রাজধানীতে জলাবদ্ধতা অন্তহীন জনদুর্ভোগ by ইফতেখার আহমেদ টিপু

একটু বৃষ্টি হলেই দেশের প্রধান নগরীগুলোতে জলজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় দেখা দিচ্ছে চরম অচলাচস্থা। অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও পানি নিষ্কাশনের অভাবে রাজধানীতে বর্ষা হলেই জলাবদ্ধতা নিয়তির লিখন হয়ে দাঁড়ায়। ভারী বর্ষণ হলে তো কথাই নেই। জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ একের পর এক পরিকল্পনা নিলেও তাতে চোখে পড়ার মতো সুফল অর্জিত হচ্ছে না। রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, সম্প্রসারণ, খাল সংস্কার, নর্দমা ও বক্স কালভার্ট পরিষ্কারের কাজে গত চার অর্থবছরে কয়েকশ’ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। তার পরও এ বিপুল অর্থ ব্যয় জলাবদ্ধতা হ্রাসে দৃষ্টিগ্রাহ্য ভূমিকা রাখতে পারেনি। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে রাজধানীর অনেক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট। অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে ঘণ্টাখানেক বৃষ্টি হলেই রাজধানীতে যেখানে জলাবদ্ধতা দেখা দেয় সেখানে কয়েক দিন ভারী বৃষ্টিপাত হলে অবস্থা কেমন দাঁড়ায় সহজেই অনুমেয়।
রাজধানীর পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত প্রাকৃতিক খালের বেশির ভাগই বেদখল এবং ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি সরার ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। ভরাটকৃত খালগুলোর পুনরুদ্ধারের পথও প্রায় বন্ধ। খাল এমনকি নদীও বেদখল হয়ে যাচ্ছে। যারা জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত হন, সরকারের ভূমি দফতরের সেই অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে তা আত্মসাতের কৃতিত্ব দেখাচ্ছে একশ্রেণীর স্বেচ্ছাচারী। ফলে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় নগর জীবনে। অপরিকল্পিত নগরায়নের কুফল ভোগ করছে রাজধানীর মানুষ। এত মানুষের এই দুর্ভোগ যদি রাজধানীতে প্রতিবারই সৃষ্টি হয় আর এর পরেও যদি যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়া হয় তবে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে! ক্রমাগত সৃষ্টি হওয়া রাজধানীর এই জলাবদ্ধতা যেভাবে ঘটে চলেছে তা নিরসনে সঠিক উদ্যোগ নিতে হবে। কেননা একটি স্বাধীন দেশে গণতান্ত্রিক সরকার থাকতে এভাবে বৃষ্টির পানি আটকে পুরো শহরের মানুষের স্বাভাবিক গতি থমকে যাবে, তা হতে পারে না। ফলে এ অবস্থাকে কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতেই হবে। গড়ে তুলতে হবে পর্যাপ্ত ড্রেনেজ-ব্যবস্থা। পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক পাম্প বসানো, নর্দমা, কালভার্ট এবং খালগুলো পরিষ্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। আর এগুলো যত দিন না বাস্তবায়ন করা হবে, তত দিন এই দুর্ভোগের কবলে পড়তে থাকবে রাজধানীবাসী। বৃষ্টি নামলেই যানজটের সৃষ্টি হয়। এর প্রধান কারণ জলাবদ্ধতা। সামনের এক-দুই মাস ধারাবাহিক বৃষ্টি হতে পারে। জলাবদ্ধতা দূর করা না গেলে যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না। আরেকটা বিষয় খুব গুরুত্বের আমলে সঙ্গে নিতে হবে। বর্ষাকাল মানেই যেন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির মৌসুম। এ সময় এমনিতেই অনেক রাস্তা বৃষ্টি-কাদায় হয়ে যায় চলাচলের অনুপযোগী। উন্নয়নের প্রয়োজনে বেশির ভাগ সড়কই কাটা বা গর্ত করা হয়। আবার এক সময় নামকাওয়াস্তে ভরাটও করা হয়। এটা দীর্ঘদিনের চর্চা। এই অপচর্চা বন্ধ হওয়া উচিত। বর্ষাকালে এমন উন্নয়ন (?) কাজ যেন না হয় তা নিশ্চিত করা দরকার।
রাস্তায় যান চলাচলে এখনো শৃঙ্খলা আসেনি। বেশিরভাগ গাড়িই আইন মেনে চলাচল করছে না। যে যেভাবে পারছে গাড়ি চালাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকায় যান্ত্রিক গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে রিকশাও। অথচ ট্রাফিক আইন মানলেই যানজটের সমস্যা অর্ধেক কমিয়ে আনা সম্ভব। বছরের পর বছর ধরে সামান্য বৃষ্টিতেই এ নগরীর অধিকাংশ রাস্তায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। দুর্বল ও অপ্রতুল পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাই এর প্রধান কারণ। কর্তৃপক্ষকে সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। নাগরিকদের ভোগান্তি দূরীকরণে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অধীনে অতি সহজেই রাজধানীর মধ্যকার লেকগুলোকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রয়োজনীয় খননকাজ করে গভীর করতে হবে। গুলশান, ধানমণ্ডি, বনানী ও উত্তরার লেক তদুপরি হাতির ঝিলের মতো প্রাকৃতিক জলাধারগুলোকে রক্ষা করার মাধ্যমেও জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে অগ্রগতি অর্জন করা যায়। রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার এবং ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনকে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচনের আগে দুই মেয়র জলাবদ্ধতা সমাধানে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এর বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে। দখলকৃত খালগুলো উদ্ধারের উদ্যোগ নিতে হবে জরুরিভিত্তিতে। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ ঘটিয়ে দ্রুত পানি নিষ্কাশন নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক দৈনিক নবরাজ এবং চেয়ারম্যান, ইফাদ গ্রুপ

No comments

Powered by Blogger.