মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন খালেদা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মিথ্যাচার করেছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। আজ মঙ্গলবার সংসদে ৩০০ বিধিতে দেওয়া এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। খবর বাসস ও ইউএনবির।
নয়াদিল্লিভিত্তিক রোববারের পত্রিকা দ্য সানডে গার্ডিয়ানের এক সাংবাদিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশ সফরকালে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তিনি যাতে বৈঠক করতে না পারেন সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছিল। দ্য সানডে গার্ডিয়ানের এক সাংবাদিক সৌরভ সান্নালকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর বৈঠক, ২০১৩ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখ্যার্জির সঙ্গে দেখা না করা, জামায়াতে ইসলামী, নির্বাচন নিয়ে খালেদা জিয়া খোলামেলা কথা বলেন।
৬ ও ৭ জুন দুদিনের ঢাকা সফরে আসা মোদির সঙ্গে ৭ জুন খালেদা জিয়ার বৈঠক হয়।
আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘গত ১৩ জুন ভারতের দ্য সানডে গার্ডিয়ান পত্রিকায় খালেদা জিয়ার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। এই সাক্ষাৎকারে তিনি (খালেদা) অভিযোগ করেছেন, আমি নাকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় তার সঙ্গে সাক্ষাতের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছিলাম। তার এই দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যের আমি নিন্দা জানাই।’
মন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া বরাবরই ‘নাৎসি’ কায়দায় মিথ্যাচারের একনিষ্ঠ অনুসারী। তিনি মনে করেন একটি মিথ্যাকে বারবার বললেই সত্য হয়ে যায়।
দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত অপর এক প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘গত ৫ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে মোদির সাক্ষাৎ হবে কি না? উত্তরে আমি বলেছিলাম, এ প্রশ্নের আলোচনার সুযোগ এখানে আছে বলে মনে হয় না। আমার বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে পরদিন দৈনিক ইত্তেফাকে প্রতিবেদন আকারে ছাপা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।’
আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, এরপর ৬ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে ইত্তেফাকের কূটনৈতিক প্রতিবেদককে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তখন তিনি জবাবে বলেন, ‘আমি এটা করিনি, আমার বিএনপি বিটের এক কলিগ করেছেন।’ তিনি বলেন, এরপর ৮ জুন মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে মন্ত্রিসভা। ৯ জুন ওই প্রতিবেদকের আরও একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হচ্ছে—এ কথা বলায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে।
মন্ত্রী সংসদে বলেন, মূলত মন্ত্রিসভার বৈঠকে মোদির সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের বিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নজরে এলে এর প্রতিবাদ পাঠানো হয়। প্রতিবাদটিও আংশিকভাবে ছাপানো হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভারতের একটি পত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কবিষয়ক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, ২০১৩ সালের বিজয় দিবসের আগে ১৫ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া তার বাণীতে বলেছিলেন, ‘১৯৭১ সালে দেশ শত্রু মুক্ত হলেও, অপশক্তির নীল নকশা বাস্তবায়নে শত্রুদের চক্রান্ত আজও বিদ্যমান। আধিপত্যবাদী শক্তি আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব শক্তিকে গ্রাস করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত।’ এ কথা বলার পরই মন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘এ আধিপত্যবাদী শক্তির নাম কী? আর কথিত শত্রু কারা? হায় খালেদা জিয়া, হায় বিএনপি, আর কত মিথ্যাচার করবেন, লজ্জা লজ্জা! ’

No comments

Powered by Blogger.