মুস্তাফিজের আরেক কীর্তি- বৃষ্টির মুখেই শেষ হাসি by পবিত্র কুন্ডু

ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড কাল বুঝে গিয়েছিলেন, লাভ নেই, মেঘ-বৃষ্টির আড়াল থেকে দেখা যাবে না সূর্যের মুখ। পঞ্চম দিনের খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করে দিলেন তাই দুপুর ১২টায়। খেলার নির্ধারিত মধ্যাহ্নভোজের বিরতি ফুরোতে ১০ মিনিট তখনো বাকি!
চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও বৃষ্টির ত্রিমুখী লড়াইয়ে শেষ হাসি বৃষ্টিরই। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের খেরো খাতায় যোগ হলো আরেকটি ড্র। ৯২ টেস্টে ১৪ ড্রয়ের আটটিরই নিয়তি নির্মিত বৃষ্টির হাতে।
বৃষ্টিতে দিনের খেলা পরিত্যক্ত হয়ে গেছে আগেই। মাঠে নেমেছিলেন ফুটবল খেলবেন বলে, এরই মধ্যে আবার হানা দিল বৃষ্টি। বিজ্ঞাপনের বোর্ড নিয়ে সেই বৃষ্টির ছাট থেকে বাঁচার চেষ্টা মুস্তাফিজুর রহমানের। অভিষেক টেস্টেই ম্যাচসেরাও হয়েছেন বাংলাদেশের পেসার l ছবি: শামসুল হক
দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে প্রথম ড্র নয়, বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখেছিল জয়েরও। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম জানিয়ে গেলেন জয়ের বিশ্বাসটি বেশ ভালোভাবেই ছড়িয়ে পড়েছিল তাঁদের মধ্যে। যদিও এই ড্র থেকেও বাংলাদেশ কুড়িয়ে নিতে পেরেছে অনেকগুলো মুক্তো। সবচেয়ে উজ্জ্বল মুক্তোটা মুস্তাফিজুর রহমান। ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকেই ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন ১৯ বছর বয়সী বাঁহাতি পেসার। এক মাস পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকেও তিনি ম্যাচসেরা! শুধু কি তা-ই, মুস্তাফিজ নতুন আরেকটা রেকর্ডই করে ফেলেছেন। তাঁকে নিয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেট অভিষেক ম্যাচেই পেল শততম ম্যান অব দ্য ম্যাচকে। অভিষেকেই টেস্টের এই ৪০তম ম্যান অব দ্য ম্যাচ যে কীর্তি গড়েছেন, তাঁর পূর্বসূরি আর কারোর তা নেই। বাংলাদেশের নতুন ক্রিকেট বিপ্লবের নবতম বিজ্ঞাপন ওয়ানডে ও টেস্ট—দুই ধরনের ক্রিকেটে অভিষেকেই ম্যাচসেরা!
ম্যাচের মীমাংসা হোক আর না হোক, ড্রটাও রুদ্ধশ্বাস হোক কিংবা ম্যাড়মেড়ে, ম্যান অব দ্য ম্যাচের কথা কিছু বলতেই হয়। মুস্তাফিজকে মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়াতে হলো ড্রেসিং রুমের নিচের খোলা জায়গটায়। মুখে অপাপবিদ্ধ হাসি। সঞ্চালক দুই ধরনের ক্রিকেটের অভিষেকেই তাঁর ম্যাচসেরা হওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলেন। ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা সাতক্ষীরার ‘বিস্ময়বালক’ বোলিংয়ের মতো কথাবার্তায়ও বুদ্ধিদীপ্ত, ‘অনুভূতি তো খুবই ভালো। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগছে, পরিকল্পিত বোলিংয়ের পুরস্কার হিসেবে এটি পাওয়ায়।’
