চট্টগ্রাম রেলওয়েতে টেন্ডার নিয়ে জোড়া খুন, তদন্তে ধীরগতি by মহিউদ্দীন জুয়েল

২০১৩ সালের ২৪শে জুন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রামের সিআরবিতে টেন্ডার নিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের গোলাগুলিতে শিশুসহ মারা গিয়েছিলেন দু’জন। গতকাল এ ঘটনার দুই বছর পূর্ণ হলেও এখনও আলোর মুখ দেখেনি পুলিশের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট।
ফলে ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে প্রকৃত আসামিরা। ঢুকরে কাঁদছেন নিহত মানুষগুলোর স্বজনরা। দেশব্যাপী আলোচিত এ ঘটনা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টির পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তৎকালীন সময়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়।
তদন্তের স্বার্থে পুলিশ এখনি কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করলেও একটি সূত্র জানিয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের লোকজন হওয়ায় ঘটনাটি ধামাচাপার চেষ্টা চলছে। থানা পুলিশ থেকে মামলা গোয়েন্দা কার্যালয়ে যাওয়ার পরও প্রতিবেদন জমা নিয়ে চলছে গড়িমসি। অভিযোগ উঠেছে প্রকৃত আসামিদের রক্ষা করারও।
নিহতদের পারিবারিক সূত্র জানায়, ৪৮ লাখ টেন্ডার নিয়ে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে প্রাণ যায় সাজু পালিত ও শিশু আরমান নামের এক শিশুর। এদের মধ্যে সাজু পালিত যুবলীগ করতেন। ঘটনার পরপরই নগরীর কোতোয়ালি থানা পুলিশ ৮৭ জনকে আসামি করে থানায় মামলা  করেন।
মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছিল তাদের মধ্যে জামিনে আছেন যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল আলম লিমন, নগর ছাত্রলীগ নেতা রিটু দাশ বাবুলসহ একাধিক নেতাকর্মী।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে পুলিশ ও নিহতদের পারিবারিক থেকে দায়ের করা মোট দুটি মামলাই এখন তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে আদালতে। কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক জাহেদুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, মামলা চলছে। চলবে। মাত্র নথিগুলো যোগাড় করা হলো। দেখা যাক কি হয়।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে সাজু পালিতের পরিবার জানান, তার মা মিনতি পালিতও বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। কিন্তু সেই মামলারও কোন খবর নেই। কারণ আসামিদের প্রত্যেকে ক্ষমতাসীন দলের কর্মী হওয়ায় এই ব্যাপারে কোন তদন্ত হবে না বলে তাদেরকে রাজনৈতিক মহল থেকে জানানো হয়েছে। শিশু আরমানের পরিবার জানায়, রেলওয়ের কাজ বাগাতে গিয়ে গোলাগুলিতে জড়িয়ে পড়ে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ। ঘটনার সময় যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর ও ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল আলম লিমনের অনুসারীদের মধ্যে দেখা দেয় উত্তেজনাও। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে কমপক্ষে ২০ রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়।
সেখানেই মাথায় গুলি লেগে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায় মাদরাসা ছাত্র দেলোয়ার হোসেন আরমান। এই সময় গুলিবিদ্ধ যুবলীগ কর্মী সাজু পালিতকে চমেক হাসপাতালে নেয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
শিশু আরমানের মা আছিয়া বেগম বলেন, শবেবরাতের রাতের হালুয়া রুটি খেতে চেয়েছিল আদরের সন্তান আরমান। বয়স ছিল ৭ বছর। কিন্তুচট্টগ্রাম রেলওয়ের সিআরবি কার্যালয়ে সরকারদলীয় যুবলীগ-ছাত্রলীগের গোলাগুলিতে অকালে প্রাণ দিতে হলো তাকে। পুত্র সন্তান হারানোর বেদনা এখনো ভুলতে পারছি না। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না বুকের ধন আর বেঁচে নেই। তাকে মরতে হয়েছে। শিশু আরমানের ফুফু রুমা আক্তার বলেন, মা আছিয়া বেগমের এখনো কান্না থামছে না। গত দুই বছরে এই ঘটনার কি তদন্ত হয়েছে পুলিশ তাদের কখনও জিজ্ঞেস করেনি। আসেনি বাড়িতেও।

No comments

Powered by Blogger.