ঢাকা দক্ষিণ সিটির শাহজাহানপুর–শহীদবাগবাসী দুর্ভোগে নাকাল

শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নাজুক
হয়ে পড়েছে। গতকাল সকালে তোলা ছবি l প্রথম আলো
নাজুক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আর স্থায়ী-অস্থায়ী জলাবদ্ধতায় নাকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসির) ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভাঙাচোরা সড়ক, যানজট, সুপেয় পানির অভাব ও মশার উপদ্রব। গতকাল মঙ্গলবার এলাকায় গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এ ভোগান্তির কথা জানা যায়।
এ ওয়ার্ডের শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনি ও এর আশপাশের এলাকা মাত্র আধা ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে যায়। এ কলোনিতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। ভোটার রয়েছেন প্রায় ১০ হাজার।
গতকাল সকালে কলোনির অন্তত ১০ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রেলওয়ের কলোনিমুখী সবগুলো নর্দমা প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। রেলওয়ের পক্ষ থেকে তাঁদের বলা হয়েছে, সেখানে রেলওয়ের নর্দমাগুলো সিটি করপোরেশনের প্রধান লাইনের সঙ্গে যুক্ত।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের কাছে সুযোগ-সুবিধার কথা জানাতে গেলে তাঁরা বরাবরই বেকায়দায় পড়েন। সিটি করপোরেশন রেলওয়েকে দেখিয়ে দেয়। আর রেলওয়েকে বললে সিটি করপোরেশনকে দেখায়।
গত ২৮ এপ্রিল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের কাছ থেকে কলোনির বাসিন্দারা প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন সব ধরনের নাগরিক সেবা পাবেন। জানতে চাইলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর হামিদুল হক বলেন, ‘কলোনিবাসীর সুবিধা দেখব বলে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তা ভুলে যাইনি। রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শিগগির বসব। তাদের সহযোগিতা ছাড়া কাজ করতে সমস্যা হবে।’
যোগাযোগ করা হলে বিভাগীয় রেলওয়ে প্রকৌশলী (৩) হামিদুল হক বলেন, ‘সিটি করপোরেশন চাইলে আমরাও আলোচনায় আগ্রহী। দুটি পক্ষের সমন্বয় হলে সমস্যার ভালো সমাধান আশা করা যায়।’
শুধু কলোনির নয়, ওয়ার্ডের উত্তর শাহজাহানপুর, মোমেনবাগ, শহীদবাগ সব এলাকাতেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই খারাপ বলে এসব এলাকার বাসিন্দারা জানান। উত্তর শাহজাহানপুরের একটি ফার্নিচারের দোকানি আবদুল কুদ্দুস বলেন, বর্ষাকালে বৃষ্টি হওয়ার পর ঢাকা ওয়াসা পানি সরাতে ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে দেয়। খোলা ম্যানহোলে মানুষ পড়ার ঘটনা ঘটেছে এবারের বর্ষাতেও।
গত সোমবার বৃষ্টি হওয়ার পর খিলগাঁও ফ্লাইওভারের (উড়ালসড়ক) শাহজাহানপুর প্রান্তে পানি জমে। গতকাল সকালে উড়ালসড়কের নিচের রাস্তায় অফিসমুখী রিকশাজট দেখা যায়। ভাঙাচোরা রাস্তায় এমন রিকশাজট যাত্রী ও পথচারীদের এখন নিত্যভোগান্তি।
চৌধুরীপাড়া থেকে রিকশায় মতিঝিলে কর্মস্থলে যাতায়াত করেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা দিলরুবা আখতার। কিন্তু রাস্তা খোঁড়ার কারণে মৌচাক পথে আসতে পারেন না। দিলরুবা বললেন, ‘খিলগাঁও ফ্লাইওভারের পাশের রাস্তায় প্রতিদিন বাড়তি ভাড়ায় রিকশায় যাতায়াত করি। সময় মেলাতে এক ঘণ্টা হাতে রেখে বের হই।’
উড়ালসড়কের নিচের মতোই আমতলী, শহীদবাগ, মোমেনবাগ এলাকাতেও রয়েছে বেহাল রাস্তা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দেখা যায়, উত্তর শাহজাহানপুর শিল্পী হোটেলের গলিতে গাজীর বস্তির সামনে রাস্তাটি খুবই খারাপ, সোমবারের বৃষ্টির পানি তখনো জমে আছে।
এলাকায় তিনটি গভীর নলকূপ থাকলেও পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায় না। এলাকাবাসী মশার উপদ্রবে অস্থির। উত্তর শাহজাহানপুরে যে ঝিলটি রয়েছে, সেটি দখলে-দূষণে এখন মশার প্রধান প্রজননক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর হামিদুল হক বলেন, ‘সবই সত্য কথা। কাজ তো করছি, যা পারছি। অন্তত গত প্রায় দুমাসে ওয়ার্ডবাসীর জন্ম, মৃত্যু ও অন্যান্য সনদ তো ঠিকঠাকভাবে দিচ্ছি। এ ছাড়া দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র মহোদয় সব এলাকার রাস্তার বাতি লাগানোর যে পরিকল্পনা নিয়েছেন, সে বিষয়েও ওয়ার্ডে তদারকি করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘শপথ নিয়েছি তো বেশি দিন হয়নি। একে একে সবই দেখছি। মশা মারতে দুদফায় ক্র্যাশ প্রোগ্রামও নেওয়া হয়েছে।’

No comments

Powered by Blogger.