তা ম্যাচে বোলিং পরিকল্পনাটা কী থাকে? মুস্তাফিজের কণ্ঠ এবার আরও দৃঢ়,‘ টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে বা টেস্ট সব খেলাতেই ক্যাপ্টেন বা কোচের নির্দেশমতো জায়গামতো বল করে যাওয়া।’
তৃতীয় দিন শেষে ম্যাচটি যে বাঁকে এসে দাঁড়িয়েছিল, তাতে ছিল অদ্ভুত এক দোলাচল। কেউ পরিষ্কার বিজয়ীর চেহারায় নেই, আবার দুই দলেরই জয়ের সম্ভাবনা প্রায় সমান। শেষ পর্যন্ত কে জিতত বা কে হারত সেটি বড় কথা নয়, আসল কথাটা হলো একটা রোমাঞ্চকর সমাপ্তির অপেক্ষা। বৃষ্টির হাতে সেই সম্ভাবনাটা অন্তত খুন হলো।
একটি সম্পূর্ণ লড়াইয়ের পর টেস্টটা নিষ্ফলা হয়ে গেলে দুই দলের অন্দর মহলে দুরকম অনুভূতি থাকে। এক প্রান্তে হতাশা, অন্য প্রান্তে স্বস্তি। আশ্চর্য যে এখানে শুধুই হতাশা থেকে গেল। তবে হতাশাকে যথাসম্ভব ঢেকেঢুকে রেখে দুই অধিনায়কই দাবি করে গেলেন, লড়াইয়ে তাঁর দলই এগিয়ে ছিল! সবাই জানেন এবং বোঝেন, এ হলো ৩০ জুলাই ঢাকায় দ্বিতীয় টেস্টে মুখোমুখি হওয়ার আগে আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি ভরে নেওয়ার চেষ্টা কিংবা কৌশল।
ঘাসের নিচের জল মাড়িয়ে বৃষ্টি মাথায় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উল্টো পাশের সংবাদ সম্মেলনকক্ষে প্রথমে এলেন হাশিম আমলা। শ্মশ্রুমণ্ডিত দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক দাবি করলেন, ‘ম্যাচটি আমাদের দিকেই ঝুঁকে ছিল।’ পরপরই দৃশ্যপটে মুশফিকুর রহিম। আমলার দাবিটা শুনে বাংলাদেশ অধিনায়কের মুখে এক টুকরো হাসিমাখা বিস্ময়, ‘হ্যাঁ, ওদের হাতে বিশ্বমানের স্পিনার থাকলে ওরা হয়তো এগিয়ে থাকত। তাতো আর নেই! আমি তো বলব আমরাই এগিয়ে ছিলাম ম্যাচে।’
সংবাদ সম্মেলন শেষ হতে না হতেই বৃষ্টি নামল জোরে। দৌড়াতে দৌড়াতে মাঠ পাড়ি দিয়ে ড্রেসিং রুমের দিকে অন্তর্হিত হলেন মুশফিক। বিশাল সীমানা দড়িটা ঠায় ভিজছে। একটু আগে ওটার গা থেকে খুলে ফেলা বিজ্ঞাপনী টবলারগুলোর বেশ কয়েক টুকরো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। তবে এখান থেকে টুকরো টুকরো কিছু প্রাপ্তি নিয়ে ঢাকায় ফিরছে বাংলাদেশ।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম তিন শতাধিক রান, দ্বিতীয়বার লিড, দুর্দান্ত বোলিং। মুস্তাফিজ ও লিটনের গৌরবদীপ্ত অভিষেক।
এই প্রাপ্তিগুলোকে কাজে লাগিয়েই ৩০ জুলাই ঢাকায় শুরু দ্বিতীয় টেস্টে নামতে চায় বাংলাদেশ দল। ১৪ জনের দলে কোনো পরিবর্তন নেই।
দ. আফ্রিকা: ২৪৮ ও ৬১/০
বাংলাদেশ: ৩২৬
ফল: ড্র

No comments

Powered by Blogger.