ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক: যানজট-বৃষ্টিতে টানা দুর্ভোগে হাজারো যাত্রী

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গত শুক্রবার বেলা তিনটা থেকে শুরু হওয়া যানজট গতকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। যানজটে আটকা পড়ে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বিশেষ করে কম ভাড়ায় বাসের ছাদে ওঠা নারী-শিশুসহ নিম্ন আয়ের মানুষের বেশি ভোগান্তি হয়। পুলিশ ও ভুক্তভোগীরা জানান, শুক্রবার দুপুরের পর থেকে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। এতে চন্দ্রা, কালিয়াকৈর, গোড়াই, ধেরুয়া রেলক্রসিং, মির্জাপুর, কুর্ণী, ধল্যা, পাকুল্যা, নাটিয়াপাড়া, করটিয়াসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাসস্টেশন এলাকায় যানজটের কারণে থেমে থেমে যানবাহন চলতে থাকে। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মির্জাপুরের দুল্যা মনসুর এলাকায় মহাসড়কের ওপর একটি গাছ পড়লে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর গাছটি টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের রেকার দিয়ে সরিয়ে নেওয়া হলেও যানবাহন চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। এতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টির কারণে যানবাহনের গতি কমে যানজট বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে রাতে তা গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত হয়। গতকাল বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজট কমতে থাকলেও বেলা ১১টা পর্যন্ত তা চন্দ্রা থেকে নাটিয়াপাড়া পর্যন্ত ছিল। মাঝখানে প্রায় চার ঘণ্টা যানজট না থাকলেও বেলা তিনটার পর থেকে আবার যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। বিকেল সাড়ে চারটায় এই প্রতিবেদন পাঠানোর সময় চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের রাবনা বাইপাস পর্যন্ত প্রায় ৪৫ কিলোমিটার এলাকায় ঢাকামুখী যানবাহন যানজটে আটকে থাকার খবর পাওয়া গেছে। যানজটে দুর্ভোগের বর্ণনা দিয়ে রোমার পরিবহনের বাসচালক নাছির উদ্দিন জানান, তিনি শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটায় পঞ্চগড় থেকে সিলেটের উদ্দেশে রওনা হন। রাত ১১টায় বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়েই যানজটে আটকা পড়েন। ভোরে সিলেট পৌঁছানোর কথা থাকলেও সকাল পৌনে আটটায় তিনি বাস নিয়ে মির্জাপুর অতিক্রম করেন। একইভাবে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী ট্রাকের চালক হেলাল বলেন, রাত আটটায় রওনা হয়ে সকাল আটটায় মির্জাপুর পার হয়েছেন। মির্জাপুরের গোড়াই শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত খান গার্মেন্টসের শ্রমিক রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছি গ্রামের লিটন মিয়া জানান, কম ভাড়ায় তাঁরা শুক্রবার বিকেল চারটায় রংপুর থেকে বাসের ছাদে ওঠেন। পলিথিন ছিল, তারপরও সারা রাত বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে। মির্জাপুরের ট্রাফিক পরিদর্শক সাজেদুল ইসলাম বলেন, যানবাহনের চাপ বেশি থাকার পাশাপাশি চালকেরা এলোপাতাড়ি যানবাহন চালানোর কারণে যানজট হয়। গাজীপুর হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) শফিকুল ইসলাম বলেন, যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় শুক্রবার রাত তিনটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত যানজট ছিল। পুলিশ যানবাহনের চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
বাসে আসন না পেয়ে ছাদে উঠেছেন এই নারী। পথে দীর্ঘ যানজট। এর মধ্যেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। পলিথিন মাথায় দিয়ে কোনো রকমে বৃষ্টি থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন তিনি। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুরে বাওয়ার কুমারজানী এলাকা থেকে গতকাল সকালে তোলা ছবি l প্রথম আলো

No comments

Powered by Blogger.