বাজেট পাস

নতুন অর্থবছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য চার লাখ ১৫ হাজার ৩০৮ কোটি ১৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয়ের অনুমোদন দিয়ে নির্দিষ্টকরণ বিল ২০১৫ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। এর মাধ্যমে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পাস হলো। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির উপস্থিতিতে গতকাল সর্বসম্মতিক্রমে এ বাজেট পাস হয়। আজ থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে। বাজেট পাসের সময় সংসদের সভাপতির আসনে ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। অন্যদিকে ট্রেজারি বেঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। আগামী রোববার সকাল পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি করা হয়েছে। এদিকে পাস হওয়া অনুমোদিত ব্যয়ের মধ্যে প্রকৃত বাজেট হলো ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা, যা গত ৪ঠা জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেছিলেন। ব্যয় অনুমোদনের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা জাতীয় সংসদে মোট ৫৬টি মঞ্জুরি দাবি উত্থাপন করেন। এসব মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৭ জন সংসদ সদস্য ৫২৫টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন। ছাঁটাই প্রস্তাব আনা সংসদ সদস্যরা হলেন হাজী মো. সেলিম, মো. শওকত চৌধুরী, নূরুল ইসলাম মিলন, মো. রুস্তম আলী ফরাজী, ফখরুল ইমাম, নুরুল ইসলাম ওমর, মাহজাবীন মোরশেদ, তাহজীব আলম সিদ্দিকী ও আবদুল মতিন। এসব প্রস্তাবের মধ্যে নীতি অনুমোদন ছাঁটাই, মিতব্যয় ছাঁটাই ও প্রতীকী ছাঁটাই রয়েছে। এসব ছাঁটাই প্রস্তাব নিষ্পত্তি শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বেলা ১টা ২৫ মিনিটে নির্দিষ্টকরণ বিল ২০১৫ পাসের জন্য সংসদে উত্থাপন করেন। বিলের দফাগুলো সংসদে গৃহীত হওয়ার পর বেলা ১টা ২৯ মিনিটে নির্দিষ্টকরণ বিল কণ্ঠভোটে সংসদে পাস হয়। এ নির্দিষ্টকরণ বিলই ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট। যদিও নির্দিষ্টকরণ বিলে চার লাখ ১৫ হাজার ৩০৮ কোটি ১৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয়ের অনুমোদন করেছে সংসদ। সংসদে গৃহীত এ অর্থ হিসাববিজ্ঞানের তত্ত্বানুযায়ী গ্রস বাজেট, যা পুরোপুরি ব্যয় হয় না। শুধু আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী কিছু ব্যয় বাজেট বরাদ্দে দেখাতে হয়, যা পরে আয় দেখিয়ে বাজেটের ভারসাম্য রক্ষা করা হয়। প্রকৃত অর্থে আগামী অর্থবছরের মূল বাজেট হলো ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এ টাকাই সারা অর্থবছরজুড়ে সরকারের রাজস্ব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যয় করা হবে। সংসদে গৃহীত চার লাখ ১৫ হাজার ৩০৮ কোটি ১৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকার মধ্যে সংযুক্ত তহবিলের ওপর দায় হচ্ছে এক লাখ ৪৪ হাজার ১৭৬ কোটি ৯৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, যা সংসদে অনুমোদনের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। প্রেসিডেন্ট তার ক্ষমতা বলে সরাসরি এ অর্থ ব্যয়ের অনুমোদন দিতে পারেন। সংযুক্ত তহবিলের দায়ের মধ্যে ট্রেজারি বিলের দায় পরিশোধ, হাইকোর্টে বিচারপতি ও মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বেতন ইত্যাদি দায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অবশিষ্ট দুই লাখ ৭১ হাজার ১৩১ কোটি ২১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা হচ্ছে সংসদে ভোটে গৃহীত ব্যয়। এ অর্থই ৫৬টি মঞ্জুরি দাবির মধ্য দিয়ে সংসদে গৃহীত হয়েছে। সরকার ও বিরোধী দলের হুইপের মধ্যে সমঝোতা অনুযায়ী মোট ৫৬টি মঞ্জুরি দাবির মধ্যে সাতটি মঞ্জুরি দাবি আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়। এ দাবিগুলো হলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন। এসব মঞ্জুরি দাবির ওপর বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সদস্যরা তাদের আনা ছাঁটাইয়ের প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। যদিও আলোচনা শেষে এ ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
