চাঁদাবাজির অভিযোগে আটক পুলিশকে ছেড়ে দিল পুলিশ

চট্টগ্রামে বিমা কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়ের সময় আটক শিল্প পুলিশের এক কর্মকর্তাকে ছেড়ে দিয়েছে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। ‘বিভাগীয় ব্যবস্থা’ নেওয়ার কথা বলে এই পুলিশ কর্মকর্তাকে শিল্প পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাঁর নাম নাম মাহবুবুর রহমান। তবে তাঁর সঙ্গে আটক হওয়া ফরিদুল আলমকে থানায় রাখা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে নগরের জুবিলী রোডের ডাচ বাংলা ব্যাংকের সামনে থেকে তাঁকে ও ফরিদুলকে আটক করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ।
চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মাহবুবুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্সের বিভাগীয় সমন্বয়ক জিয়াউল করিমকে জিম্মি করে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন। দুই বছর আগেও চাকরিতে অবহেলার অভিযোগে মাহবুবের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তি হয়েছিল।
জিয়াউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, আজ ভোররাতে কার্যালয় থেকে হালিশহরের বাসায় ফিরতে তিনি টাইগারপাস এলাকায় যান। এ সময় এসআই মাহবুব ও তাঁর সহযোগী ফরিদও হালিশহর যাওয়ার কথা বলে তাঁকে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশায় তোলেন। কিছুক্ষণ পর মাহবুব নিজেকে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ পরিচয় দিয়ে গাড়িটি চট্টগ্রাম রেলস্টেশন এলাকার দিকে নিয়ে যান। এ সময় তিনি জিয়াউলের কাছে মাদক আছে দাবি করে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। নইলে গ্রেপ্তারের ভয় দেখানো হয়। একপর্যায়ে নগরের স্টেশন রোডের একটি হোটেল নিয়ে যান রেজাউলকে। সেখানে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কাউকে কিছু না বলতে বলেন। প্রাণের ভয়ে তিনি কাউকে কিছু বলেননি বলে দাবি করেন।
সকাল ৯টার দিকে জিয়াউল এসআই মাহবুবকে নগরের জুবিলীরোড ডাচ বাংলা ব্যাংকের একটি শাখা থেকে টাকা তুলে দেওয়ার কথা বলেন। এরপর তাঁরা সেখানে যান। ব্যাংকে গিয়ে জিয়াউল কৌশলে ব্যাংকের এক কর্মকর্তার ফোন থেকে বিষয়টি কোতোয়ালি থানা-পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে মাহবুবকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে আজ সন্ধ্যায় শিল্প পুলিশের কাছে মাহবুবকে হস্তান্তর করা হয়। তার সহযোগী ফরিদকে থানায় রাখা হয়।
চাঁদা দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই মাহবুব সাংবাদিকদের কাছে কোনো কিছু বলতে রাজি হননি। তাঁর সহযোগী ফরিদ জানিয়েছেন, তিনি কক্সবাজার নুনাছড়া এলাকার বাসিন্দা । সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় বর্তমানে বেকার তিনি। নগরের বটতলী রেলস্টেশন সংলগ্ন বরিশাল কলোনিতে ইয়াবা সেবন করতে গিয়ে বুধবার রাতে তাঁর সঙ্গে এসআই মাহবুবের পরিচয় হয়।
ফরিদ আরও বলেন, আজ ভোরে টাইগারপাস এলাকায় জিয়াউল নামের এক ব্যক্তিকে গাড়িতে তুলে নেয় মাহবুব। পরে তাঁকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে হোটেল নিয়ে যান। সকালে তাঁরা দুজন হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লেও তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
এদিকে মামলা না নিয়ে আটক পুলিশ কর্মকর্তাকে হস্তান্তর করা প্রসঙ্গে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসীম উদ্দিন বলেন, এস আই মাহবুবকে শিল্প পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবেন। তার সহযোগী ফরিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিল্প পুলিশ চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক তোফায়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এসআই মাহবুবের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁকে বরখাস্ত কিংবা ঘটনার তদন্তে কোনো কমিটি গঠন করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে কমিটি গঠন করে তদন্ত শুরু করা হবে। দোষী প্রমাণিত হলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, ঘটনার সময় মাহবুব দায়িত্বরত ছিলেন না। তাঁর এক ভগ্নিপতির বাসায় দাওয়াত খেয়ে ফিরছিলেন। এ জন্য পুরো ঘটনার দায়ভার শিল্প পুলিশের ওপর বর্তায় না বলেও মন্তব্য করেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি জানান, দুই বছর আগে চাকরিতে অবহেলার অভিযোগে মাহবুবের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।

No comments

Powered by Blogger.