ফাঁসিতে ঝুলতেই হলো মেমনকে by সৌম্য বন্দে্যাপাধ্যায়

ইয়াকুব মেমন
নজিরবিহীন আইনি লড়াইয়ের পর গত বৃহস্পতিবার সকালে ফাঁসি হয়ে গেল মুম্বাই বিস্ফোরণের অন্যতম অভিযুক্ত ইয়াকুব মেমনের। মহারাষ্ট্রের নাগপুর শহরের কেন্দ্রীয় কারাগারে ভোর সাড়ে ছয়টায় ফাঁসিতে ঝোলানো হয় ৫৩ বছরের এই সাবেক চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে।
মুম্বাইয়ের বিভিন্ন এলাকায় ১৯৯৩ সালের ১২ মার্চ প্রায় একই সময়ে ঘটা মোট ১৩টি মারাত্মক বিস্ফোরণে ২৫৭ জন নিহত ও ৭১৩ জন আহত হয়েছিলেন। ইয়াকুব ছিলেন সেই ঘটনার অন্যতম পরিকল্পনাকারী। ২০০৬ সালে আদালত ইয়াকুবসহ ১২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
দীর্ঘ ২২ বছর ধরে চলা এই মামলার শেষ দুই দিন নাটকীয় হয়ে ওঠে ঘটনার ঘনঘটায়। বিশেষ আদালতের রায় সুপ্রিম কোর্ট বহাল রাখলে রায় পর্যালোচনার আবেদন জানান ইয়াকুব। পর্যালোচনার পরেও আদালত রায় অপরিবর্তিত রাখলে ইয়াকুব প্রাণভিক্ষার আবেদন জানান রাষ্ট্রপতির কাছে। রাষ্ট্রপতি সেই আরজি খারিজ করে দিলে তিনি আবার রায় পর্যালোচনার দাবি জানান। ১০ দিন ধরে চলা সেই প্রকাশ্য পর্যালোচনাতেও ব্যর্থ হয়ে ইয়াকুব দাখিল করেন ‘কিউরেটিভ পিটিশন’। এরপর সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির মধ্যে পদ্ধতিগত বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দিলে কিউরেটিভ পিটিশনের দায়িত্ব তিন বিচারপতির এজলাসে পাঠানো হয়। বুধবার সন্ধ্যায় তিন বিচারপতি প্রাণদণ্ড বহাল রাখলে ইয়াকুব আবার রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানান। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় গভীর রাতে আবেদন অগ্রাহ্য করেন। ইয়াকুবের আইনজীবীরা মাঝরাতে সুপ্রিম কোর্টের অন্যতম বিচারপতি দীপক মিশ্রর শরণাপন্ন হয়েছিলেন। রাত তিনটা থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত শুনানির পর বিচারপতি আবেদন খারিজ করে দিলে নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী গতকাল সকাল সাড়ে ছয়টায় ফাঁসি দেওয়া হয় ইয়াকুবকে। মিছিল না করা, মৃতদেহের ছবি প্রচারমাধ্যমে না দেওয়া ও কবরস্থানে স্মৃতি মিনার না গড়ার শর্তে ইয়াকুবের মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
ইয়াকুবের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা নিয়ে ব্যাপক বিবৃতির লড়াই চলেছে। হায়দরাবাদের মজলিস ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন দলের নেতা লোকসভা সদস্য আসাউদ্দিন ওয়াইসি বলেন, রাজীব গান্ধীর খুনি, বাবরি মসজিদ ধ্বংসকারী বা গুজরাট দাঙ্গার খলনায়কদের ফাঁসি হলো না। অথচ ইয়াকুবকে মারা হলো। কংগ্রেস সাংসদ দিগ্বিজয় সিং ও শশী থারুর বলেন, সরকার দল, ধর্ম ও বর্ণ-নির্বিশেষে সন্ত্রাসীদের ফাঁসি দিয়ে দেখাক তারা সবার ক্ষেত্রে ন্যায় করে।
ইয়াকুবকে ধরা হয়েছিল নাকি তিনি আত্মসমর্পণ করেছিলেন, সেই বিতর্কের চূড়ান্ত মীমাংসা হয়নি। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সাবেক কর্তা বি রামনের ধারণায় ইয়াকুব নেপালে ভারতীয় কর্তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন তদন্তে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে। যদিও তদন্তকারীরা তা অস্বীকার করেন।
অ্যামনেস্টির নিন্দা: ইয়াকুব মেমনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গতকাল এক বিবৃতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘটনাটিকে নিষ্ঠুর ও অমানবিক হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটি।

No comments

Powered by Blogger.