খাতওয়ারি বরাদ্দের পূর্ণাঙ্গ তালিকা: বাজেটে বরাদ্দ দেয়া অর্থের মধ্যে জাতীয় সংসদ খাতে ২০৩ কোটি ৭৮ লাখ ৪৩ হাজার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় খাতে ৮০২ কোটি ৭২ হাজার, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ খাতে অনধিক ৫০ কোটি ৩১ লাখ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় খাতে এক হাজার ৪৮৫ কোটি ৯২ লাখ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় খাতে এক হাজার ৫০০ কোটি ৩৮ লাখ, অর্থ বিভাগ খাতে এক লাখ ৯৪ হাজার ৩৯৭ কোটি ৫৫ লাখ ৩৩ হাজার, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ খাতে এক হাজার ৮০০ কোটি ৪১ লাখ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ খাতে ৯২৩ কোটি ৮৯ লাখ ৪৩ হাজার, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ খাতে নয় হাজার ৬৬৩ কোটি ১০ লাখ, পরিকল্পনা বিভাগ খাতে এক হাজার ৮৬ কোটি ৮৮ লাখ, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ খাতে ১৩৮ কোটি ৭৬ লাখ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ খাতে ৩৯৩ কোটি ৫৯ লাখ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খাতে ৩৫৯ কোটি ৫৬ লাখ ৫০ হাজার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খাতে ৯০২ কোটি ২১ লাখ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় খাতে ১৮ হাজার ৩৭৭ কোটি ৪৬ লাখ ৫০ হাজার, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ খাতে ২০ কোটি ৮৫ লাখ, আইন ও বিচার বিভাগ খাতে এক হাজার ৪৬ কোটি আট লাখ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খাতে ১২ হাজার ৪০৩ কোটি ৮৪ লাখ ৭৬ হাজার, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ খাতে ২১ কোটি ৩২ লাখ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় খাতে ১৪ হাজার ৫০৪ কোটি ৩৯ লাখ ৭৫ হাজার, শিক্ষা মন্ত্রণালয় খাতে ১৭ হাজার ১১৩ কোটি ৬৬ লাখ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় খাতে এক হাজার ৫৫০ কোটি ৪৭ লাখ, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় খাতে ১২ হাজার ৭২৫ কোটি ৬৩ লাখ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় খাতে এক হাজার ২১৩ কোটি ৫৫ লাখ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় খাতে তিন হাজার ২৫৭ কোটি ৫১ লাখ সাত হাজার, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় খাতে এক হাজার ৬৭৯ কোটি ৩২ লাখ ৫৩ হাজার, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় খাতে ৩০২ কোটি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় খাতে দুই হাজার ৯১৯ কোটি ৬৬ লাখ, তথ্য মন্ত্রণালয় খাতে ৬৫৭ কোটি ৭৯ লাখ, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় খাতে ৩৬৪ কোটি ৯৫ লাখ ৫৩ হাজার, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় খাতে ৪২৭ কোটি ৮২ লাখ ১০ হাজার, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় খাতে ৮৩৪ কোটি ৭০ লাখ, স্থানীয় সরকার বিভাগ খাতে ১৮ হাজার ৮৭১ কোটি ৯০ লাখ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ খাতে এক হাজার ৩৫০ কোটি ৮৪ লাখ, শিল্প মন্ত্রণালয় খাতে এক হাজার ৩৭২ কোটি ৩৩ লাখ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় খাতে ২৮৪ কোটি ২১ লাখ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ খাতে দুই হাজার ৩৭ কোটি ৪১ লাখ, কৃষি মন্ত্রণালয় খাতে ১২ হাজার ৭০৩ কোটি ৫৫ লাখ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় খাতে এক হাজার ৪৮৯ কোটি ৪১ লাখ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় খাতে এক হাজার ২০ কোটি ২৪ লাখ ৯৯ হাজার, ভূমি মন্ত্রণালয় খাতে ৮৮৯ কোটি ৪৫ লাখ ৭৮ হাজার, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় খাতে তিন হাজার ৮৮৬ কোটি, খাদ্য মন্ত্রণালয় খাতে ১১ হাজার ২১৮ কোটি ৬৮ লাখ ২৮ হাজার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় খাতে সাত হাজার ৪৪০ কোটি ৫০ লাখ ৩২ হাজার, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ খাতে সাত হাজার ৯১১ কোটি ৮৩ লাখ, রেলপথ মন্ত্রণালয় খাতে সাত হাজার ৮৩৯ কোটি ৩০ লাখ ৭১ হাজার, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় খাতে এক হাজার ৩৭৬ কোটি ৪৩ লাখ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় খাতে ৩৭১ কোটি ৭৩ লাখ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় খাতে দুই হাজার ৩৭৩ কোটি ৪১ লাখ, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় খাতে ৭৭৯ কোটি ৩ লাখ, বিদ্যুৎ বিভাগ খাতে ১৬ হাজার ৫০৩ কোটি ৫৭ লাখ, সুপ্রিম কোর্ট খাতে ১১২ কোটি ৬১ লাখ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় খাতে দুই হাজার ৬৭৮ কোটি ৭৬ লাখ, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় খাতে ৪৩৮ কোটি ৬৭ লাখ ৯৯ হাজার, দুর্নীতি দমন কমিশন খাতে ৬৩ কোটি ৫৯ লাখ, সেতু বিভাগ খাতে আট হাজার ৯৫২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.