বার্নিকাটের দাদার মা পাচারের শিকার হয়েছিলেন

মানব পাচার বন্ধে তিন বছর মেয়াদি নতুন কর্মপরিকল্পনা প্রকাশের
অনুষ্ঠানে অতিথিরা। মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক
সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। -: প্রথম আলো
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের প্রমাতামহ (দাদার মা) পাচারের শিকার হয়েছিলেন। তাঁকে শিশু অবস্থায় একটি শ্বেতাঙ্গ পরিবারে চুক্তিভিত্তিক দাস হিসেবে কাজ করানো হয়। আজ মঙ্গলবার ঢাকায় মানব পাচার বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে বার্নিকাট নিজে এ কথা বলেন।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়। মানব পাচার বন্ধে তিন বছর মেয়াদি নতুন জাতীয় কর্মপরিকল্পনার প্রকাশ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। ইউএসএইড ও উইনরক ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে যৌথভাবে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘ব্যাপারটি আমার ব্যক্তিগত। আমার প্রমাতামহ মানব পাচারের শিকার হয়েছিলেন। মিশ্র জাতীয় শিশু হিসেবে তিনি শিনকক নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডের পূর্বদিকে আমেরিকান আদিবাসী গোত্রে জন্ম নেন। তাকে শিশু অবস্থায় একটি শ্বেতাঙ্গ পরিবারে চুক্তিভিত্তিক দাস হিসেবে কাজ করানো হয়। প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে ধোয়া-মোছার কাজ ও গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করতে হয়েছে। দুঃখজনকভাবে আজও মানবপাচার ও দাসত্ব চলছে। তবে আগের তুলনায় তা বেড়েছে। শ্রমিক পাচার, যৌনতার উদ্দেশ্যে মানব পাচার হচ্ছে। এ সব পাচার বন্ধে সবাইকে কঠোরভাবে কাজ করতে হবে।’
হাজার হাজার মানুষকে জনাকীর্ণ অবস্থায় নৌকায় ছেড়ে আসার দ্বারা যে অপরাধ হচ্ছে তা সবাইকে আহত করেছে উল্লেখ করে বার্নিকাট বলেন, ফিরে আসা ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসন, স্বাভাবিক জীবন ও সমাজে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রসচিব মোজাম্মেল হক খান বলেন, মানব পাচারের নানা ধরন রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার সব ধরনের পাচার বন্ধে কাজ করছে। জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নেতৃত্ব দিচ্ছে। তবে সব মন্ত্রণালয় এবং সরকারি ও বেসরকারি সব সংস্থাকে সমন্বিতভাবেই কাজ করতে হবে।
পররাষ্ট্রসচিব শহিদুল হক বলেন, বাংলাদেশ একই সঙ্গে পাচারের গন্তব্য, ট্রানজিট। আবার এখান থেকে পাচারও হয়। কেবল কর্মপরিকল্পনা করলেই হবে না কেন পাচার হচ্ছে সেটিও খুঁজে দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা একটি বড় সমস্যা।
আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক বলেন, পাচার বন্ধে সচেতনতা যেমন তৈরি করতে হবে তেমনি যারা পাচার করছে তাদেরও চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে। পাচারের মামলাগুলোরও বিচার করতে হবে। বর্তমানে মামলাগুলো নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে আছে। তবে পাচারের মামলা বিচারে সাত বিভাগে সাতটি ট্রাইব্যুনালও করা হচ্ছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব খন্দকার ইফতেখার হায়দার বলেন, সমুদ্রপথে পাচারের জন্য যখন লোক নেওয়া হয় তাদের বলা হয় কোন টাকা লাগবে না। কিন্তু মাঝসমুদ্রে যাওয়ার পরেই লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এভাবে অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়া বন্ধে সামাজিক সচেতনতা দরকার।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম বলেন, আগে অনেক বেশি নারী ও শিশু পাচার হতো। কিন্তু সরকারের নানা পদক্ষেপে সেটি কমেছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবু হেনা রহমাতুল মুনিম পাচার বন্ধে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন। পরে তিনি নতুন জাতীয় কর্মপরিকল্পনার লক্ষ্যে ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেন। এ ছাড়া পাচারের শিকার একটি মেয়ে তাঁর ফিরে আসার ঘটনা তুলে ধরেন।

No comments

Powered by Blogger.