জিম্মি উদ্ধারে কৌশল বদলাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

বারাক ওবামা
শত্রুপক্ষের হাতে জিম্মি থাকা নাগরিকদের উদ্ধারে কৌশল পরিবর্তন করছে যুক্তরাষ্ট্র। জিম্মি থাকা নাগরিকদের উদ্ধারের জন্য এখন থেকে আলাপ-আলোচনা করা যাবে। প্রয়োজনে মুক্তিপণ পরিশোধ করেও নাগরিকদের উদ্ধার করা যাবে। জিম্মি উদ্ধারের জন্য পারিবারিক ও বেসরকারি উদ্যোগকে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা প্রদান করা হবে। গতকাল বুধবার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এ সংক্রান্ত ঘোষণার পরপরই ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। মুক্তিপণ পরিশোধ করে জিম্মি উদ্ধারের পরিণামে জঙ্গি গোষ্ঠী আরও উৎসাহী হবে এবং বেশিসংখ্যক মার্কিনিদের জীবন হুমকির মুখে পড়বে বলে বলা হচ্ছে।
জিম্মি উদ্ধারের নামে শত্রুপক্ষের সঙ্গে কোনো আপস আলোচনা না করার অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন থেকে অটল ছিল। মুক্তিপণ প্রদান করে কোনো নাগরিককে উদ্ধার করা, এ সংক্রান্ত আলোচনা বা সমঝোতা করা যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ঘোষণা করেছেন, জিম্মি উদ্ধারের জন্য পরিবার বা স্বজনেরা মুক্তিপণ প্রদান করলেও তাঁদের বিরুদ্ধে এখন থেকে আইন লঙ্ঘনের কোনো অভিযোগ আনা হবে না। এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট ওবামা জিম্মি ছিলেন এবং এখন জিম্মি আছেন—এমন পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, জিম্মি থাকা লোকজনের পক্ষ থেকে তাঁকে নানা হতাশার কথা জানানো হয়েছে। জননিরাপত্তার পাশাপাশি জিম্মি থাকা লোকজন এবং তাদের স্বজন-পরিবারের বাস্তব অবস্থা নিয়ে প্রেসিডেন্ট তাঁর উৎকণ্ঠা ও সহানুভূতির কথা জানান।
জিম্মি সমস্যা মোকাবিলার পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গির ঘোষণা দিয়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে কোনো আপস আলোচনা না করার নীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে। তবে প্রথমবারের মতো প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সমঝোতা না করার মানে যোগাযোগহীনতা নয়। নাগরিকদের জিম্মি দশা থেকে উদ্ধারের জন্য এখন থেকে শত্রুপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা যাবে। শত্রুপক্ষের প্রতিনিধি বা মধ্যস্থতাকারীর সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি আলোচনার সমন্বয় করা হবে। জিম্মি উদ্ধারের জন্য এখন থেকে পারিবারিক এবং বেসরকারি উদ্যোগকে সরকার সহযোগিতা দেবে।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বক্তব্যে জানা যায়, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের পর শত্রুপক্ষের হাতে অন্তত ৮০ জন মার্কিন নাগরিককে জিম্মি হতে হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি ফিরে এলেও ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং আল-কায়েদার মতো জঙ্গিদের হাতে এখনো কয়েক ডজন মার্কিনি জিম্মি অবস্থায় আছে। গত এক বছরে আইএসের হাতে চারজন মার্কিন জিম্মির শিরশ্ছেদের ঘটনা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর পরপরই প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিদের ওপর বিমান হামলার নির্দেশ দেন।
ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসম্যান ডানকান হানটার বলেছেন, এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে জঙ্গি গোষ্ঠী আরও উৎসাহিত হবে। তারা আরও বেশি সংখ্যক আমেরিকানদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করবে। জিম্মি উদ্ধারের নামে বিপুল অঙ্কের মুক্তিপণ পরিশোধ করা হবে। মুক্তিপণের মাধ্যমে পাওয়া অর্থ দিয়ে জঙ্গিগোষ্ঠী আরও অস্ত্র সংগ্রহ করে আমেরিকার ওপর হামলা চালাবে।
গোপনে মুক্তিপণ পরিশোধ করে ইউরোপের দেশগুলো আগে থেকেই তাদের নাগরিকদের জিম্মি দশা থেকে উদ্ধার করে আসছে। আইন করে মুক্তিপণ দেওয়া নিষিদ্ধ করায় বহু মার্কিনির জীবন বিপন্ন হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ওবামা প্রশাসনের পরিবর্তিত মনোভাব ইতিবাচক বলে জিম্মি দশার শিকার পরিবারগুলো মনে করছে।

No comments

Powered by Blogger.