ক্ষমতাসীন দলে শুদ্ধি অভিযান: ভেতরে ভেতরে নাখোশ অনেকে by আবু সালেহ আকন

অভ্যন্তরীণ কোন্দল ঠেকাতে এবং ইমেজ উদ্ধারের জন্যই ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। এরই অংশ হিসেবে বাছাই করে দলের ভেতরে থাকা অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা। একাধিক সূত্র জানায়, শীর্ষ মহলের নির্দেশমতোই অভিযান চলছে। এরই মধ্যে এ অভিযানের সুফলও এসেছে অনেক। ক্ষমতাসীন দলের যেসব সদস্য অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত, তাদের অনেকেই আপাতত কিছুটা শান্ত। বিশেষ করে গত কয়েক দিনে অভ্যন্তরীণ কোন্দল একেবারে শূন্যের কোটায় নেমেছে। যারা গুরুতর অপরাধে জড়িত তাদের অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছে। গত কয়েক দিনে অন্তত পাঁচজন দলীয় নেতাকর্মী ক্রসফায়ার ও বন্দুকযুদ্ধে নিহত এবং দুই নেতা গুমের পর ক্ষমতাসীন দলের যেসব নেতাকর্মী সন্ত্রাসে জড়িত তাদের অনেকেই এখন চরম আতঙ্কে আছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এ রকম অনেককে থানায় ডেকে নিয়ে সাবধান করে দেয়া হয়েছে। এ দিকে এ ঘটনায় দলের অভ্যন্তরে বিশেষ করে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই নেতাকর্মী নিহতের প্রতিবাদ করে আসছেন। এ ঘটনায় দলের অনেকে নাখোশ।
পাঁচ দিনের ব্যবধানে গাজীপুর, কুষ্টিয়া, মাগুরা ও রাজধানীতে র‌্যাব ও পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ ও ‘ক্রসফায়ারে’ ক্ষমতাসীন দলের চার নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীতে নিহত হাজারীবাগ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম আরজু রয়েছেন। কুষ্টিয়ায় ১৫ আগস্টের শোক র‌্যালিতে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত সবুজ হত্যার আসামি জাকির মঙ্গলবার মধ্য রাতে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। মাগুরায় আজিবর ও বাড্ডায় দলীয় তিন নেতাকর্মী হত্যার সন্দেহভাজন আসামি সাইদুর গত বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুরে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।
রাজধানীর হাজারীবাগে কিশোরকে পিটিয়ে হত্যায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম আরজু (২৮) গত সোমবার রাতে র‌্যাবের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। র‌্যাব বলেছে, সোমবার রাতে র‌্যাব-১০ এর একটি দল আরজুকে আটক করে। পরে তাকে গাড়িতে করে নিয়ে ফেরার সময় আরজুর সহযোগীরা তাকে ছিনিয়ে নিতে র‌্যাবের ওপর হামলা চালায়। তারা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় আরজু গুলিবিদ্ধ হলে তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়। তবে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। স্থানীয় সংসদ সদস্যও এর প্রতিবাদ জানান। তারা বলেছেন, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। খবর নিয়ে জানা গেছে, এ বিষয়টি নিয়ে ওই এলাকার সরকার সমর্থকেরা খুবই নাখোশ। তাদের দাবিÑ আরজুর বিরুদ্ধে আগে কোনো সাধারণ ডায়েরি পর্যন্ত নেই।
গত ২৩ জুলাই মাগুরায় যুবলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে গোলাগুলির ঘটনায় নিহত হন মোমিন ভূঁইয়া। গুলিবিদ্ধ হন নাজমা ও তার গর্ভের সন্তান। গুলিতে শিশুটি মাতৃজঠরে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যায়। এ মামলার এজাহারভুক্ত দ্বিতীয় আসামি মেহেদী হাসান আজিবর (৩৮) গ্রেফতারের পর গত সোমবার রাতে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। আজিবর মাগুরা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবং পরে যুবলীগের সাথে সম্পৃক্ত ছিল।
মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে কুষ্টিয়ার জগতি চেচুয়া রেলবাজারের পাশে একটি বাগানের ভেতরে গোলাগুলির ঘটনায় জাকির হোসেন নিহত হন। তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতার অনুসারী ছিলেন বলে জানা যায়। গত ১৫ আগস্ট দুপুরে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানের মধ্যে জেলা শহরের মজমপুর গেট এলাকায় আওয়ামী লীগের দু’প সংঘর্ষে জড়ালে যুবলীগকর্মী সবুজ (২৫) ছুরিকাঘাতে নিহত হন, আহত হন আরো পাঁচজন। সেখানে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ হত্যা মামলার ৫ নম্বর আসামি ছিলেন নিহত জাকির।
গত ১৩ আগস্ট রাজধানীর বাড্ডার আদর্শনগরে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে গুলিতে নিহত হয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের তিন নেতাকর্মী। এ ঘটনার আসামি বাড্ডা ৯৭ নম্বর ওয়ার্ডের শিমুলতলা ইউনিট যুবলীগের সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান (৩৫) বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুরে ডিবি পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দলের অভ্যন্তরে যেসব সন্ত্রাসী রয়েছে, তাদের শায়েস্তা করতে হাইকমান্ড থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ নির্দেশের অংশ হিসেবেই ভয়ঙ্কর অপরাধে যারা জড়িত, তাদের গ্রেফতারে দেশজুড়ে অভিযান শুরু হয়েছে। বিশেষ করে যারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে জড়িত এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িত, তাদের ব্যাপারে কঠোর হওয়ার নির্দেশ রয়েছে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে অনেক নেতাকর্মীকে থানায় থানায় ডেকে নিয়ে সাবধান করে দেয়ার মতো ঘটনাও শোনা গেছে। তবে এতে নাখোশ দলের অনেকেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতাকর্মী বলেছেন, গত কয়েক দিনে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা ভয়ানক। অনেকেই এ নিয়ে আতঙ্কে আছেন। অপরাধের অভিযোগ রয়েছে এমন অনেকে এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছেন বলেও জানা যায়। এমনকি এ নিয়ে মাঝারি গোছের অনেক নেতা এবং সংসদ সদস্যরা এরই মধ্যে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। এত দিন তারা ‘বন্দুকযুদ্ধ’ ও ’ক্রসফায়ার’-এর ব্যাপারে চুপ ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.