বন্যায় ফসলের সর্বনাশ by সৈকত দেওয়ান ও পলাশ বড়ুয়া

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে খাগড়াছড়ি জেলার চারটি উপজেলার নিচু এলাকা। ২১ আগস্ট বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও অনেক জায়গায় ফসলের খেত এখনো পানির নিচে। ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা না গেলেও পাহাড়ি ঢলে বহু এলাকার আমন খেত নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা।
২১ আগস্ট সকালে সদর উপজেলার বিজিতলা, গড়গর্য্যাছড়ি ও ঘাটপাড়া গ্রামে ঘুরে বন্যার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি চোখে পড়েছে। চেঙ্গী নদীর তীরবর্তী এসব এলাকার বেশির ভাগ ফসলের খেত পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। এ কারণে প্রবল বর্ষণে সময় সৃষ্ট হয়েছে পাহাড়ি ঢল। পাশাপাশি আছড়ে পড়েছে চেঙ্গী নদীর স্রোত। ফলে এখানকার বেশির ভাগ আমনের খেত পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। কোথাও জমির চারা ভেসে গেছে, আবার কোথাও পলি পড়ে ঢেকে গেছে জমি। এ মৌসুমে আর আমন চাষ করতে পারবেন না, এমন আশঙ্কা করছেন এখানকার কৃষকেরা।
কথা হয় গড়গর্য্যাছড়ি গ্রামের কৃষক দিলীপ কুমার চাকমার (৪৫) সঙ্গে। তিনি জানান, এবার তিন কানি পরিমাণ জমিতে আমনের চাষ করেছিলেন তিনি। বন্যায় তাঁর ফসলের খেত পলিতে সম্পূর্ণ ঢেকে গেছে। এতে খেতে লাগানো চারা নষ্ট হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
বন্যায় জেলার ক্ষয়-ক্ষতির হিসাব পাওয়া না গেলেও বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতির চিত্র তুলে ধরেছেন। সদর উপজেলার পাশাপাশি দীঘিনালা, মহালছড়ি ও মাটিরাঙ্গার অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার আমন খেতের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তাঁরা।
খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম জানান, বন্যায় খাগড়াছড়ি পৌরসভার অধিকাংশ নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। দুর্গত মানুষের আশ্রয় দানের জন্য তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়েছে। আশ্রয় নেওয়া দুর্গত মানুষের জন্য গত বৃহস্পতিবার রাতে খাবারেরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তিনি আরও জানান, একটানা বর্ষণে ২০ আগস্ট সকালে চেঙ্গী নদীর পানি নদীর পাড়ের সমান্তরালে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে বহু স্থানে ফসলের খেত ভেসে গেছে। শহরের মুসলিমপাড়া, বাঙ্গালকাটি, খবংপুড়িয়া ও রাজ্যমনি এলাকা কোমরপানিতে ডুবে গেছে। গত শুক্রবার বৃষ্টি থামার পর পানি নেমে গেলেও নিচু এলাকাগুলো এখনো জলমগ্ন হয়ে আছে।
সদর উপজেলার বইরে দীঘিনালা, মহালছড়ি ও মাটিরাঙ্গা থেকেও বন্যায় ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। এসব এলাকায় বহু গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। ডুবে গেছে ঘরবাড়ি ও ফসলের খেত।
দীঘিনালা উপজেলায় কয়েক হাজার ঘরবাড়ি ও ফসলের খেত বন্যায় ডুবে গেছে। উপজেলার মেরুং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বলেন, কেবল মেরুং ইউনিয়নের এক হাজার পরিবার বন্যাকবলিত হয়েছে। হাজার খানেক ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। মাইনী নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
দীঘিনালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহিনুর ইসলাম জানান, উপজেলার ৫৭০ হেক্টর আমন, ৪৮ হেক্টর আউশ ও ১৮ হেক্টর সবজির খেত বন্যায় নষ্ট হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে।
জেলার মহালছড়ি উপজেলা থেকেও বন্যায় ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। উপজেলার মাইসছড়ি ইউপির চেয়ারম্যান শান্তশীল চাকমা জানান, এই ইউনিয়নের অন্তত শ খানেক ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে যায়। কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার পানি ধীরে ধীরে নামছে। ফলে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিচ্ছে। এতে আমন চাষে ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
মাটিরাঙ্গা উপজেলার তবলছড়ি, তাইন্দং ও বর্নাল—এই তিন ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে বলে জানান বর্নাল ইউপির চেয়ারম্যান আলী আকবর। বন্যার কারণে মাটিরাঙ্গা-তানাক্কাপাড়া সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে পানি নেমে গেলেও বন্যায় খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের আমন খেতের ক্ষতি হয়েছে। সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমা জানান, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বিভিন্ন দুর্গত এলাকা ঘুরে দেখেছেন তিনি। উপজেলার কৃষিজমির পাশাপাশি বহু পুকুরও বন্যায় তলিয়ে গেছে বলে জানান তিনি। এসব এলাকার আমনের জমি দুদিন ধরে পানির নিচে রয়েছে।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান প্রথম আলোকে জানান, বন্যাদুর্গত লোকজনকে সহায়তা করার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে চাল, ডাল ও চিড়া বিতরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনকে।
টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে খাগড়াছড়ির বেশ কয়েকটি উপজেলার ফসলের খেত। ​ভেসে গেছে খেতে লাগানো আমনের চারা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পাকা আউশ ধানের ছড়া দেখছেন দুই কৃষক। ছবিটি গতকাল খাগড়াছড়ি শহরের কালাডেবা এলাকা থেকে তোলা l নীরব চৌধুরী

No comments

Powered by Blogger.