় গত শুক্রবার রাজশাহী থেকে আটক দুই ব্যাংক কর্মকর্তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির অগ্রগতি নিয়ে গতকাল পর্যালোচনা বৈঠক ডাকেন রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি হুমায়ুন কবির।  এ সময় মামলার অনেক অগ্রগতি হচ্ছে বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি।
জানা গেছে, রংপুরে জাপানি নাগরিক হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ রাশেদুন্নবী খান বিপ্লব ও জাপানি নাগরিকের ব্যবসায়িক পার্টনার হুমায়ুন কবীর হীরাকে গ্রেপ্তার করে ১০ দিনের রিমান্ডে  নেয়। রিমান্ড চলাকালে বিপ্লবের স্ত্রী শিরিন আক্তার দিবা রংপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রের আদালতে তার স্বামী অসুস্থ বিধায় রিমান্ড আদেশ বাতিলের আবেদন জানান। আদালতের বিচারক আবু তালেব শুনানি শেষে বিএনপি নেতা রাশেদুন্নবী খান বিপ্লবের ১০ দিনের রিমান্ড বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পুলিশ সুপার আবদুর রাজ্জাক জানান, আপাতত আর জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন নেই বলে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
অপরদিকে একই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শুক্রবার রাজশাহী থেকে ব্র্যাক ব্যাংক কর্মকর্তা নাহিদ ও এইচএম শাহরিয়ারকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কোন তথ্য না পাওয়ায় গতকাল তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে পাবনা থেকে আটককৃত সুইট হোসেন নামের আরেকজনকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অপরদিকে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও’র মরহেদ ময়নাতদন্তের পর গত রোববার থেকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পুলিশ প্রহরায় রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. জাকির হোসেন বলেন, ময়নাতদন্তসহ লাশ নিয়ে যাওয়ার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আমরা লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য সকল প্রক্রিয়া রেশষ করে রেখেছি। তবে কবে  কোনদিন হোশি কুনিওর লাশ নিয়ে যাবে তাও বলতে পারছি না।
এদিকে জাপানি ৪ সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল সর্বশেষ হোশি কুনিওর লাশ ফরেনসিক বিভাগে তদন্ত পর্যবেক্ষণ শেষে লাশ নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না নিয়ে মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় ফিরে যান।
উল্লেখ্য, গত ৩রা অক্টোবর রংপুরের মুন্সীপাড়ার মাহিগঞ্জে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিওকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। বুকে হাতে ও ডান কাঁধে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মারা যান। এ ব্যাপারে কাউনিয়া থানার ওসি রেজাউল ইসলাম অজ্ঞাত ৩ জনের নামে মামল করলে এ ঘটনায় কুনিওর ব্যবসায়ীক পার্টনার হুমায়ন কবির হীরা ও রাশেদুন্নবী খান বিপ্লবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

No comments

Powered by Blogger.