নতুন ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপক পরীক্ষা চীনের

চীনা টেলিভিশনে প্রচারিত ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণযান উ-১৪-এর মডেল
পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম নতুন ধরনের ‘হাইপারসনিক’ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ যানের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে চীন। শব্দের চেয়েও ১০ গুণ বেশি গতিতে চলতে সক্ষম এই মারণাস্ত্র। মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম এটি।
চীনের এ পদক্ষেপকে যুক্তরাষ্ট্র বর্ণনা করেছে ‘চরম রণকৌশল’ হিসেবে। দক্ষিণ চীন সাগরের পরিস্থিতি নিয়ে বাগ্যুদ্ধ ও হ্যাকিংয়ের ঘটনা নিয়ে ওয়াশিংটন-বেইজিং নতুন বিরোধের মধ্যে এই পরীক্ষা চালাল চীন। খবর পিটিআই ও রাশিয়া টুডের।
চীনের উ-১৪ নামের ওই ‘হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল’-এর সাম্প্রতিকতম পরীক্ষার খবর প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তারা। তাঁদের ভাষ্যমতে, চীনের পশ্চিমাঞ্চলে ৭ জুন ওই পরীক্ষা চালানো হয়।
চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও এই পরীক্ষা নিয়ে কোনো রাখঢাক করেনি। মার্কিন সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট দি ওয়াশিংটন ফ্রিবিকন-এর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আমাদের নিজস্ব ভূখণ্ডে এই নির্ধারিত বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও পরীক্ষাগুলো স্বাভাবিক ঘটনা। এই পরীক্ষাগুলো কোনো দেশকে লক্ষ্যবস্তু করে নয়।’
ওয়াশিংটন ফ্রিবিকনই চীনের এই মারণাস্ত্র উৎক্ষেপক পরীক্ষার বিষয়ে সর্বপ্রথম খবর প্রকাশ করেছিল। প্রথম পরীক্ষাটি চালানো হয়েছিল ২০১৪ সালের ৯ জানুয়ারি। এরপর একই বছরে আরও দুবার পরীক্ষা চালানো হয়েছিল।
এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পর চীনই হলো দ্বিতীয় দেশ, যারা মাক ১০-এর চেয়ে বেশি গতির এবং পরমাণু যুদ্ধাস্ত্র বহনে সক্ষম ‘হাইপারসনিক ডেলিভারি ভেহিকল’ তৈরি ও সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ভারতের তৈরি হাইপারসনিক ভেহিকলগুলো দ্রুততার সঙ্গে অস্ত্র নিক্ষেপের জন্য তৈরি।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মূল্যায়ন অনুযায়ী উ-১৪ পরমাণু অস্ত্রবাহী এমন একটি যান, যা ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র ঠেকাতে তৈরি মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাগুলোকেও পরাস্ত করতে সক্ষম। এ ছাড়া চীন এমন একটি হাইপারসনিক অস্ত্র বানাচ্ছে, যাতে উচ্চ প্রযুক্তির ‘স্ক্র্যাম জেট ইঞ্জিন’ লাগানো থাকবে। পাশাপাশি রাশিয়াও বিদেশি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম নতুন ধরনের হাইপারসনিক অস্ত্র বানানোর কথা নিশ্চিত করেছে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে যে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা রয়েছে, সেগুলো উ-১৪ বা এ-জাতীয় কৌশলী মারণাস্ত্র প্রতিরোধ করতে সক্ষম নয়। অবশ্য, মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন বলেছে, এ ধরনের উচ্চ গতির ক্ষেপণাস্ত্রের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে তাদের হাতে একটিমাত্র অস্ত্র আছে। সেটি হলো মার্কিন সেনাবাহিনীর ‘হাই অ্যালটিটিউড এরিয়া ডিফেন্স’ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার একটি সম্প্রসারিত পাল্লার সংস্করণ।
মারণাস্ত্রের উন্নয়নে চীনের এই অগ্রগতিতে মার্কিন কংগ্রেসও উদ্বিগ্ন। তাদের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক হাইপারসনিক অস্ত্র প্রতিযোগিতায় পেছনে পড়ে যাচ্ছে। কংগ্রেসের চীনবিষয়ক একটি কমিশন গত বছর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকলগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থাগুলোকে অধিকতর কম কার্যকর এবং এমনকি সেকেলে বানিয়ে ফেলতে পারে। মার্কিন প্রতিরক্ষা বাজেট বারবার কমানোর ফলেই যুক্তরাষ্ট্র চীন বা প্রতিযোগী অন্য দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে।

No comments

Powered by Blogger.