উচ্চশিক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান- শিক্ষার মান অবনতি কি চলতেই থাকবে?

যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক সাপ্তাহিক টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচটিই) শিক্ষার মান, গবেষণাসহ বিভিন্ন মানদণ্ডে ২০১৫ সালে এশিয়ার যে ১০০টি মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে, তার কোথাও বাংলাদেশের নাম নেই। এ তালিকায় জাপান ও চীনের প্রাধান্য রয়েছে। সেই সঙ্গে ভারতের নয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ও জায়গা করে নিতে পেরেছে। এই তথ্য আমাদের উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে যে বার্তাটি দেয়, সেটি খুবই বেদনাদায়ক।
সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ-পঠনের মান, গবেষণা, আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানক্রম নির্ধারণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে কেবল টিএইচটিইর জরিপেই নয়, সাংহাইভিত্তিক একাডেমিক র্যাংকিং অব ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি (এআরডব্লিউইউ) বিশ্বের ১ হাজার ২০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মান যাচাই করে যে ৫০০টি মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা দিয়েছে, তাতেও বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ঠাঁই পায়নি। অন্যদিকে, ২০১৩ সালে কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাংকিংয়ে ৩০০ এশীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঠাঁই পেয়েছে। এই তালিকায় ভারতের ১১টি ও পাকিস্তানের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আর শীর্ষ ১০০-এর মধ্যে চীনেরই আছে ২১টি বিশ্ববিদ্যালয়।
দেশে সাধারণ, বিশেষায়িত কিংবা সরকারি-বেসরকারি মিলে শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় কারও না থাকা কেবল দুঃখজনক নয়, লজ্জাজনকও। আমরা অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে নিয়ে যেতে চাই, জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করার আওয়াজ তুলি, কিন্তু সেই জনসম্পদ তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি ক্রমাগত অবহেলা করে আসছি। এভাবে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন ও অগ্রগতি সম্ভব কি? যেসব দেশ অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগতভাবে প্রভূত উন্নতি করেছে, তারা শিক্ষার মানোন্নয়নের প্রতি সবিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। এশিয়ায় চীন ও জাপান তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে পরিচিত ছিল। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) বিশ্বসভায় স্থান করে নিয়েছিল। এখন এসব প্রতিষ্ঠান সেই মান ধরে রাখতে পারছে না কেন?
আশা করি, কর্তৃপক্ষ বিশ্ব সংস্থাগুলোর এ ধরেনর জরিপকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অপপ্রচার বলে উড়িয়ে না দিয়ে, শিক্ষার মানোন্নয়নের প্রতি যত্নশীল হবে।

No comments

Powered by Blogger.