যে কারণে হিমশিম খাচ্ছে আইসিসি -ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের বিশ্লেষণ

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেতাদের বিচারের মুখোমুখি করার ক্ষেত্রে নাজুক আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা নিয়ে আগে থেকেই বিতর্ক আছে। সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরকে দক্ষিণ আফ্রিকা না ছাড়তে স্থানীয় একটি আদালতের আদেশ সেই বিতর্ককেই নতুন করে উসকে দিয়েছে।
পশ্চিম সুদানের দারফুর সংঘাতে মদদ দেওয়ার অভিযোগে সাত বছর আগে বশিরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। সেই পরোয়ানার জের ধরেই বশিরের দক্ষিণ আফ্রিকা ত্যাগের ওপর ওই অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা। তিনি আফ্রিকান ইউনিয়নের (এইউ) যে সম্মেলনে অংশ নিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছিলেন, এ ঘটনায় সেই সম্মেলনও সংকটে পড়েছে। এতে বিব্রত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাও। এর চেয়েও বড় কথা, রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে হেগভিত্তিক আদালত আইসিসিকে যে হিমশিম খেতে হয়, তা আবার স্পষ্ট হয়েছে।
রুয়ান্ডায় গণহত্যা ও বলকান এলাকায় জাতিগত সংঘাতের প্রেক্ষাপটে সৃষ্টি হয় আইসিসি। আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগের মাধ্যমে অপরাধী সরকারগুলোকে বিচারের মুখোমুখি করার সবচেয়ে বড় প্রচেষ্টা এটি। তবে এই ১৩ বছরে আইসিসি তার লক্ষ্য বাস্তবায়নে নানা সংকটে পড়েছে। অংশত এর কারণ হচ্ছে, আইসিসির সদস্যরাষ্ট্র-নির্ভরতা। এসব সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলো খুব সামান্যই সহায়তা করে আইসিসিকে।
আইসিসির দুটি যুগান্তকারী মামলা (সুদান ও কেনিয়ার নেতাদের বিরুদ্ধে) এমন সংকটে পড়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের মতো বিশ্বশক্তিগুলো এখন পর্যন্ত আইসিসিতে নাম লেখাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। আফ্রিকার দেশগুলোও আইসিসিকে নব্য ঔপনিবেশিক হাতিয়ার হিসেবে দেখে থাকে।
বশিরের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকা না ছাড়ার আদেশটি অস্থায়ী। প্রিটোরিয়ার উচ্চ আদালতের বিচারক একটি মানবাধিকার গ্রুপের আবেদনে সাড়া দিয়ে ওই আদেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি রুলিং না দেওয়া পর্যন্ত ওই আদেশ বলবৎ থাকবে।
বশির এর আগে দেশের বাইরে গিয়েছেন। সুদানের এই প্রেসিডেন্ট মাঝেমধ্যেই ওই অঞ্চলে নিজের মিত্র দেশগুলোতে সফরে যান। এর মধ্যে রয়েছে মিসর, নাইজেরিয়া, লিবিয়া, চাদ ও কাতার। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, আইসিসির পদক্ষেপের কারণে বশিরের সফর সীমিত হয়েছে। তিনি সফরকালে বেশ কয়েকবার সাময়িক গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মুখোমুখি হয়েছেন। এরপর তাঁর উড়োজাহাজকে দ্রুততার সঙ্গে গন্তব্যপথ বদলাতে হয়েছে। এমনকি সংক্ষিপ্ত নোটিশে তাঁকে দেশ ছাড়তেও হয়েছে।
আইসিসির অস্তিত্ব প্রশ্নে এ ঘটনা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
একটি অপ্রাপ্তবয়স্ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইসিসি কতটা সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হচ্ছে, এ ঘটনা আরেকবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। কাউকে গ্রেপ্তার করা প্রশ্নে আইসিসি ততটাই শক্তিশালী, যতটা তার সদস্যরাষ্ট্রগুলো এতে ভূমিকা রাখার ইচ্ছা দেখায়। কারণ, আইসিসির নিজস্ব পুলিশ বাহিনী নেই।
আইসিসির সীমাবদ্ধ বোঝা গেছে গত এক বছরে দুটি যুগান্তকারী মামলা দেখে। গত ডিসেম্বরে আইসিসি তথ্য-প্রমাণের অভাবে কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ নিজ উদ্যোগেই প্রত্যাহার করে নেয়। এ ঘটনাকে আন্তর্জাতিক বিচারের ক্ষেত্রে একটি ‘অন্ধকার দিবস’ আখ্যা দিয়েছিলেন আইসিসির কৌঁসুলি ফাতৌ বেনসৌদা। তিনিই কয়েক দিন পর দারফুর সংঘাতের তদন্ত স্থগিতের ঘোষণা দেন।
সামনে আরেকটি পরীক্ষার মুখোমুখি আইসিসি। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করা। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি আইসিসিতে যোগ দিয়েছে। ফলে ইসরায়েলের পাশাপাশি গাজাভিত্তিক সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরুর পথ প্রশস্ত হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.