তাদের কাছে কালাম একজন ত্রাণকর্তা

গোটা ভারত অমূল্য এক রত্ন হারিয়ে শোকস্তব্ধ। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট এপিজে আবদুল কালাম ছিলেন ‘সর্বসাধারণের প্রেসিডেন্ট’। প্রেসিডেন্ট হলেও, দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা এই মানুষটি ছিলেন মাটির খুব কাছাকাছি। তিনি ভারতকে বদলে দিয়েছিলেন। এক শক্তিশালী ভারতের রূপকার আবদুল কালাম হতদরিদ্র জনগণের ডাকে সাড়া দিতেন আপনজনের মতোই। এরকমই দুটি ঘটনা প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা পিটিআই। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় ওড়িশা প্রদেশের দূরবর্তী এক গ্রামের এক পিতৃ-মাতৃহীন অনাথ কিশোরীর রঙহীন, বিবর্ণ, কষ্টবিধুর জীবনকে তিনি পাল্টে দিয়েছেন। আজ সেই কিশোরী পরিণত তরুণী। ১০ বছর আগে ওই কিশোরী তার এইডস আক্রান্ত ভাইবোনকে নিয়ে দিশেহারা ছিলেন। তারপর কি ঘটলো তার জীবনে? ওই তরুণীর ভাষায়, আমার জন্য তিনি ছিলেন ত্রাণকর্তা। আমার ছোট ভাই ও বোন তাদের শরীরে এইচআইভি/এইডসের জীবাণু বহন করছিল। আমার আক্রান্ত সেই ভাই-বোনরা আজ বেঁচে আছে। কালাম চাচার যথাসময়ে হস্তক্ষেপকে ধন্যবাদ। তিনি না থাকলে হয়তো ওদের বাঁচাতেই পারতাম না। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। বুকটা ভেঙে যাচ্ছে কষ্টে। একবারের জন্যও তাকে আর কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেলাম না। ওই তরুণী তার নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি। কেন্দ্রপাড়া জেলার ওলাভের গ্রামের ওই তরুণী স্মৃতিচারণ করছিলেন এভাবে- ডাকপিওন ২০০৫ সালের জুন মাসে তৎকালীন প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ও ২০ হাজার রুপির একটি ড্রাফট আমাকে যখন দিলেন, আমি আনন্দে অভিভূত হয়েছিলাম। আমি কালাম চাচাকে আমার ভাইবোনের গুরুতর অবস্থার কথা জানিয়ে একটি চিঠি লিখেছিলাম। তিনি বলছিলেন, সে সময় আমার বয়স মাত্র ১১ বছর এবং আমার ভাইবোনের বয়স ৬ ও ৪ বছর। পিতা-মাতার মৃত্যু হওয়ায় তাদের দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল আমার ওপর। গণমাধ্যমে জেনেছিলাম যে, আবদুল কালাম সর্বসাধারণের প্রেসিডেন্ট। তিনি শিশুদের ভালোবাসতেন। আমি তার কাছে একটি চিঠি লিখেছিলাম। সে সময় প্রেসিডেন্ট কালামের মধ্যস্থতায় স্থানীয় প্রশাসন পরিবারটিকে রক্ষায় এগিয়ে আসে। ওই তরুণী বলছিলেন, এরপর বিভিন্ন স্থান থেকে সাহায্য আসতে শুরু করে। মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও ২০ হাজার রুপির অর্থ-সহযোগিতা বরাদ্দ করা হয়। প্রেসিডেন্টের ইশারায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারাও দয়াপরবশ হয়ে এগিয়ে এলেন। ওই তরুণী বলছিলেন, আমার ভাই ও বোনের প্রতি তারা আরও বেশি মনোযোগী হয়ে চিকিৎসা শুরু করলেন। আমার ভাইবোন গত এক দশক এইডসের বিরুদ্ধে সফলভাবে লড়াই চালিয়ে গেছে। প্রেসিডেন্টের সহযোগিতা তাদের নবজীবন দান করেছে। আমরা তার প্রয়াণে গভীরভাবে ব্যথিত। আমার মনে হচ্ছে যেন আমি আমার পরিবারেরই ঘনিষ্ঠ কোন সদস্যকে হারিয়েছি। কালামকে রামনগর জেলার এক বাসিন্দা প্রফুল্ল মিস্ত্রিও প্রয়াত প্রেসিডেন্টের উপকারের কথা স্মরণ করলেন এবং তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করলেন। আমরা এ দেশের প্রকৃত নাগরিক। কিন্তু, প্রশাসন আমাদের বাংলাদেশী হিসেবে চিহ্নিত করেছিল এবং ২০০৫ সালের ১৫ই জানুয়ারি ভারত ত্যাগের নোটিস দিয়েছিল। আমরা দ্রুত তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কালামকে পোস্ট কার্ড পাঠাই। প্রফুল্ল বলছিলেন, প্রেসিডেন্ট এ ঘটনায় হস্তক্ষেপ করলেন এবং একটি রিপোর্ট চাইলেন। এক মাস পর আমাদের বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া স্থগিত করা হলো। আমরা বিশ্বাস করি যে, ইউনিয়ন সরকার আমাদের বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছিল প্রেসিডেন্টের হস্তক্ষেপের কারণে। প্রফুল্ল মিস্ত্রির ভাষায়, তার মৃত্যু আমাদের ব্যক্তিগত ক্ষতি।

No comments

Powered by Blogger.