পাক-ভারত বৈঠক নিয়ে সংশয়: দিল্লিতে কাশ্মিরী নেতা গ্রেফতার

দিল্লি যাওয়ার আগে শ্রীনগর বিমানবন্দরে সমর্থকদের উদ্দেশে
বিজয় চিহ্ন প্রদর্শন করেন শাবির আহমদ শাহ। দিল্লিতে
অবতরণের পর তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ : ইন্টারনেট
ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের শীর্ষ স্বাধীনতাকামী নেতা শাবির আহমদ শাহকে গতকাল ভারতীয় পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পাকিস্তান ও ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠানের আগে গতকাল দিল্লি বিমানবন্দরে অবতরণ করার পর তাকে ভারতীয় পুলিশ গ্রেফতার করে। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপীয় বৈঠকের দিন যতই সামনে আসছে ততই যেন অস্থিরতা ও উত্তেজনা বাড়ছে। কাশ্মিরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের পাক হাইকমিশনে আমন্ত্রণ জানানোকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে আদৌ বৈঠক হবে কি না তা নিয়ে শুরু হয়েছে সংশয়। বিতর্কের কেন্দ্রে কাশ্মিরের হুরিয়ত নেতারা। কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী জামিল আহমদ জানান, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের নিরাপত্তা উপদেষ্টা সারতাজ আজিজের সাথে বৈঠক করতে শাবির আহমদ শাহ গতকাল ভারত অধিকৃত কাশ্মির থেকে বিমানে নয়াদিল্লি আসেন। শাবির শাহ ও তার দুই সহকর্মীকে নয়াদিল্লির পুলিশ বিমানবন্দর থেকে আটক করে গাড়িতে করে নিয়ে যায়। জামিল আহমদকেও পুলিশ আটক করেছে। সারতাজ আজিজের আজ রোববার দিল্লি আসার কথা।
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী নেতাদের সাথে পাকিস্তানিদের নেতাদের বৈঠক করার বিরোধী নয়াদিল্লি। ভারতের পুলিশ নয়াদিল্লিতে কাশ্মিরি নেতা শাবির শাহের গ্রেফতারের কথা নিশ্চিত করেছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার তিনজন কাশ্মিরি স্বাধীনতাকামী নেতাকে গৃহবন্দী করে ভারত। পরে অবশ্য তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র কাজী খালিলুল্লাহ জানান, ‘ভারতের সাথে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের আড়ে হুররিয়াত নেতাদের সাথে পাকিস্তানের আলোচনা করা একটি স্বাভাবিক নিয়ম, এতে অস্বাভাবিক কিছুই নেই।’ গত শুক্রবার ভারত বলে, পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সারতাজ আজিজ তার ভারতীয় প্রতিপক্ষ অজিত দোভালের সাথে বৈঠক করতে নয়াদিল্লি সফরকালে কাশ্মিরের সর্বদলীয় হুররিয়াত কনফারেন্সের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করা উচিত হবে না। তারা এ ধরনের বৈঠক করা সঠিক নয় বলে উল্লেখ করে। তবে পাকিস্তান দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এ ভারতীয় পরামর্শকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
আজিজ-দোভাল বৈঠক নিয়ে সংশয়
এ দিকে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপীয় বৈঠকের দিন যতই সামনে আসছে ততই যেন অস্থিরতা ও উত্তেজনা বাড়ছে। কাশ্মিরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের পাক হাইকমিশনে আমন্ত্রণ জানানোকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে আদৌ বৈঠক হবে কি না তা নিয়ে শুরু হয়েছে সংশয়। বিতর্কের কেন্দ্রে কাশ্মিরের হুরিয়ত নেতারা।
সীমান্তে গোলাগুলি ও কাশ্মির নিয়ে কূটনৈতিক অচলাবস্থা উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের আগে পাক-ভারত উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। গত জুলাই মাসে রাশিয়ায় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার বৈঠককে সম্পর্ক উন্নয়নের পথে বিরাট অগ্রগতি বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু তার পর থেকেই দুই দেশের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
গত বছরের জুলাইয়ে স্বাধীনতাকামী নেতাদের সাথে বৈঠক করার কারণেই ভারত পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের আলোচনা বাতিল করে দিয়েছিল। এবারো বৈঠকের ঠিক আগে ভারতে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার আবদুল বাসিত তিন হুরিয়ত নেতাকে দিল্লি আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সারতাজ আজিজের সাথে বৈঠকের জন্যই এ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ফলে দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের বৈঠকের আগে অথবা পরে কাশ্মিরের স্বাাধীনতাকামী নেতাদের সাথে কোনো বৈঠক ভারতের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না বলে গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে ুব্ধ ভারত সরকার। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ গত শুক্রবার এ হুঁশিয়ারি জানান। তবে পাকিস্তান সে কথার কোনো পাত্তাই দেয়নি। শুক্রবার পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় বসেন। ওই আলোচনার পরই পাকিস্তান জানায়, কাশ্মির নিয়ে ভারতের চোখ রাঙানিতে তাদের কিছু যায় আসে না। হুরিয়ত নেতা শাবির শাহও জানিয়েছেন, ২৩ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টায় সারতাজ আজিজের সাথে তাদের বৈঠক হবে। সারতাজ আজিজ আজ দিল্লি আসবেন। সোমবার ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সাথে তার বৈঠক হওয়ার কথা। কিন্তু বারবার বলা সত্ত্বেও গতকাল পর্যন্ত আজিজের কর্মসূচি সম্পর্কে কিছুই জানায়নি পাকিস্তান সরকার।
আমি দিল্লি যেতে প্রস্তুত : সারতাজ আজিজ
পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সারতাজ আজিজ গতকাল শনিবার বলেন, হুররিয়াত নেতাদের সাথে তার পরিকল্পিত বৈঠক নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ সত্ত্বেও তিনি তার ভারতীয় প্রতিপক্ষের সাথে আলোচনার জন্য দিল্লি যেতে প্রস্তুত রয়েছেন। সরতাজ আজিজ গতকাল সকালে ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় মিডিয়ার বিরুদ্ধে বিনা কারণে বিতর্ক সৃষ্টির অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে আমি এখনো এনএসএ আলোচনার জন্য বিনা শর্তে দিল্লি যেতে প্রস্তুত আছি।’ ভারত রোববারের বৈঠকটি ‘কার্যত বাতিল করেছে’ উল্লেখ করে বলেন, ‘সবসময়ের মতো ভারত তার মিডিয়ার মাধ্যমে তার কূটনীতির একটি দিক পরিচালনা করছে।’ গত শুক্রবার ভারত পাকিস্তানকে বিরল এ নিরাপত্তা বৈঠকের প্রাক্কালে কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী নেতাদের সাথে বৈঠক না করার আহ্বান জানায়। এতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।

No comments

Powered by Blogger.