রামপুরা প্রধান সড়কে মরণফাঁদ: কাউন্সিলর বললেন, মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে করতে হিমশিম খাচ্ছি by অরূপ দত্ত

রামপুরার ডিআইটি রোডে এ ধরনের বড় বড় গর্তের কারণে
এলাকাবাসী ও যানবাহনের যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে। এই
রোডেই অন্তত আটটি বড় গর্ত রয়েছে। ছবি-সাইফুল ইসলাম
অঝোর ধারার নয়, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। সেই বৃষ্টির পানি একটু একটু করে জমা হয়েছে রাজধানীর হাজিপাড়া পেট্রলপাম্পের পাশে ব্যস্ত সড়কের মাঝখানে সৃষ্ট বিশাল গর্তে। সঙ্গে বারোয়ারি আবর্জনা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ডিআইটি রোডে এ রকম অন্তত আটটি বড় গর্ত রয়েছে। এসব গর্তে যাতে কেউ পড়ে না যায়, তার জন্য কোনো সতর্কসংকেত বা নিরাপত্তাবেষ্টনী নেই।
এ বিষয়ে খোঁজখবর করতে গেলে সেখানকার একটি রড-সিমেন্টের দোকানের কর্মচারী বরকতউল্লাহ বলেন, ‘গর্ত নয়, এগুলো মরণফাঁদ।’ এ সময় স্থানীয় পেট্রলপাম্পের লাইনম্যান সুনীল বলেন, রাতে এলাকায় লোডশেডিং হলে এবং একই সঙ্গে রাস্তার বাতি না জ্বললে এসব গর্ত বড় বিপদের কারণ হয়ে ওঠে। বৃহস্পতিবার রাতেও এখানে রিকশা উল্টে এক আরোহীর হাত ভেঙেছে বলে সুনীল জানান।
গত শুক্রবার দুপুরে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শুধু ডিআইটি সড়ক নয়, একই ওয়ার্ডের রামপুরা, উলনসহ অন্যান্য এলাকার অলিগলির রাস্তাগুলোরও প্রায় একই দশা। বর্ষার পানি জমে চলাচলেরও প্রায় অনুপযোগী হয়ে গেছে। বেশির ভাগ রাস্তা বাড়িঘরের তুলনায় নিচু হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেও পানি জমে যায়।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর লিয়াকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সত্যিই এলাকার প্রায় সব রাস্তাই খারাপ। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, নাগরিকসেবা দেব। এখন রাস্তার এ দশার জন্য মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে করতে হিমশিম খাচ্ছি।’
এই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর (বিএনপিদলীয়) আক্কেল আলী দাবি করেন, আগে রাস্তা এতটা খারাপ ছিল না।
এর আগে গত বুধবার দুপুরে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাড্ডার দিক থেকে ও মৌচাকের দিক থেকে আসা যানবাহনে পুরো ডিআইটি রোড আটকে আছে। রামপুরা সেতুর ওপর থেকে দুই দিকেই বিশাল যানজট তৈরি হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, প্রায়ই এখানে এই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।
পূর্ব রামপুরার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন, উলনের স্কুলশিক্ষিকা রাহেলা বেগম, হাজিপাড়ার মনিহারি দোকানি আবুল কালাম যানজট সম্পর্কে একই কথা বলেন। তাঁদের মতে, ওয়ার্ডের ডিআইটি সড়কটি একমাত্র সড়ক, যে পথে বাস, ট্রাক, ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা, ঠেলাগাড়ি—সবই একযোগে চলে। এ জন্য যানজট লেগেই থাকে।
তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হাতিরঝিলের মধ্য দিয়ে যে সড়কটি গিয়ে রামপুরায় যুক্ত হয়েছে, সেটাতে বাস, ট্রাক বা ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারে না। রামপুরা থেকে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া আবুল হোটেলের বিপরীত দিকে যাওয়ার রাস্তা ব্যবহার বাড়ানোর পর সে এলাকায়ও যানজট বেড়ে গেছে। সেখানে যানজটের কারণে সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকেরা বাড়তি সমস্যায় পড়ছেন।
রামপুরা সেতুর কাছে বনশ্রী থেকে গাড়ি বেরোনোর পথটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। আগে বনশ্রী আফতাবনগর থেকে গাড়ি রামপুরা টেলিভিশন ভবনের উত্তর দিকে খালের পাশ কাটিয়ে ডানে মোড় নিয়ে বাড্ডার দিকে যেত। গত মার্চে পথ বদল করে বনশ্রী থেকে গাড়ি বেরিয়ে বাঁ দিকে মোড় নিয়ে অন্তত ২০০ গজ ঘুরে আসার ব্যবস্থা করা হয়। তাই সেখানে বাড়তি যানজট তৈরি হয়। তখন বলা হয়েছিল, এটা সাময়িক সময়ের জন্য করা হয়েছে। কিন্তু সে ব্যবস্থা এখনো রয়ে গেছে।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কুদরতউল্লাহ বলেন, আন্তসংস্থার সভায় বিষয়টি তোলা হয়েছে। দেখা যাক কী হয়। তিনি বলেন, বছর দুয়েক আগে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় মৌচাক থেকে নিকুঞ্জ পর্যন্ত প্রধান সড়ক রিকশামুক্ত করার সিদ্ধান্ত ছিল। সে বিষয়টির প্রতিও লক্ষ রাখা হচ্ছে।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি থাকলেও এলাকার বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা, ড্রেনেজ পরিস্থিতির উন্নতি করার কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন হাজিপাড়ার আবদুর রউফ, উলনের বজলুর রহমানসহ কয়েকজন বাসিন্দা। তাঁরা বলেন, নির্বাচনের আগে অন্তত পাঁচ বছর এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানো হয়নি। এবার নির্বাচনের পর মাঝে মাঝে ওষুধ ছিটানো হলেও মশার উপদ্রব কমেনি।
এসব বিষয়ে লিয়াকত আলী বলেন, সব সমস্যা কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। একটু সময় লাগবে।

No comments

Powered by Blogger.