খুনির প্রেমে উতলা যে তরুণী

ভিকতোরিয়া তাঁর মনের মানুষটিকে আদর করে ‘আন্দার্স’ বলে ডাকেন। এটি নামের প্রথম অংশ। প্রতি সপ্তাহে চিঠি দেন তাঁকে। প্রেমিকের জন্য অপেক্ষা করবেন, এ প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। অন্য দশটি প্রেমকাহিনির মতো এটি স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারত, ব্যতিক্রম এখানে প্রেমিক। তিনি নরওয়ের সেই কুখ্যাত গণহত্যার খলনায়ক আন্দার্স বেরিং ব্রেইভিক।
২০১১ সালের ১২ জুলাই নরওয়ের উতয়া দ্বীপে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে ৭৭ জনকে হত্যা করেন ব্রেইভিক। এ ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হলে ব্রেইভিকের ২১ বছরের কারাদণ্ড হয়। বর্তমানে কঠোর নিরাপত্তায় ঘেরা কারাগারে সাজা ভোগ করছেন তিনি।
এমন এক ঘৃণ্য খুনিকে ২০ বছরের এক তরুণী মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসলে কৌতূহল জাগাটা স্বাভাবিক। ভিকতোরিয়া সুইডেনের নাগরিক। প্রকৃত নাম প্রকাশ করেননি তিনি। স্টকহোমের এক হোটেলের লবিতে বসে তিনি যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন মুখে বারবার ‘প্রিয়তম আন্দার্স’ উচ্চারিত হয়।
সুইডেনের এক ছোট্ট শহরের মেয়ে ভিকতোরিয়া। অনেক সাহস। ব্রেইভিকের সাজা কমাতে প্রয়োজনীয় যেকোনো কিছু করতে তিনি প্রস্তুত। প্রেমিকের বন্দিদশা তাঁর কিছুতেই ভালো লাগছে না।
প্রেমিককে এভাবে বিচ্ছিন্ন করে রাখা নিয়ে ঘোর আপত্তি আছে ভিকতোরিয়ার। তাঁর ভাষায়, এটা নির্যাতন। ভিকতোরিয়ার দাবি, আন্দার্স অসহায় অবস্থায় আছেন বলে তাঁর প্রতি ভালোবাসা আরও বেড়ে গেছে।
শারীরিক কারণে বর্তমানে বেকার ভিকতোরিয়া তাঁর প্রেমিকের মনোবল বাড়াতে চিঠি লিখেন। জানালেন, আন্দার্সের কাছে ১৫০ টির মতো চিঠি লিখেছেন তিনি। এ ছাড়া গাঢ় নীল রঙের একটি টাইসহ ছোট ছোট উপহারও পাঠিয়েছেন। বিচারকাজ চলার সময় ব্রেইভিক মাঝে মাঝে টাইটি পরে আদালতে গেছেন।
ভিকতোরিয়ার কাছে ব্রেইভিক দুটি চিঠি পাঠিয়েছেন। অন্য চিঠিগুলো কর্মকর্তারা কাটছাঁট করার নাম করে আটকে দিয়েছে বলে ভিকতোরিয়ার অভিযোগ।
ভিকতোরিয়ার দাবি, ২০০৭ সালে অনলাইন গেম খেলার সময় আন্দার্স বেরিং ব্রেইভিকের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। দুই বছর পর তাঁদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সম্ভবত ওই সময় আন্দার্স হামলার ফন্দি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তবে ভিকতোরিয়ার তরফ থেকে প্রেমময় আবেগটি ছিল বলেই তাঁর দাবি।
তবে ব্রেইভিকের জন্য পাগল তরুণীর তালিকায় আরও অনেকে আছেন। এক সাপ্তাহিক পত্রিকার খবরে জানানো হয়, গত বছর ব্রেইভিক কমপক্ষে ৮০০ চিঠি পেয়েছেন তাঁর নারী অনুরাগীদের কাছ থেকে। ২০১২ সালে তখন তাঁর বিচার চলছিল, তখন ১৬ বছরের এক মেয়ে তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।
একজন খুনির জন্য ভিকতোরিয়ার কেন এমন প্রেম?
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েসলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক আমান্ডা ভিকেরি বলেন, অনেক মেয়ে ভয়ংকর অপরাধী এমন ছেলেদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে নিজেদের পাদপ্রদীপের আলোয় আনতে চায়। মানুষ তাঁকে নিয়ে আলোচনা করবে, এটাই তাঁর জন্য ভালো লাগা আর আনন্দের বিষয়।
ভিকতোরিয়ার মত, তিনি নামের জন্য বা মানুষের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য আন্দার্সকে ভালোবাসেন না। এই সম্পর্কের জন্য তিনি চড়া মূল্যও দিয়েছেন। বোন তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বলেছেন, ‘তুমি আমার কাছে মৃত।’ বন্ধুদের সঙ্গেও দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে ভিকতোরিয়ার। তবে এসব নিয়ে তাঁর মাথাব্যথা নেই।
ভালোবেসে যাওয়ার প্রত্যয়ে ভিকতোরিয়া বলেন, ‘আমার মনে হয় আন্দার্স আর ব্রেইভিক—দুটি সত্তাকে আমার আলাদা করে ফেলতে হবে। আন্দার্স আমার সেই পুরোনো বন্ধু। আর ব্রেইভিক সেই ব্যক্তি যিনি ওই সব কাজগুলো করেছেন।’ প্রিয়তম আন্দার্সকে নিয়ে ভিকতোরিয়ার শেষ কথা, ‘আমি প্রতিদিন তাঁকে আরও বেশি মিস করছি। আমার ধারণা, আমার আবেগ আরও প্রগাঢ় হবে।’

No comments

Powered by Blogger.