হাসপাতালের সামনেই ভাগাড়

রাজশাহী শিশু হাসপাতালের সামনের সড়কের ওপর ছড়িয়ে
ছিটিয়ে থাকা আবর্জনার স্তূপ। ছবিটি গতকাল তোলা l প্রথম আলো
দেখে বোঝার উপায় নেই এটি রাস্তা না ভাগাড়। সারা দিন কাকের ওড়াউড়ি। গবাদিপশুর বিচরণ। উৎকট গন্ধে পথচারীদের দম বন্ধ হওয়ার জোগাড়। নাক চেপে পথ চলেন সবাই।
রাজশাহী শিশু হাসপাতালের সামনের রাস্তার চিত্র এটি। সারা দিন সেখানে এনে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়। একটু দমকা বাতাস এলেই দুর্গন্ধে ভোগান্তির অন্ত থাকে না হাসপাতালের রোগী আর তাঁদের স্বজনদের।
বিকল্প ব্যবস্থা না করেই শহরের আবর্জনা ফেলার একটি ‘সেকেন্ডারি পয়েন্ট’ ভেঙে ফেলায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নগরের সিপাইপাড়ার ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য ২০০৯ সালে প্রায় নয় লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সেকেন্ডারি পয়েন্ট করা হয়। চারদিকে দেয়ালঘেরা। বাইরে ফুলগাছ। ফলে পয়েন্টের ভেতরে ময়লা থাকলে বাইরে থেকে বোঝার উপায় ছিল না। কোনো গন্ধও ছড়াত না। সারা দিন সেখানে আবর্জনা ফেলা হতো। রাতে সেখান থেকে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হতো স্থায়ী ভাগাড়ে।
সূত্রটি জানায়, মাস খানেক আগে এই এলাকার রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়। এ জন্য মাত্র পাঁচ বছর আগে করা সেকেন্ডারি পয়েন্টটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেই থেকে এলাকার যত আবর্জনা সবই শিশু হাসপাতালের সামনে রাস্তার ওপর এনে ফেলা হচ্ছে।
গত রোববার দুপুরে ওই এলাকায় গিয়ে গরু আর কাকের মধ্যে আবর্জনা নিয়ে কাড়াকাড়ির দৃশ্য চোখে পড়ে। আট-দশটি গরু আবর্জনার স্তূপে মুখ ডুবিয়ে খাবার টেনে বের করছে। ময়লা নিয়ে ওড়াউড়ি করছে অসংখ্য কাক। তাতে রাস্তার ওপর গিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে আবর্জনা। ফায়ার ব্রিগেড মোড় থেকে সিএনবি মোড়ের দিকে যেতে যানবাহনের যাত্রী ও পথচারীরা এই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় নাক চেপে ধরছেন।
গতকাল সোমবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, পাশের এলাকা থেকে ভ্যানে করে ময়লা এনে রাস্তার ওপরই রাখা হচ্ছে। রুবেল আলী নামের একজন ভ্যানচালক কয়েকটি সরকারি কার্যালয়ের ময়লা এনে এখানে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় ময়লা ফেলতে খারাপ লাগছে। কিন্তু কিছু তো করারও নাই।’
হাসপাতালের সামনেই একটা ওষুধের দোকান। ওই দোকানের মালিক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘রোজা থেকে দোকানে বসে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে। সারা দিন উৎকট গন্ধ।’
রাজশাহী শিশু হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘দুর্গন্ধ আসছে। অসুবিধা হচ্ছে। আমরা নিজেরা কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু দায়িত্বশীল কাউকে পাইনি।’
এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, রাস্তাটি চার লেন করার জন্য আবর্জনা ফেলার সেকেন্ডারি পয়েন্টটা ভাঙা হয়েছে। দক্ষিণ পাশে তাঁরা একটা জায়গা পছন্দ করেছেন। সেখানে পানি জমে থাকায় আপাতত কাজ করা যাচ্ছে না। কোনো কারণে এটি করা না গেলে তাঁরা ময়লা নেওয়ার জন্য গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখার ব্যবস্থা করবেন। তবে কবে নাগাদ সেটা করা হতে পারে, তিনি তা বলতে পারেননি।

No comments

Powered by Blogger.