মেহেরপুরে সরকারি গম কেনায় দুর্নীতির অভিযোগে মামলা

মেহেরপুরে কৃষকের কাছ থেকে সরকারিভাবে গম কেনায় দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে আদালতে মামলা করেছেন একজন গমচাষি। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছেন। ওই মামলায় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা (মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গার জেলা দায়িত্বে) আবদুল ওয়াহেদ, মেহেরপুর সদরের ক্রয় কর্মকর্তা আবু সাহেদ মো. হুমায়ুন কবীর এবং মূল্য পরিশোধ কর্মকর্তা ও মুজিবনগরের খাদ্য পরিদর্শক কাউসার আলীকে আসামি করা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ১৬ জুলাই মামলার বাদী মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এই মামলা করেন। বাদীর আইনজীবী মারুফ আহমেদ ও ইয়ারুল ইসলাম জানান, দুর্নীতি দমন আইনের ৪২০/৪৬৭/৪৬৮ ধারায় ওই মামলা করা হয়েছে। মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক (জেলা জজ) মো. রবিউল হাসান ১৭ জুলাই মামলাটি
তদন্তের জন্য দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন।
জানতে চাইলে মামলার বাদী নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি গম বিক্রি করতে পারিনি। তাই ক্ষুব্ধ হয়ে গম বেচাকেনার তথ্য সংগ্রহ করে মামলা করেছি।’ নজরুল ইসলাম নিজেকে আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করেন।
মামলার আরজিতে বাদী অভিযোগ করেন, গত ২১ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে কৃষকের গম না কিনে ১৪৭ জন ভুয়া কৃষকের তালিকা তৈরি, ভুয়া কৃষি সহায়তা কার্ড সংগ্রহ ও কৃষকের স্বাক্ষর জাল করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৪৪১ মেট্রিক টন নিম্নমানের গম কিনে ১ কোটি ২৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকার দুর্নীতি করেছেন। অথচ বাদী এবং মামলার চার সাক্ষীসহ প্রকৃত অনেক চাষি ন্যায্যমূল্যে সরকারি গুদামে গম বিক্রি করতে গেলে তাঁদের গম না নিয়ে বরং হুমকি দেওয়া হয়। এ কারণে প্রকৃত কৃষি সহায়তা কার্ড থাকার পরও অসংখ্য কৃষক ন্যায্য মূল্যে সরকারি গুদামে গম দিতে পারেননি।
অভিযোগ সম্পর্কে আবদুল ওয়াহেদ প্রথম আলোকে বলেন, গম ক্রয় ও মূল্য পরিশোধের দায়িত্ব খাদ্যগুদামের ক্রয় কর্মকর্তা ও মূল্য পরিশোধকারী কর্মকর্তার। ফলে মামলার অভিযোগের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। তা ছাড়া এখানে সরকারি দলের নেতাদের চাপে গম কিনতে গিয়ে তড়িঘড়ি করে ক্রয় অভিযান শেষ করতে হয়েছে।
ক্রয় কর্মকর্তা আবু সাহেদ মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগের একাংশ দ্রুত গম নিতে চাপ দিয়েছে। অন্য অংশ গম না নেওয়ায় মামলা করেছে। এভাবে এখানে চাকরি করা অসম্ভব।’ ভুয়া ওজন, মান, মজুত, দেখিয়ে এবং কৃষকের স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রেজিস্টার খাতা এবং ব্যাংকের স্বাক্ষর খতিয়ে দেখলেই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হবে। এ সময় রেজিস্টার খাতায় কৃষকের স্বাক্ষর তালিকা চাওয়া হলে, তিনি তা না দেখিয়ে বলেন, ‘টিআর-কাবিখার কোনো কাজ হয় না। কিন্তু টন টন খাদ্যশস্য চলে যাচ্ছে গুদাম থেকে। নেতারা কত দুর্নীতি করছে। সেগুলো নিয়ে কোনো অভিযোগ হয় না।’
মূল্য পরিশোধ কর্মকর্তা ও মুজিবনগর খাদ্য পরিদর্শক কাউসার আলী বলেন, ‘সব ফালতু অভিযোগ। নেতারাই মামলাটি আপসের প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন। তাই লিখে কী হবে বলেন?’
মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেক বলেন, সুষ্ঠু বণ্টনের মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে গম কেনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দলীয় কৃষকদের প্রাধান্য থাকতেই পারে। কোনো ব্যক্তি ঈর্ষান্বিত হয়ে এ মামলা করে থাকতে পারেন।
উল্লেখ্য, সরকারি গম ক্রয় নিয়ে ‘মেহেরপুরে গম নিয়ে আ.লীগে গন্ডগোল’ শিরোনামে ১৭ জুন প্রথম আলোর প্রথম পাতায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

No comments

Powered by Blogger.