ঈদের বাজার মন্দা: পুরান ঢাকায় দোকানির মুখ ভার by মাসুম আলী

ঈদের বাজার। দিনভর বৃষ্টি। দোকানে ক্রেতার ভিড় নেই।
ক্রেতার অপেক্ষায় আছেন বিক্রয়কর্মীরা। নগরের রাজধানী
সুপার মার্কেট থেকে গতকাল তোলা ছবি l প্রথম আলো
শুক্রবার সারা দিন ঝুম বৃষ্টি। কোথাও কোথাও পানিও জমে ছিল। আকাশে ছিল মেঘ। আকাশের মতোই মুখ ভার করে রেখেছিলেন পুরান ঢাকার বিভিন্ন বিপণিবিতানের অনেক ব্যবসায়ী। সন্ধ্যায় কিছুটা বিক্রিবাট্টা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার বাজার মন্দা। আগের দিন বৃহস্পতিবারও সারা দিন ছিল একই চিত্র, বেচাকেনা মন্দা।
পুরান ঢাকায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সহাবস্থান। এখানকার বিভিন্ন এলাকায় বিপণিবিতানগুলোতে সব শ্রেণির মানুষের চাহিদা মেটানো হয়। একটা সময় এখানকার অভিজাত শ্রেণি ঈদের পোশাক কিনতে নতুন ঢাকার দিকে ভিড় করলেও এখন আর তেমন দেখা যায় না। কেননা, এখানেই ওয়ারীর মতো এলাকায় দেশে নামকরা সব ব্র্যান্ডের শাখা চালু আছে। আবার সদরঘাট এলাকার বিভিন্ন বিপণিবিতান, রাজধানী সুপার মার্কেটের মতো বিপণিবিতানে নিম্নবিত্তসহ সব শ্রেণির মানুষের সাধ মেটে। এ কারণে রমজান মাসের শুরু থেকেই এখানকার বিপণিবিতানগুলোতে ঈদের বেচাকেনা চলে জমজমাট।
রাজধানী সুপার মার্কেটে দামাদামি করতে হয় : সব বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশুর পোশাকের সমাহার এই রাজধানী মার্কেটে। এ ছাড়া জুতা, অলংকার, থান কাপড়সহ সংসারের টুকিটাকি জিনিসও পাওয়া যায়। তবে ক্রেতাদের ক্ষোভ, এখানে চাহিদা পূরণ হলেও দোকানিরা জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি হাঁকান।
দুপুরে টিপু সুলতান রোড থেকে মোহাম্মদ মানিক হোসেন এসেছিলেন রাজধানী মার্কেটে। জানালেন গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায়। পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য পোশাক কেনার উদ্দেশ্যেই তাঁর আসা। সবার জন্য কিনে পাঠিয়ে দেবেন। বললেন, ‘এখানে জামা কেনার অভ্যেস না থাকলি পরে ঠকতি হয়। একখান পাঞ্জাবির দাম চালো ২৭০০ টাকা, সেই পাঞ্জাবি কিনলাম ৬০০ টাকায়!’ অবশ্য অতিরিক্ত দাম হাঁকানোর বিষয়টি মানতে নারাজ এ মার্কেটের দোকানিরা। মাই চয়েস-এর কর্ণধার আশিক উল্লাহ বলেন, ‘অন্য মার্কেটের তুলনায় আমাদের এখানে সব সময়ই অপেক্ষাকৃত কম দামে জিনিস পাওয়া যায়।’
নারিন্দা থেকে গৃহিণী মালা আক্তার এসেছিলেন ছেলেকে নিয়ে। বললেন, ‘২০ বছর আগে যখন ঢাকায় নতুন আসি, তখন আমাদের মৌচাক কিংবা গাউছিয়া মার্কেটে যেতে হতো। সময়, টাকা—দুই বেশি লাগত। এখন আর অত দূর যাওয়া লাগে না। হেঁটেই চলে আসি।’
ওয়ারীতে যানজট বেশি, বিক্রি কম: ওয়ারীকে এখন আর শুধু আবাসিক এলাকা বলা যাবে না। এখানে বিগত এক দশকে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু অভিজাত বিপণিবিতান। আগে যেগুলো ছিল, তার পরিসর আরও বাড়ছে। আড়ং, নবরূপা, রূপসী বাংলা, বৈশাখী, আবর্তন, ক্যাটস আই, ইয়েলো প্রভৃতি দোকানে উচ্চবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তদের যাতায়াত বেশি। মূলত র্যাংকিন স্ট্রিট, হেয়ার স্ট্রিটে এসব প্রতিষ্ঠানের অবস্থান। গতকাল দিনের বেলায় এ এলাকা ঘুরে দোকানগুলোতে তেমন ভিড় দেখা যায়নি। অনেক দোকানে বিক্রয়কর্মীকে মুখ ভার করে বসে থাকতে দেখা গেছে। ফ্যাশন হাউস আবর্তনের ওয়ারী শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ হাবীব জানালেন, এখনো ঈদের বিক্রি জমেনি। তাঁর মতে, বৃষ্টি, যানজটের কারণে এখানে লোকজন কম আসছে। বিকেল সাড়ে চারটায় ফ্যাশন হাউস চৈতিতে গিয়ে দেখা গেল, একজন ক্রেতাও নেই। চৈতির ব্যবস্থাপক আবু তাহের জানালেন, এবার বিক্রি এতটাই মন্দা যে এই ঈদের বাজারেও মালিক মূল্যহ্রাসের ঘোষণা দিয়েছেন। সন্ধ্যার পর এই এলাকার কিছু কিছু দোকানে ভিড় দেখা গেছে। তবে সারা দিনই এই এলাকার মূল সড়কে যানজট লেগে ছিল।
সদরঘাটে নিম্নবিত্তের আশ্রয়: ওয়ারী থেকে ধোলাইখাল পেরিয়ে যাওয়া যায় সদরঘাটে। এখানে দেখা গেল ফুটপাতের ব্যবসা বেশ জমজমাট। বেচাকেনাও বেশ ভালো। ১০০ থেকে ২৫০ টাকায় নারী, পুরুষ ও শিশুদের পোশাক পাওয়া যায় বলে জানালেন ফুটপাতের বিক্রেতা ওয়াহিদুল। সদরঘাটে জামা কিনতে আসা রাজমিস্ত্রি রাসেল জানান, ছেলের জন্য ২০০ টাকা দিয়ে একটা পাঞ্জাবি কিনেছেন। সামর্থ্যের মধ্যে জিনিস পাওয়া যায় বলে এখানেই ঈদের কেনাকাটা করেন। সদরঘাট এলাকায় কিছু বিপণিবিতানও আছে।
বৃষ্টির কারণে ঈদের বিক্রিতে ভাটা পড়লেও পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, আগামী সপ্তাহে চিত্রটা পাল্টাবে। অনেকের মতে, রমজানের শেষ দিকে ঈদের পোশাক কেনা স্থানীয়দের একটা ঐতিহ্য। তাই ব্যবসায়ীরা এখন সেই ধুন্ধুমার বিক্রির অপেক্ষায়।

No comments

Powered by Blogger.