ফসল পানির নিচে: রাজনগরে অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দী

গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে পুকুর ও ঘের থেকে মাছ বের হয়ে
বিভিন্ন নদী ও খালে পড়েছে। এসব মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে
পড়েছেন স্থানীয় লোকজন। কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার
ডাকাতিয়া নদীর শাখা নদীতে জাল দিয়ে মাছ ধরছেন তাঁরা।
মৌলভীবাজারের কাউয়াদীঘি হাওরাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে রাজনগর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। দেড় শতাধিক হেক্টরের আউশ ধান ও আমনের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে।
এ ছাড়া জলাবদ্ধতায় চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের ৬০০ হেক্টর জমির রোপা আউশ ধানের গাছ তলিয়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।
রাজনগরের ভুক্তভোগী কয়েকজন বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে বিভিন্ন পাহাড়ি ছড়া (খাল) দিয়ে নেমে আসা ঢলে কাউয়াদীঘি হাওরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে রাজনগরের পাঁচগাঁও, উত্তরভাগ, ফতেহপুর ও মুন্সিবাজার ইউনিয়নের ওই অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গ্রামগুলোর রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। অনেক বাড়ির উঠান ও ঘরে পানি উঠেছে। এই চারটি ইউনিয়নের ১৩৫ হেক্টর জমির আউশ ধান ও ২৫ হেক্টর আমনের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। বিলম্বিত হচ্ছে রোপা আমন চাষ। পানিতে তলিয়ে থাকায় কৃষকেরা এক ফসলি জমিতে রোপা আমন লাগাতে পারছেন না।
স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধির অভিযোগ, পাউবোর মনু নদ প্রকল্পের কাউয়াদীঘি হাওরের কাশিমপুরে সেচের জন্য স্থাপিত পাম্পহাউস নিয়মিত চালু না রাখায় হাওরাঞ্চলে এই জলাবদ্ধতা হয়েছে। মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কাউয়াদীঘি হাওরে ইজারাদারদের স্বার্থে পানি আটকে রাখা হয়।
ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ৩০-৩৫টি গ্রামের ৫০০ থেকে ৬০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।’ পাঁচগাঁও ইউপির চেয়ারম্যান মিহির কান্তি দাস বলেন, হাওরে অতিরিক্ত পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আউশ-আমন ধানের খেত পানির নিচে চলে গেছে। পাম্প নিয়মিত চালু থাকলে এত পানি হতো না। ঘরের আশপাশে পানি।
রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ আজিজুর রহমান জানান, চারটি ইউনিয়নের দেড় শতাধিক হেক্টরের আউশ ও আমনের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। পানি কমে গেলে ক্ষতি কম হবে। জলাবদ্ধতায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফতেহপুর ইউনিয়ন। তবে পাউবোর যান্ত্রিক শাখার উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হুসাইন উদ্দিন সিদ্দিকী বলেন, পাম্পহাউসে আটটি পাম্পের মধ্যে সাতটিই নিয়মিত চালু আছে। যান্ত্রিক কারণে একটি বন্ধ রাখতে হয়। শুধু বিদ্যুৎ না থাকলে সেচ বন্ধ থাকে।
ভুক্তভোগী কয়েকজন কৃষক ও মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মেঘনা-ধনাগোদা প্রকল্পে ৩ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে আউশ ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে এক হাজার হেক্টর জমিতে বিআর-৪৮, ২৩, ২৮ ও ১৬ জাতের আউশ ধানের চারা রোপণ করা হয়। ওই প্রকল্পের পানি ব্যবহারকারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী সালাউদ্দিন বলেন, গত এক-দেড় মাসের টানা বৃষ্টিতে প্রকল্পে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে সেচখাল দখল ও ভরাট হওয়ায় আবদ্ধ পানি সরতে পারছে না। প্রকল্পের ফতেপুর গ্রামের কৃষকনেতা কবির হোসেন বলেন, পাউবোর তিন-চারটি জেনারেটর দীর্ঘদিন ধরে বিকল। সচলগুলোও লোডশেডিংয়ে প্রায়ই বন্ধ থাকে। দ্রুত পানিনিষ্কাশন না করায় প্রকল্পের অনেক জমির রোপা আউশ ধানের গাছ পানির নিচে। কিছু জমির ধানগাছ পচে গেছে। বিনষ্ট হয়েছে আউশের কিছু বীজতলাও। এতে কৃষকেরা বিপাকে পড়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কাইউম মজুমদার বলেন, প্রকল্পের অন্তত ৬০০ হেক্টর রোপা আউশ ধানের খেতে জলাবদ্ধতা আছে। পানি সরানোর জন্য পাউবোকে বলা হয়েছে। চাঁদপুর পাউবোর মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতাউর রহমান বলেন, জলাবদ্ধতায় প্রকল্পের কিছু জমির ধানগাছ নষ্ট হয়েছে। অনেক সেচখাল ভরাট হওয়ায় পানি সরছে না। সেচখাল দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জলাবদ্ধতা দূর করার চেষ্টা চলছে।

No comments

Powered by Blogger.