দ্রুত নির্বাচন দিন: খালেদা

দেশের চলমান দুরবস্থার উত্তরণে দ্রুত একটি গ্রহণযোগ নির্বাচন প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষনেতা খালেদা জিয়া। বলেছেন, বর্তমান সরকার জোর করে ক্ষমতায় এসে দেশের দুরবস্থা তৈরি করেছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ করেছে। এই দুরবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে প্রয়োজন দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। যেই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। কারচুপি হবে না। ছোট বড় সব দল অংশগ্রহণ করবে। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর লেডিস ক্লাবে লেবার পার্টি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় সংসদ এখন গান-বাজনার আসর হয়ে গেছে মন্তব্য করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে জাতীয় সংসদে আলোচনা হয় না। বিতর্কের এজেন্ডা থাকে না। সংসদের কোরাম পূর্ণ হয় না। জাতীয় সংসদ এখন গান-বাজনার আসরে পরিণত হয়েছে। এর কারণ সংসদে এখন কার্যকর শক্তিশালী বিরোধী দল নেই। নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটি অপদার্থ ও অকার্যকর কমিশন। তারা সত্য কথা বলার সাহসটুকু রাখে না। তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না। এই কমিশনকে ঢেলে সাজাতে হবে। পুলিশের সমালোচনা খালেদা জিয়া বলেন, প্রশাসনে দলীয় লোকদের প্রমোশন দেয়া হচ্ছে।  কিছু কিছু পুলিশ সরকারের আশকারা পেয়ে আইনের ঊর্ধ্বে উঠে গেছে। আইনকে তারা তোয়াক্কা করে না। তারা যখন যাকে খুশি তাকেই ধরে নিয়ে যাচ্ছে। মানুষ খুন-গুম করছে, কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। প্রতিবাদ করলেই তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের সীমান্তে প্রতিনিয়ত মানুষ মারা যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী এর প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় গুলি কিনে তারা দেশের ভেতরে সাধারণ মানুষকে গুলি করতে পারে। সীমান্তে আদৌ বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশের (বিজিবি) অবস্থান আছে কিনা- তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। খালেদা জিয়া বলেন, মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষীর সঙ্গে আমাদের বিজিবি পারে না। মিয়ানমার একজন বিজিবি নায়েককে ধরে নিয়ে কি অসম্মান করেছে। আজ দেশের মান-সম্মান কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। কিন্তু আমাদের সময় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী অত্যন্ত চৌকস ছিল। সরকার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী, পুলিশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শেষ করে দিয়েছে। আমরা নকল বন্ধ করেছিলাম। এখন নকলের ছড়াছড়ি। ইচ্ছেমতো পাস করিয়ে দেয়া হয়। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিলে ছাত্ররা পাস করতে পারে না। জাতিকে ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। দেশের মানুষের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, যারা দেশকে ভালবাসেন ও পরিবারকে ভালবাসেন তাদেরকে সচেতন হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধকে যারা সম্মান করেন তাদেরকে জেগে উঠতে হবে। অন্যায়-অত্যাচার অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়তে হবে। তাহলে শান্তি ফিরে আসবে। লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের সভাপতিত্বে ইফতার মাহফিলে এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমেদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ঢাবি প্রফেসর মাহবুবউল্লাহ, প্রবীণ সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, খেলাফত মজলিশের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইসহাক, জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য আমিনুল ইসলাম, ডা. রিদওয়ানউল্লাহ শাহিদী, সাঈদীপুত্র শামীম বিন সাঈদী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে আজ রাজধানী বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) আয়োজিত ইফতার মাহফিলে যোগ দেবেন খালেদা জিয়া।

No comments

Powered by Blogger.