ফের পালিয়ে শিফা খালেদের ঘরে by ওয়েছ খছরু

প্রেমিক খালেদকে অপহরণে  ফাঁসিয়ে পিতার জিম্মায় চলে গিয়েছিল সিলেটের প্রবাসীবধূ ফারজানা আক্তার শিফা। পিতার শিখিয়ে দেয়া বুলি আওড়িয়ে আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিল, প্রেমিক খালেদ তাকে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অপহরণ করেছিল। কিন্তু এই শিফা একমাস ১০ দিনের মাথায় সব কিছু মিথ্যা প্রমাণ করে এবার পিতার ঘর ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছে প্রেমিক খালেদের বাড়িতে। সঙ্গে নিয়ে গেছে তার কোলের সন্তান সাফিকেও। পালিয়ে আসার পর শিফাকে বরণ করে নিয়েছে খালেদের পরিবার। খালেদের সঙ্গে শিফার প্রেম, অভিসার, বিয়ে ও পালিয়ে যাওয়ার ঘটনার পর ফের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে এলাকায়। সিলেটের মোগলাবাজার এলাকার কান্দেবপুর গ্রামের সৌদিপ্রবাসী মজিরউদ্দিন তালুকদারের সঙ্গে গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষণাবন্দ গ্রামের আবদুল মান্নানের মেয়ে ফারজানা আক্তার শিফার বিয়ে হয় ১১ বছর আগে। বিয়ের পর মজির ও শিফার সংসারে দুটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। স্বামী প্রবাসে থাকায় প্রায় তিন বছর আগে পারিবারিক সিএনজি চালক একই এলাকার কান্দিয়ারচর গ্রামের মুজিবুর রহমানের ছেলে খালেদের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর এই প্রেম একপর্যায়ে রূপ নেয় অভিসারে। স্বামীর অবর্তমানে ফারজানা আক্তার শিফা প্রেমিক খালেদের সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করে। আর এই প্রেমের পরিণতি হিসেবে গত ৯ই জুন ফারজানা আক্তার শিফা তার চার বছরের শিশু সন্তান সাফিকে নিয়ে প্রেমিক খালেদের সঙ্গে পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার দিনই শিফা সিলেটের আদালতের অ্যাডভোকেট আনসার খানের কাছে এফিডেভিট করে পূর্বের স্বামী সৌদি প্রবাসী মজিরউদ্দিন তালুকদারকে তালাক প্রদান করে। একই সঙ্গে ওই দিন শিফা আরেকটি এফিডেভিট করে প্রেমিক খালেদকে বিয়ের প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করে। এরপর শিফা প্রেমিক খালেদের সঙ্গে পালিয়ে যায় গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকায়। পালিয়ে যাওয়ার পর ১৫ই জুন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী অফিসে গিয়ে কাবিনের মাধ্যমে বিয়ে সম্পাদন করে। ওদিকে, শিফা পালিয়ে যাওয়ার পর তার পিতা আবদুল মান্নান সিলেটের মোগলাবাজার থানায় অপহরণ মামলা করেন। ওই মামলায় তিনি দাবি করেন, খালেদ তার মেয়েকে জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে গেছে। মামলা  করার পর সিলেটের মোগলাবাজার থানার এসআই স্বপন কান্তি দাশসহ শিফার পিতা আবদুল মান্নান ১৭ই জুন রাতে গাজীপুর কোনাবাড়ির কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশের গলির ভাড়াটে ঘর থেকে শিফাকে উদ্ধার করেন। এ সময় পুলিশ শিফার প্রেমিক খালেদকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের দিন শিফা বারবার পুলিশকে জানিয়েছে, ‘খালেদ তার প্রেমিক ছিল। এখন স্বামী। পূর্বের স্বামী মজিরউদ্দিন তালুকদারকে ডিভোর্স দিয়ে সে পছন্দের মানুষ খালেদকে বিয়ে করেছে।’ এ সময় পিতার সঙ্গেও তর্কে লিপ্ত হয় শিফা। পরে পুলিশ তাদের সিলেটে নিয়ে আসে। এবং ডাক্তারী পরীক্ষার পর ২১শে জুন শিফাকে আদালতে হাজির করে। আর ১৮ই জুন অপহরণ মামলায় প্রেমিক খালেদকে আদালতের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হয় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে। শিফা আদালতে উপস্থিত হয়ে খালেদের বিরুদ্ধে বক্তব্য প্রদান করে। শিফা জানায়, ‘নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে খালেদ তাকে অপহরণ করেছে।’ আদালতে দেয়া শিফার জবানবন্দি গ্রহণে তার মতামতের ভিত্তিতেই পিতা আবদুল মান্নানের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয় শিফাকে। এরপর আবদুল মান্নান সিলেটের মোগলাবাজার থানা পুলিশের কাছ থেকে মুচলেকার মাধ্যমে দুটি পুত্র সন্তান মাহি ও সাফিকে নিয়ে যান। এরপর থেকে শিফা তার পিতার বাড়িতেই বসবাস করছিলেন। সৌদি প্রবাসী মজিরউদ্দিন তালুকদারের স্বজনা জানিয়েছেন, এতবড় অঘটনের পরও দুটি সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে পূর্বের স্বামী মজিরউদ্দিন সব কিছু ভুলে যেতে বসেছিলেন। শিফাকে ভুল পথ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য মানবিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে দুটি পরিবার এক হওয়ার চেষ্টায় ছিল। সৌদিতে থাকা মজিরউদ্দিনও ক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত করছিলেন। এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার সকালে ফারজানা আক্তার শিফা ফের পিতা আবদুল মান্নানের হেফাজত থেকে পালিয়েছে। সকাল ১১টার দিকে চার বছরের শিশুপুত্র সাফিকে নিয়ে খালেদের বাড়িতে উঠে শিফা। আর খালেদের পরিবারও শিফাকে বরণ করে নেয়। এদিকে, শিফার প্রেমিক খালেদের গ্রাম থেকে দুই কিলোমিটার দূরে শিফার প্রবাসী স্বামী মজিরউদ্দিন তালুকদারের বাড়ি। শিফা পালিয়ে খালেদের বাড়িতে এসেছে এমন খবর রটে গেছে এলাকায়। কেউ কেউ গিয়ে শিফাকে বাড়িতে দেখেও এসেছেন। কথাও বলেছেন শিফার সঙ্গে। শিফার পিতা আবদুল মান্নান গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘শিফা গত মঙ্গলবার শিশুপুত্র সাফিকে নিয়ে পালিয়েছে। আর পালিয়ে সে খালেদের বাড়িতে গেছে। পরে খবর নিয়ে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন শিফা খালেদের বাড়িতে আছে।’ তিনি বলেন, ‘শিফাকে অনেক বুঝালাম। বুঝলো না। এবারও সে ভুল করলো।’ তিনি বলেন, ‘শিফা পালিয়ে যাওয়ার পর তিনি থানায় কোন জিডি করেননি।’ কেন করেন নি প্রশ্ন করা হলে বলেন, ‘করেই বা কি লাভ। শিফা তো আর বুঝে না।’ এদিকে, এক মাস ১০ দিন ধরে শিফা অপহরণ মামলায় কারাগারে রয়েছেন প্রেমিক সিএনজি চালক খালেদ। ইতিমধ্যে খালেদের জামিনের জন্য সিলেটের কোর্টে দুই দফা আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু জামিন হয়নি। এ কারণে এখন শিফা আদালতে এসে প্রেমিক খালেদের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। খালেদের মামা আবদুর রব গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘শিফা পালিয়ে এলে যদি খালেদের মঙ্গল হয় তাহলে শিফা পালিয়েছে ধরে নেন। আমরা এখন খালেদের জামিন নিয়ে ভাবছি। কারণ, সে বিনা দোষে কারান্তরীণ রয়েছে।’ ওদিকে, শিফা অপহরণ  মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিলেটের মোগলাবাজার থানার এসআই স্বপন কান্তি দাশ গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘শিফা পালিয়ে খালেদের বাড়িতে এসেছে-এ খবর তিনি পেয়েছেন। তবে, তিনি খালেদের বাড়িতে যাননি। তিনি বলেন, শিফা আদালতে বলেছে- তাকে অপহরণ করা হয়েছে। এখন সে প্রেমিক খালেদের বাড়িতে চলে আসায় মামলায় নতুন মোড় নেবে। তদন্তের মাধ্যমে সব কিছুর খোলাসা হবে বলে জানান তিনি।
ফেঁসে যেতে পারেন আবদুল মান্নান: শিফার প্রেম, ডিভোর্স, বিয়ে, পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ফেঁসে যেতে পারেন শিফার পিতা আবদুল মান্নান। এর কারণ শিফার স্বামী মজিরউদ্দিন তালুকদার শিফাকে বিয়ের পর থেকে সৌদি আরবে রয়েছেন। সৌদি থেকে তার কষ্টার্জিত সকল উপার্জন পাঠানো হয় শিফার কাছেই। আর ওই টাকা শিফা ও তার পিতা লুটেপুটে খেয়েছেন এমন অভিযোগ করেছেন প্রবাসী মজিরের পরিবারের সদস্যরা। তারা জানান, শিফা পালিয়ে যাওয়ার পর তারা সাফিকে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। মাহি ও সাফির পিতা হচ্ছেন সৌদি প্রবাসী মজিরউদ্দিন তালুকদার। শিফা আদালত থেকে পিতার জিম্মায় যাওয়ার পর সিলেটের মোগলাবাজার থানা থেকে মুচলেকার মাধ্যমে নিজ জিম্মায় মাহি ও সাফিকে নিয়েছিলেন নানা আবদুল মান্নান। এখন শিফা ছোট ছেলে সাফিকে নিয়ে পালিয়েছে। পরিবারের সদস্যরা জানান, ‘শিফা কোথায় আসে সেটি তাদের দেখার বিষয় নয়। তারা দুটি সন্তানকে ফিরিয়ে দিতে পুলিশের কাছে আবদার জানাবেন।’

No comments

Powered by Blogger.