টোল বাড়ানোর প্রতিবাদে বুড়িগঙ্গা সেতু অবরোধ

টোল বাড়ানোর প্রতিবাদে বুড়িগঙ্গা প্রথম চীন মৈত্রী
সেতু গতকাল ৬ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন পরিবহন
শ্রমিক ও চালকেরা। দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।
হেঁটে সেতু পার হন তাঁরা l ছবি: হাসান রাজা
বুড়িগঙ্গা প্রথম চীন মৈত্রী সেতুতে যানবাহনের টোল বৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং টোলমুক্ত করার দাবিতে গতকাল শনিবার ছয় ঘণ্টা সেতু অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। যানবাহনের চালক ও শ্রমিকদের এই অবরোধের ফলে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হয় লোকজনকে।
জানা গেছে, গত শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিক থেকে সেতুতে নতুন হারে টোল আদায় শুরু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সেতুতে চলাচলকারী বাস, ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ সব যানবাহনের চালক ও শ্রমিক এবং
মালিকেরা এর প্রতিবাদ করে। ওই দিন সন্ধ্যায় তাঁরা জরুরি সভা করে পরদিন (গতকাল) সেতু অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গতকাল সকাল আটটা থেকে সেতু উত্তর প্রান্ত রাজধানীর পোস্তগোলা এলাকা ও সেতুর দক্ষিণ প্রান্ত কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া এলাকায় যানবাহনের কয়েক শ শ্রমিক ও চালক সড়ক অবরোধ করে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকেন। তাঁরা সেতুতে যানবাহন চলাচলে বাধা দেন। এতে সেতুতে সব ধরনের যানবাহন চলাচলই বন্ধ হয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সেতু এলাকায় টোলের নতুন হার টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। মিনিবাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের টোল বাড়ানো হয়েছে।
কেরানীগঞ্জ-পোস্তগোলা পথে চলাচলকারী সিএনজি অটোরিকশার চালক মো. সোহেল বলেন, ‘আগে আমাদের কাছ থেকে সেতুর টোল নেওয়া হতো ১০ টাকা। কিন্তু এখন দাবি করছে ২৫ টাকা।’ ট্রাকচালক ইমরান হোসেন বলেন, আমাদের ওপর অন্যায়ভাবে এভাবে টোলের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই অবিলম্বে এই সেতু টোলমুক্ত করা হোক।
বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতু টোলমুক্ত আন্দোলনের আহ্বায়ক ও শ্রমিক লীগ নেতা ইমদাদুল ইসলাম বলেন, এই সেতু নির্মাণ করা হয় ১৯৮৮ সালে। এরপর থেকে এখনো পর্যন্ত টোল আদায় করা হচ্ছে। অথচ ১৯৯৫ সালে চালু হওয়া বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু ইতিমধ্যে টোলমুক্ত করা হয়েছে। আমাদের দাবি যানবাহনের মালিকদের স্বার্থে বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতুও টোলমুক্ত করা হোক। সেটা না করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সেতুতে অহেতুক টোল বৃদ্ধি করেছে। এর প্রতিবাদে শ্রমিক যানবাহনচালকেরা অবরোধ করছেন।
অবরোধের কারণে সকাল থেকে সেতুতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী ও দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী হাজারো মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হয়। অনেকে তাঁদের মালামাল ও পরিবার-পরিজন নিয়ে হেঁটে সেতু পার হন। রাজধানীর জুরাইন এলাকার বাসিন্দা মো. উজ্জ্বল বলেন, ‘আমার তিন মাসের মেয়ে নুসরাত জাহান দুই দিন ধরে জ্বরে ভুগছে। তাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য কেরানীগঞ্জের আদ্ব দ্বীন হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। সেতুর কাছে এসে দেখি যানবাহন চলাচল বন্ধ। তাই বাধ্য হয়ে মেয়েকে চিকিৎসা করানোর জন্য পায়ে হেঁটে সেতু পার হচ্ছি।’
ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম আজাদ বলেন, যানবাহনের চালক-শ্রমিকদের অবরোধের কারণে ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরা। তবে পূর্বের হারে টোল আদায়ের আশ্বাস দেওয়ার পর বিক্ষোভকারীরা বেলা আড়াইটার দিকে তাঁদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন। এরপর সেতুতে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
সড়ক ও জনপথ মুন্সিগঞ্জ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হেনা মো. তারেক ইকবাল বলেন, আপাতত পূর্বের হারে টোল আদায় করা হবে। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.