আইন মানে না যুবলীগ: বিলবোর্ড অপসারণে যুবলীগের বাধা- চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ বিলবোর্ড

গৃহীত নীতিমালা অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ একটি বিলবোর্ড ভাঙতে গেলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এক নজিরবিহীন বাধার সম্মুখীন হন। নগর যুবলীগের নেতা-কর্মীরা তেড়ে আসেন। ম্যাজিস্ট্রেটের কাজে বাধা দেওয়ার জন্য তাঁদের শাস্তি হওয়ার কথা। কিন্তু সরকারি দলের নেতা বলে কথা। এ রকম বাধা নাকি প্রতিদিনই আসে। এর যদি শাস্তি না হয়, তাহলে তো কাল আবার একই জায়গায় বিলবোর্ড উঠবে। সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হলে অন্যায় বাধাদানকারীদের আইনের আওতায় এনে তাঁদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
যুবলীগের নেতার যুক্তি হলো, তাঁর বিলবোর্ডটি যদি ঝুঁকিপূর্ণ হয়, তাহলে রাস্তার অপর পাশে আরও কয়েকটি বিলবোর্ড একই কারণে কেন ভাঙা হবে না? ওই বিলবোর্ডগুলোর মালিকদের একজন যুবলীগের আরও বড় নেতা। পরে যুবলীগের দুই নেতার মধ্যে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। এমনকি এক নেতা অন্য নেতাকে পিস্তল বের করে হুমকি দেন।
রাস্তার পাশে বিলবোর্ড পথচারীদের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই এগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এখন যুবলীগের ছোট নেতার বিলবোর্ড ভাঙার পর যদি বড় নেতার বিলবোর্ড ভাঙা না হয়, তাহলে খোদ সিটি করপোরেশনই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। বেলা গড়িয়ে যাওয়ায় নাকি ওই বিলবোর্ডগুলো ভাঙা যায়নি। তবে ম্যাজিস্ট্রেট জানিয়েছেন, সব অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিলবোর্ডই অপসারণ করা হবে। জনস্বার্থে এটা অবশ্যই করতে হবে। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল যদি তাদের নেতা-কর্মীদের না সামলায়, তাহলে কাজটি হয়তো কঠিন হবে।
আসল সমস্যা হলো, চট্টগ্রামে বিলবোর্ড ব্যবসার প্রায় সবটাই যুবলীগের হাতে বন্দী হয়ে পড়েছে। এরা দলের প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের মর্জিমতো সবকিছু করে। আইনকানুনের তোয়াক্কা করে না। এ অবস্থায় দলের নেতৃত্ব হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেন না। যাঁরা ম্যাজিস্ট্রেটের কাজে বাধা দেন, যাঁরা পিস্তল দেখান, তাঁদের দল থেকে বহিষ্কারের পাশাপাশি শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। সরকার ও তাঁদের দল কী করে, তা দেখার অপেক্ষায় থাকবে চট্টগ্রামের মানুষ।
বিলবোর্ড অপসারণে যুবলীগের বাধা
বিলবোর্ড অপসারণের সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাধা দিয়েছেন চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। গতকাল রোববার দুপুরে টাইগার পাস মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় নেতা-কর্মীরা ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে তর্কে জড়ান। পরে অভিযান বন্ধ রাখা হয়। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি।
ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে তর্কে জড়ানোর এক ঘণ্টা পর বেলা আড়াইটার দিকে একই এলাকায় বিলবোর্ড অপসারণ নিয়ে নগর যুবলীগের দুই নেতার মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় একজন অন্যজনকে অস্ত্র বের করে গুলি করার হুমকি দেন।
সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিয়া শিরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযানে প্রতিদিনই বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। আজ (রোববার) একটু বেশি বাধা দেওয়া হয়েছে। তবে বাধা দিয়ে কোনো লাভ হবে না। অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, টাইগার পাস এলাকায় রেলওয়ের জমিতে বিলবোর্ড রয়েছে নগর যুবলীগের সদস্য আলী হোসেনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের। ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় বিলবোর্ডটি গতকালের অভিযানে অপসারণ করা হয়। কিন্তু সড়কের উল্টো দিকে নগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বিলবোর্ডসহ আরও চারটি বিলবোর্ড অপসারণ না করায় ক্ষুব্ধ হন আলী হোসেন। একপর্যায়ে অভিযানে যাওয়া ক্রেন (বিলবোর্ড অপসারণে ব্যবহৃত) চালককে তিনি ও তাঁর অনুসারীরা ফরিদ মাহমুদের বিলবোর্ড অপসারণের জন্য চাপ দেন। খবর পেয়ে ফরিদ মাহমুদ ঘটনাস্থলে আসেন। এ সময় দুই নেতার মধ্যে তর্ক হয়। একপর্যায়ে পিস্তল বের করে আলী হোসেনকে গুলি করার হুমকি দেন তিনি।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, গতকালের অভিযানে ছোট-বড় মিলিয়ে ৫৭টি বিলবোর্ড অপসারণ করা হয়। বেলা দেড়টার দিকে যুবলীগ নেতা আলী হোসেনের একটি বিলবোর্ড অপসারণ করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি ও তাঁর অনুসারীরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেয়।
তবে আলী হোসেন দাবি করেন, অনুমতি নিয়ে রেলওয়ের জায়গায় বিলবোর্ড স্থাপন করেছেন তিনি। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ বলে তাঁর বিলবোর্ডটি অপসারণ করা হলেও অন্যগুলো করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি উপস্থাপন করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গিয়েছিলাম, বাধা দিতে নয়।’
যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়কের সঙ্গে তর্ক ও পিস্তল উঁচিয়ে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে আলী হোসেন বলেন, ‘তিনি (ফরিদ মাহমুদ) মনে করেছেন পিস্তল দেখালে আমি ভয় পাব। ভয় পেয়ে চলে যাব।’
প্রকাশ্যে পিস্তল বের করে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ বলেন, ‘তাঁরা (মোহাম্মদ আলী হোসেন ও তাঁর লোকজন) আমার বৈধ বিলবোর্ডটি অপসারণের চেষ্টা করে। আর আমার পিস্তলটির লাইসেন্স আছে।’
পিস্তল উঁচিয়ে প্রকাশ্যে হুমকির বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জসীম উদ্দিন গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, কেউ আইনের আশ্রয় নিলে তখন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে কাউকে হুমকি দেওয়ার সুযোগ নেই।
অবৈধ বিলবোর্ড অপসারণে ১ জুন থেকে অভিযান শুরু করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। গতকাল পর্যন্ত ছোট-বড় ১৪৩টি বিলবোর্ড অপসারণ করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.