সরকারের আর্থিক অস্বচ্ছতা উদ্বেগজনক -যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন

রাজস্ব খাতে স্বচ্ছতার ন্যূনতম শর্ত পূরণেও ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ—মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে নিশ্চয়ই যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বার্থের প্রতিফলন থাকবে। কিন্তু রাজস্ব আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা সম্পর্কে যে মূল্যায়ন তারা করেছে, তা আমাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলে যায়। এ কারণেই এটা উদ্বেগের বিষয়।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে রাজস্ব খাতে ন্যূনতম স্বচ্ছতার শর্ত পূরণে ব্যর্থ ৬০টি দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। দক্ষিণ এশিয়ার অপর দুটি দেশ ভারত ও শ্রীলঙ্কা অন্তত শর্ত পূরণ করতে পেরেছে। রাজস্ব খাতে স্বচ্ছতা নির্ণয়ের এই সূচকের ওপর বাজেট বরাদ্দ ও তার ব্যয়, রাষ্ট্রীয় কোষাগারের আয়, সরকারের বিভিন্ন বিভাগ চালানো এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে আর্থিক জবাবদিহির বিষয়টি নির্ভরশীল। এ ছাড়া শক্তিশালী রাজস্ব খাতের বিকাশ অর্থনীতির স্বাবলম্বী হওয়ারও শর্ত। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এসব ক্ষেত্রে সার্বিক অনিয়মের প্রতিফলন ঘটছে রাজস্ব আয়-ব্যয়ের হিসাবের অস্বচ্ছতায়।
সরকারি আয়-ব্যয়ের হিসাব সময়মতো না হওয়াকে আর্থিক অস্বচ্ছতার অন্যতম কারণ বলে বর্ণনা করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ওই প্রতিবেদনে। এই দায়িত্বে থাকা সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সময়মতো নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করতে পারে না। এটা তাদের নিরীক্ষা কাজের দুর্বলতারই পরিচয় বহন করে। যদি সরকারের বিভিন্ন বিভাগ তাদের বাজেট বরাদ্দ নিয়ম সংগতভাবে খরচ না করে, তার হিসাবে যদি নয়–ছয় থাকে, তাহলে হিসাব নিরীক্ষকের পক্ষে যথাযথ হিসাব উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। আর্থিক খাতের এই অস্বচ্ছতা দুর্নীতির সহযোগী।
শক্তিশালী অর্থনীতির দেশে রাজস্ব আয় ও তার বিলিবণ্টনের সুচারু পরিকল্পনাই বাজেটের মাধ্যমে হাজির করা হয়। মধ্যম আয়ের দেশ হতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়কে হিসাব নিরীক্ষণ ও দুর্নীতির নিয়ন্ত্রণকে এক সূত্রে গাঁথার চেষ্টা করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.