বেকায়দায় দুই মন্ত্রী by দীন ইসলাম

বেকায়দায় পড়েছেন সরকারের প্রভাবশালী দুই মন্ত্রী। মহানগর আওয়ামী লীগের আলোচিত এ দুই নেতার মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কা করছেন তাদের ঘনিষ্ঠজনরা। দুর্নীতির একটি মামলায় ১৩ বছরের সাজা থাকায় ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মন্ত্রিত্ব নিয়ে সাংবিধানিক জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ তিনি ২০০৮ সালে জ্ঞাত আয়ের বাইরে অবৈধভাবে ৬ কোটির বেশি টাকার সম্পদ অর্জনের মামলায় ১৩ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। ২০১০ সালের অক্টোবরে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ শুধুমাত্র আইনি প্রশ্নে ওই রায় বাতিল করেন। দুদক এর বিরুদ্ধে আপিল করে। ১৪ই জুন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে হাইকোর্টে আপিলের পুনঃশুনানির নির্দেশ দেন। ফলে মায়ার বিরুদ্ধে ঢাকার বিশেষ আদালতে দেয়া ১৩ বছরের সাজা বহাল রয়েছে। গতকাল এ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আদেশের কপি প্রকাশিত হয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, এ মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ জুডিশিয়াল মাইন্ড প্রয়োগ করেনি। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ১৪ই জুন থেকে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মন্ত্রিত্ব ও সংসদ সদস্য পদ খারিজ হয়ে গেছে। এ ছাড়া গত বছর নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনায় তার জামাতা র‌্যাবের কর্মকর্তা লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদের জড়িত থাকার ঘটনায় মায়া প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়েন। ওই সময় জামাতাকে রক্ষায় মন্ত্রী মায়ার দেন-দরবার সরকারের উচ্চ মহলকে ক্ষুব্ধ করে। এদিকে ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত চার শ’ কোটি টাকার পচা গম আমদানি নিয়ে বেশ সমস্যার মধ্যে রয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। খাদ্যমন্ত্রীর কর্মকাণ্ডের বিবরণ এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেবিলে রয়েছে। সাবেক এক মন্ত্রী খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গত দেড় বছরের অপকর্ম প্রধানমন্ত্রীকে রিপোর্ট আকারে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীও পচা গম সম্পর্কে পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে স্যাম্পলসহ অভিযোগ পেয়ে খাদ্য সচিব মুশফেকা ইকফাৎকে তিরস্কার করেছেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত গমের নমুনা সংগ্রহ করার নির্দেশ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এসব গম কেনায় কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। এত কিছুর পরও গম কেলেঙ্কারির পক্ষে সাফাই গেয়ে চলছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন মতবিনিময় সভায় ব্রাজিলের গম সম্পর্কে বক্তব্য দিচ্ছেন। বলছেন নানা কথা। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কাছে খবর আছে ব্রাজিলের পর ফ্রান্স থেকেও পচা গম কিনছেন অ্যাডভোকেট কামরুল। খাদ্যমন্ত্রীর এসব কর্মকাণ্ড গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এদিকে সমপ্রতি অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচননে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের কাছে বেশ আলোচিত নাম। এ দুই জনের মধ্যে মন্ত্রী মায়া আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই মেয়র প্রার্থীর সরাসরি বিরোধিতা করেন। এ কারণেও তার ওপর অসন্তুষ্ট খোদ প্রধানমন্ত্রী ও দল। ওই বিরোধিতার সময় খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল তার সঙ্গী হন এমনটা বলছেন কেউ কেউ। দলের মধ্যে আলোচনা রয়েছে, মায়া-কামরুলের বিরোধিতার কারণেই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগকে মরিয়া হতে হয়েছে। এসব কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের ওপর ভীষণ ক্ষুব্ধ রয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে ওয়ান-ইলেভেনের ভূমিকার কারণে দফায় দফায় পুরস্কার পেয়ে পূর্ণ মন্ত্রী হয়েছেন অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। ২০০৯ সালে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম এমপি প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়ন এবং নির্বাচিত হয়েই প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। দ্বিতীয় মেয়াদে পদোন্নতি পেয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ  মন্ত্রী হন। কিন্তু শুরু থেকেই গম কেনা, নিয়োগ ও বদলিসহ নানা পদক্ষেপে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতে শুরু করে। গেল দেড় বছরে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদ থেকে তিন অতিরিক্ত সচিবকে বদলি করিয়েছেন। তার সঙ্গে বনিবনা না হওয়ার কারণেই তাদের সরিয়ে দিয়েছেন এমন অভিযোগ করছেন কেউ কেউ। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ১২ই জানুয়ারি টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২৯ মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী এবং ২ উপমন্ত্রী শপথ নেন। পরে আরেক দফা ২৫শে ফেব্রুয়ারি এএইচ মাহমুদ আলী ও নজরুল ইসলাম যথাক্রমে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এরপর মন্ত্রিসভায় আর কোন পরিবর্তন বা অন্তর্ভুক্তি ঘটেনি। তবে হজ, ধর্ম ও সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব হারিয়ে জেলহাজতে তথা প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন আছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।

No comments

Powered by Blogger.